আজ রবিবার। ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ। ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ। ১০ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি। এখন সময় রাত ৪:৫৫

শিবগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রারের উপর হামলা, তবু স্বপদে বহাল ইউএনও

শিবগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রারের উপর হামলা, তবু স্বপদে বহাল ইউএনও
নিউজ টি শেয়ার করুন..

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার মোঃ ইউসুফ আলী’র উপর নৃশংসভাবে হামলা হয়েছে। এরপর নৃশংস এই ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এছাড়া এই ঘটনা নিয়ে জাতীয় পত্রিকা ও টিভি নিউজে পরিবেশিত খবরের মধ্যেও ভীষণ তারতম্য দেখা গিয়েছে।
.জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার রেজিস্ট্রি অফিসের মৃত পিয়নের এক স্ত্রী পেনশন ভাতা গ্রহণ করে আসছিলো। কিছুদিন পর মৃত পিয়নের ২য় স্ত্রী পরিচয় দিয়ে নতুন একজন পেনশন ভাতা দাবি করে। ফলে সাব-রেজিস্ট্রার পিয়নের ২য় স্ত্রী কে বিয়ের কাবিননামা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলে। পেনশন ভাতা প্রাপ্তির অনুমোদনে কালক্ষেপন হওয়ায় গত ১০ জানুয়ারি, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ বিকেলে শিবগঞ্জ উপজেলার নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হায়াত উপজেলার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ও স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান কে নিয়ে রেজিস্ট্রি অফিসে এসে আবেদন অনুমোদনের জন্য সাব-রেজিস্ট্রারকে চাপ প্রয়োগ করে। এ সময় ইউএনও অকথ্য ভাষায় কথাবার্তা বলে ও সাব-রেজিস্ট্রার কে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। পরে ইউএনও তাঁকে (সাব-রেজিষ্টারকে) দেখে নেয়ার হুমকিও দেয়। ইউএনও অফিস থেকে চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর হকিস্টিক ও দেশীয় অস্ত্রসহ একদল দুর্বৃত্ত সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের সিসি ক্যামেরা ও এজলাস কক্ষে ভাঙচুর চালায়। তারা সাব-রেজিস্ট্রার কে ধারালো বস্তু দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে গুরুতর আহত করে। ঘটনার পর সাব-রেজিস্ট্রার বর্তমানে ঢাকায় চিকিৎসাধীন আছে। তাঁর অবস্থা এখনও আশংকাজনক।
.নৃশংস এই ঘটনার পরের দিন বাংলাদেশ রেজিস্ট্রেশন সার্ভিস এসোসিয়েশন ইউএনও এর এখতিয়ার বহির্ভূত হস্তক্ষেপ ও নৃশংস হামলায় দুর্বৃত্তকারীদের শাস্তির দাবিতে কর্মবিরতির ডাক দেয়। কর্মবিরতির ডাকে কিছুক্ষনের মধ্যেই সারা দেশের নিবন্ধন অধিদপ্তরের অধীনস্ত সকল রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল রেজিস্ট্রি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সেদিন রাতে সেবা গ্রহীতাদের দুর্ভোগ বিবেচনা করে এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে বাংলাদেশ রেজিস্ট্রেশন সার্ভিস এসোসিয়েশন কর্মবিরতি স্থগিত করে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ রেজিস্ট্রেশন সার্ভিস এসোসিয়েশন এর নেতৃবৃন্দ আইনমন্ত্রী জনাব আনিসুল হক বরাবর ৪ দফা দাবি পেশ করে। আইনমন্ত্রী দেশের সকল রেজিস্ট্রি অফিস ও রেকর্ডরুমের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ২ জন করে সশস্ত্র আনসার সদস্য নিয়োগ ও সিসি ক্যামেরার আওতাভূক্ত করা সহ সকল দাবি পূরণের আশ্বাস দেয়।
নৃশংস এই ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি এজাহার দায়ের করা হয়। এজাহারে ঘটনার ইন্ধনদাতা ইউএনও এর নাম রাখার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু অদৃশ্য কারনে সেটা সম্ভব হয়নি। ফলে একজন সরকারী কর্মকর্তা কি আইনের ঊর্ধ্বে এমন প্রশ্ন উঠে। অন্যদিকে প্রকৃত ঘটনা কে ভিন্ন দিকে মোড় দিতে ৩ জন নিরপরাধ দলিল লেখক কে গ্রেফতার করা হয়। লোমহর্ষক এ ঘটনা আড়াল করতে কিছু অনলাইন পোর্টাল ও নিউজে ভুল তথ্য দিয়ে খবর প্রকাশ করানো হয়। সরকারী অফিসে হামলায় সেবা গ্রহীতারা জড়িত এমন মিথ্যা খবর প্রকাশ করা হয়। তবে বেশিরভাগ পত্রিকা ও মিডিয়াতে সত্য ঘটনা প্রকাশিত হয়। পত্রিকা ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের মধ্যে এরূপ তারতম্য কেন তা এখনো রহস্যজনক।
.নারকীয় এই ঘটনার একাধিক অডিও এবং ভিডিও ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়। ভাইরাল হওয়া অডিও রেকর্ডটিতে যে তাঁর কন্ঠ সেটা ইউএনও অস্বীকার করে। ইউএনও বলছে, ভাইরাল হওয়া অডিও টি এডিটেড। কিন্তু অডিওতে শুনতে পাওয়া একাধিক লোকের কণ্ঠ এডিট করা আদৌ সম্ভব কিনা এরূপ প্রশ্নের উত্তরে ইউএনও উপর্যুক্ত কোন জবাব দিতে পারে নি।
.অতঃপর রেজিস্ট্রেশন অধিদপ্তরের একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কর্তৃপক্ষকে প্রতিবেদন দেয়। অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসনও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। অথচ তদন্ত চলমান থাকাকালীন শিবগঞ্জ উপজেলার ইউএনও স্বপদে বহাল থাকে। ইতোমধ্যে ইউএনও এর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠে। জানা যায়, ইউএনও থানা পুলিশ, স্হানীয় নেতৃবৃন্দ কে সঙ্গে নিয়ে তদন্ত কে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। জনশ্রুতি রয়েছে, ইউএনও এর প্রত্যক্ষ মদদ ও ইন্ধনে শিবগঞ্জ উপজেলায় তার পক্ষে মানববন্ধন করা হয়। নারকীয় এ ঘটনার সহিত ইউএনও এর কোন সংশ্লিষ্টতা না থাকলে মানববন্ধন কেন হয়েছে এই নিয়েও জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়।

নারকীয় এই ঘটনার সাথে ইউএনও এর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ থাকার পরও তদন্ত চলাকালীন ইউএনও কেনো স্বপদে বহাল ছিলো এই নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশাসনের ভাবমূর্তি রক্ষায় ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে দ্রুত শিবগঞ্জ উপজেলার ইউএনও কে ওএসডি করার দাবি উঠেছে। সরকারী দপ্তরে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য ইউএনওকে ওএসডি করে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন ও বিচার বিভাগীয় তদন্ত পরিচালনা করার দাবি উঠেছে।


নিউজ টি শেয়ার করুন..

সর্বশেষ খবর

আরো খবর