বান্দরবানের আলীকদম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. শহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে মুমূর্ষু রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে আলীকদম থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত অনিয়ন্ত্রিতভাবে গাড়ি চালানো এবং সরকারি অ্যাম্বুলেন্সকে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।
গত শনিবার (২২ জুন) শ্বাসকষ্ট নিয়ে আলীকদম হাসপাতালে ভর্তি হন স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মোতালেব। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্সের চালক থাকা সত্বেও পরদিন রবিবার রোগী ও তার স্বজনদের নিয়ে অদক্ষ হাতে অনিয়ন্ত্রিতভাবে চট্টগ্রামের উদ্দেশে অ্যাম্বুলেন্স চালাতে শুরু করেন চিকিৎসক শহিদুর। প্রতিবাদে রোগীকে হাসপাতালে না নিয়ে স্বজনরা চট্টগ্রামের পটিয়াতে নেমে যান।
রোগীর মেয়ে রেহেনা বেগমের অভিযোগ, বাবার শরীর বেশি খারাপ হয়ে গেলে রবিবার দুপুর ২ টার দিকে আলীকদম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু চালক থাকা সত্বেও, অ্যাম্বুলেন্স চালাতে শুরু করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শহীদুর রহমান নিজেই। যাওয়ার পথে অনেকবার গাড়ি বন্ধ হয়ে গেলেও তিনি পাশের সিটে বসে থাকা চালককে স্টিয়ারিং ধরতে দেন নি। সন্ধ্যা ৬ টার দিকে শান্তির হাট এলাকায় পৌঁছলে তার অনিয়ন্ত্রিত গাড়ি চালানো এবং বাবার কষ্টের কথা ভেবে সেখানে নেমে অন্য এক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন তারা।
রোগীর আরেক স্বজন পারভেজ ঢাকা ট্রিবিউনকে জানান, ডা. শহিদুর রহমান অদক্ষ হাতে অ্যাম্বুলেন্স চালাতে শুরু করলে একাধিকবার গাড়ির স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তার খানাখন্দ ও স্পিড ব্রেকার কোনো কিছুরই পরোয়া করেননি তিনি। দুর্ঘটনার আশংকায় বারবার চালককে গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে বসতে দেওয়ার অনুরোধ জানালে অভিযুক্ত চিকিৎসক তাদেরকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করে চুপ থাকতে বলেন। মুমূর্ষু রোগীকে নিয়ে চিকিৎসকের এমন অপেশাদার আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত চিকিৎসক শহিদুর রহমান ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, অ্যাম্বুলেন্স আমি চালাব, নাকি অন্য কেউ চালাবে সেটি আমি বুঝবো। তিনি সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের চালক কি না জানতে চাইলে উত্তর দেন, “আমার ইচ্ছে হয়েছে, আমি অ্যাম্বুলেন্স চালিয়েছি, চালক হতে যাব কেন? আমি চিকিৎসক, একজন চিকিৎসকরে সঙ্গে এভাবে কথা বলতে পারেন না।” পাল্টা প্রশ্ন করে একজন চিকিৎসক মুমূর্ষু রোগীর সঙ্গে এমন আচরণ করতে পারেন কি না জানতে চাইলে উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেন। পরে অনেকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বান্দরবানের সিভিল সার্জন ড. অংশৈ প্রু এ অভিযোগের বিষয়ে বলেন, আমি বর্তমানে ঢাকায় আছি। বিষয়টি শুনে তাকে সাবধান করে দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এমন কিছু করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিযুক্ত চিকিৎসক শহিদুর রহমানের কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই।তিনি প্রায় ব্যক্তিগত কাজে অ্যাম্বুলেন্সটি ব্যবহার করেন।