আজ রবিবার। ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ। ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ। ১০ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি। এখন সময় সকাল ১১:০৭

পৌরশহর হিসেবে দেশের সবচেয়ে বেশি করোনা রোগী নরসিংদীর মাধবদীতে

পৌরশহর হিসেবে দেশের সবচেয়ে বেশি করোনা রোগী নরসিংদীর মাধবদীতে
নিউজ টি শেয়ার করুন..

নরসিংদী প্রতিবেদক :

নরসিংদীতে গত দুই সপ্তাহ থেকে করোনা সংক্রমণের হার কমতে শুরু করেছিল । এপ্রিলের প্রথম ১৫ দিনে ১৬১ জন রোগী শনাক্ত হলেও পরের ১৫ দিনে শনাক্ত হয়েছিল মাত্র ২১ জন । মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে অফিস-আদালত ও ব্যবসা-বাণিজ্য কিছুটা চালু করার পর পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে শুরু করেছে । কারণ, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ মানুষ কোনো শর্তই তেমন মানছে না ।

বর্তমানে পরিস্থিতিতে রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও মুন্সিগঞ্জের পরেই নরসিংদীর অবস্থান । এ পর্যন্ত এই জেলায় মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয় ২০৭০ জন এর মধ্যে পজেটিভ এসেছে ২৫৫ জন,মারা গেছেন ৪ জন । এই পর্যন্ত সুস্থ হয়ে আইসোলেশন থেকে বেরিয়ে এসেছেন ১৫৯ জন এবং ভাইরাস পজেটিভ নিয়ে আইসোলেশনে রয়েছেন ৯২ জন । জেলার সবচেয়ে বেশি রোগী সংখ্যা রয়েছে সদর উপজেলায় । এখানে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৪৭ জন,মারা গেছে ৩ জন । তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগীর সংখ্যা মাধবদী পৌরসভায় ।

ধারণা করা হচ্ছে পৌরশহর বা ইউনিয়ন পরিষদের মত এলাকার বিবেচনায় বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি করোনা রোগীর সংখ্যা নরসিংদী জেলার মাধবদী পৌরসভায় । এখানে প্রতি কিলোমিটারে গড় রোগীর সংখ্যা প্রায় ৪ জন এবং প্রতি ৩ কিঃমিঃতে ১ জন করে রোগী করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ।

গত ২ সপ্তাহে সরকারী হিসেব অনুযায়ী ৬.০৪ বর্গ কিঃমিঃ এর মাধবদী পৌর শহরে মোট করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২২ জন,এর মধ্যে করোনার শিকার ২ জন মারা গেছেন । প্রতিদিন এই সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে । এত অল্প সময়ের মধ্যে এতজন রোগী দেশের আর কোথাও হয়নি । ধারণা করা হচ্ছে, হঠাৎ রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির কারন অফিস-আদালত,ব্যবসা-বানিজ্য সহ দোকানপাট খুলে দেওয়ায় ।
পৌরসভার মেয়র মোশারফ হোসেন থেকে জানায় , ‘ পৌরসভায় যে পরিমান করোনা রোগী সনাক্ত হয়েছে,তা এখানেই সীমাবদ্ধ নয়,শত শত করোনা রোগী রয়েছে এই শহরে । যা পরীক্ষার অভাবে হয়ত বের হচ্ছে না । ‘

এলাকাবাসী জানায়, ‘পৌরসভার সোনার বাংলা মার্কেট থেকে শুরু করে রাস্তার আশে-পাশের সকল কাপড়ের দোকান খোলা থাকে সারাদিন । অথচ শহরের অন্য আরেকটি মার্কেট(স্কুল মার্কেট) বন্ধ । এছাড়াও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে কথা বলে বাজারের গরীব মানুষের দোকানপাট বন্ধ করে , সুপার শপ গুলো খোলা রাখা হচ্ছে । যেখানে মুদি দ্রব্যাদির চেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে কসমেটিক্স সামগ্রী সহ অন্যান্য কম প্রয়োজনীয় সামগ্রী ।

বাজারের একজন ব্যবসায়ী , নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন ,” প্রশাসন থেকে বার বার নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরও মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে । কেউ কথা শুনছে না । অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির কেনাকাটার উছিলায় বাজার বন্ধ রেখে , সুপার শপগুলো চালু রাখা হয়েছে । এতে করে শহরের ৪টি সুপার শপে মানুষ প্রচুর ভিড় করছে । এতে ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না । সুপার শপই যদি খোলা রাখা যায় , তাহলে তো বাজারের মুদি দোকানগুলোই খোলা রাখা যেতে পারে । এতে করে মানুষ এক দোকানে এত ভিড় করবে না ।

