আজ শনিবার। ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ। ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ। ১৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি। এখন সময় বিকাল ৩:২৯

বিনা টেন্ডারে ৫০ লাখ টাকার ব্রীজ, টাকা উত্তোলন হলেও কাজ শুরু হয়নি

বিনা টেন্ডারে ৫০ লাখ টাকার ব্রীজ, টাকা উত্তোলন হলেও কাজ শুরু হয়নি
নিউজ টি শেয়ার করুন..

প্রখ্যাত লেখক মরহুম হুমায়ুন আহমেদের জন্মভূমি কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ী ইউনিয়নের তাঁতীপাড়া নামক স্থানে ব্রীজের অভাবে উপজেলার ৮টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ প্রতিদিন কষ্ট করে যাতায়াত করছে। লেখক মরহুম হুমায়ুন আহমেদের পিতার স্মৃতি বিজড়িত কুতুবপুর গ্রামে শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের কয়েকশত শিক্ষার্থী প্রতিদিন বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় খাল পারাপার হচ্ছে। একটি পুরাতন কালভার্টের স্থলে নতুন কালভার্টের নির্মাণের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য গত অর্থ বছরে ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ আনলেও এখনো কাজ শুরু হয়নি। টাকা উত্তোলন করা হয়ে গেছে। এখন ওই ব্রিজ নির্মাণ নিয়ে এলাকাবাসী সংশয়ে রয়েছেন।

উপজেলা প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানান গেছে, রোয়াইলবাড়ী ইউনিয়নের তাঁতীপাড়া নামক স্থানে ব্রীজ নির্মাণের জন্য এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য অসিম কুমার উকিল মন্ত্রণালয় থেকে ৫০ লক্ষ টাকার বরাদ্দ আনেন। এটি গত অর্থবছরের মধ্যেই কাজটি সম্পন্ন করার কথা ছিল। গত ৩০শে জুন চলে যাওয়ায় বরাদ্দকৃত সমুদয় অর্থ উত্তোণ করে উপজেলার কর্তাব্যক্তিদের ফান্ডে রাখা হয়েছে। এরপর কোনো পত্রিকায় দরপত্র বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে একটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য ৫টি কোটেশন তৈরি করে আরএফকিউ পদ্ধতিতে ৫টি প্যাকেজের মাধ্যমে একজন বিএনপির ঠিকাদার সহ ৫জন ঠিকাদারকে কাজ দেয়া হয়।

এরই জের ধরে সম্প্রতি কেন্দুয়া উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক আপেল মাহমুদ কেন্দুয়া এলজিইডি এর উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারের দপ্তরে গিয়ে তাঁতীপাড়া ব্রীজের টেন্ডার প্রক্রিয়া এবং কাজের বিষয়ে জানতে চাওয়ার প্রশ্নে উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার বিব্রত বোধ করেন যা আপেল মাহমুদের ফেইসবুকে লাইভে দেয়া ভিডিওটি ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়ে গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ময়মনসিংহের একজন প্রকৌশলী জানান, একটি ব্রীজ বা কালভার্টের কাজ বাস্তবায়নে মূলত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। সাব-স্টাকচার (মাটির নীচের কাজ যা মূলত ব্রীজের পাইলিং এর কাজকে বোঝানো হয়) এবং সুপার-স্টাকচার (চোখে দেখা যাওয়া কাজ)।

ব্রীজ বা কালভার্টের সংযোগ সড়ক বা এপ্রোচ রোড কে অনেক সময় আলাদা কাজ হিসেবে দেখানো হয়। সারসংক্ষেপ হলো- ১টি ব্রীজের বা কালভার্টের কাজকে সর্বোচ্চ দুই ভাগে ভাগ করা উচিত।
ব্রীজের স্টাকচারাল কাজ (মাটির নীচের এবং উপরের কাজ) – উক্ত কাজটি একজন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের করাই উত্তম। ব্রীজ বা কালভার্টের দুই পাশের সংযোগ সড়ক বা এপ্রোচ রোড সহ সকল প্রকার রক্ষাপ্রদ যেমন- প্যালাসাইডিং এর কাজ এবং ড্রেনের কাজ। ঢাকার প্রকিউরমেন্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ার সর্বোত্তম পদ্ধতি হচ্ছে ই-জিপি যা বঙ্গবন্ধু কণ্যা শেখ হাসিনা ২০১৩ সাল হতে সারা দেশব্যাপী চালু করেন। এর ফলে টেন্ডার সংক্রান্ত পেশীশক্তির ব্যবহার বন্ধ হয়েছে। ই-জিপিতে এলটিএম বা ওটিএম পদ্ধতিতে ক্রয় করাকে সরকার উৎসাহিত করেন। এমতাবস্থায় একটি ৫০ লক্ষ টাকার কালভার্টকে ভেঙে ৫টি প্যাকেজে আরএফকিউ করা কোন ভাবেই যুক্তিসঙ্গত নয়।

বিষয়টি নিয়ে এলজিইজি ময়মনসিংহ বিভাগীয় অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী অণিল চন্দ্র বর্মনের সাথে যোগযোগ করলে তিনি জানান, কেন্দুয়া উপজেলা প্রকৌশলী তো আমার ফোনও ধরেন না। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জানান, চলতি বছরে ২৮ মে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে উপজেলা উন্নয়ন সহায়তা খাত থেকে কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদের অনুকূলে ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ৩০ জুনের পূর্বেই টাকা উত্তোলন করে উপজেলা পরিষদে রাখা হয়েছে । পরবর্তীতে ৫০ লক্ষ টাকার কালভার্ট বাস্তবায়নে ৫টি প্যাকেজে আরএফকিউ পদ্ধতিতে ৫জন ঠিকাদারকে কাজ দেয়া হয়েছে। বর্ষার জন্যে কাজ শুরু হয়নি। শুকনো হলেই কাজ শুরু হবে বলে তাকে জানানো হয়।


নিউজ টি শেয়ার করুন..

সর্বশেষ খবর

আরো খবর