বাজারের গরীব মুদি দোকানদারদের পেটে লাথি মেরে , সুপার শপ খোলা রাখার যুক্তিকতা বুঝতে পারছি না ।পৌর কর্তৃপক্ষ কেন এমন দ্বিমুখী নীতিতে অবস্থান নিচ্ছে , তা সাধারণ মানুষের প্রশ্ন । বড়লোকের সুপার শপ খোলা থাকবে অথচ গরীবের মুদি বা টং দোকান কেন খোলা থাকবে না ?
অন্যদিকে সোনার বাংলা মার্কেট খোলা থাকলে,স্কুল মার্কেট কেন বন্ধ থাকবে , তাও বুঝতে পারছি না । বন্ধ থাকলে সবগুলোই বন্ধ থাকবে ।”

৪নং ওয়ার্ডের ১ জন বাসিন্দা বলেন ,” পৌরসভার নির্ধারিত কাঁচা বাজার বন্ধ করে , কাঁচা বাজার নিয়ে যাওয়া হয়েছে এস.পি স্কুলের মাঠে । সেখানে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুরের পর পর্যন্ত শত শত লোকের ভিড় দেখা যায় । ইতিমধ্যে মাঠের পশ্চিম পাশের একটি বাড়িতে গতকাল ৪ জন করোনা আক্রান্ত রোগী ধরা পড়েছে । আমার ধারণা , মাঠে বাজার সরিয়ে নেওয়ার কারনেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে ।
এই মূহুর্তে যদি পুরো শহর লক ডাউনের আওতায় আনা না হয় তাহলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করবে । সমগ্র শহরেই রিক্সা,ভ্যান,অটোরিকশা হরহামেশাই চলছে । কর্তৃপক্ষ ভ্রুক্ষেপ করছে না ।তাছাড়া এলাকার ভিতরের চা দোকান,মুদি মনিহারী দোকানে আড্ডা দিচ্ছে মানুষজন ।

অন্যদিকে শর্তসাপেক্ষে খুলে দেওয়া হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি কাপড়ের হাট নরসিংদীর শেখেরচর-বাবুরহাট । ঈদ সামনে রেখে ও জেলার অর্থনীতির চাকা চালু রাখতে গত ২৬ এপ্রিল থেকে সীমিত পরিসরে হাটটি খুলে দেয় জেলা প্রশাসন । আগে সপ্তাহে তিন দিন হাট চালু ছিল । এখন প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত খোলা রাখা হচ্ছে ।

জেলা প্রশাসন বলছে, শর্তসাপেক্ষে সীমিত পরিসরে চালু করা হয়েছে শেখেরচর-বাবুরহাট । শর্ত হলো, হাটের কোনো দোকান খোলা রাখা যাবে না । অনলাইন বা মুঠোফোনে অর্ডার পেলে শুধু একটি শাটার খোলা রেখে পণ্য ডেলিভারি করতে হবে এবং সকল প্রকার লেনদেন অনলাইন অথবা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে করতে হবে । বেচাকেনার জন্য কোনো দোকান বা আড়তে জনসমাগম করা যাবে না এবং প্রতিটি দোকান বা আড়তে সর্বোচ্চ তিনজন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অবস্থান করতে পারবেন । হাটে আসা-যাওয়ার জন্য উত্তর ও দক্ষিণ দিকে দুটি সুনির্দিষ্ট প্রবেশপথে থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে প্রবেশকারীদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হবে । বিভিন্ন স্থানে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকবে । সবাইকে মাস্ক পরতে হবে । ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ওপর যানবাহন রেখে মালামাল ওঠানো-নামানো যাবে না । নির্দিষ্ট স্থান ধূমকেতু মাঠ ব্যবহার করতে হবে ।

তবে সরেজমিনে ওই হাটে গিয়ে দেখা গেছে, এসব শর্তের অধিকাংশই মানা হচ্ছে না । হাটের ৭০ শতাংশ দোকানে আশপাশের জেলাগুলো থেকে আসা পাইকারি ক্রেতারা নগদ টাকায় কাপড় কিনছেন । সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না ।তাছাড়া পৌরসভায় অবস্থিত পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সহ কয়েকটা গ্রুপ অব কোম্পানির অফিস খোলা রয়েছে । যাতে মানুষের ভিড় দেখা যাচ্ছে । নরসিংদী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অফিস ও বাসষ্টেন্ডে অবস্থিত বিদ্যুৎ অফিসে প্রচুর লোক সমাগম লক্ষ্য করা যায় প্রতিদিন । যা থেকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে এলাকার লোকজন ।
এভাবে চলতে থাকলে অর্থাৎ পৌর শহরকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণ লক ডাউনের আওতায় আনা না হলে মৃত্যুর মিছিল আরো দীর্ঘ হবে জানান এলাকায় বসবাসরত নাগরিক ও সুশীল সমাজ ।


নিউজ টি শেয়ার করুন..

সর্বশেষ খবর

আরো খবর