আজ শুক্রবার। ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ। ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ। ৮ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি। এখন সময় সকাল ৮:১১

জঙ্গলে পড়ে ছিল গরিবের চাল

নিউজ টি শেয়ার করুন..


মৌলভীবাজারের বড়লেখায় পরপর দু’দিন বাড়ি ও জঙ্গল থেকে সরকারি চাল উদ্ধার করা হয়েছে। গত শুক্রবার উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের এক দিনমজুরের বাড়ি থেকে সরকারি গুদামের ৮ বস্তা ও শনিবার একই এলাকার একটি জঙ্গল থেকে আরও চারটি বস্তায় ১২২ কেজি চাল উদ্ধার করা হয়েছে। পাশাপাশি উদ্ধার হয়েছে খাদ্য অধিদপ্তরের ৮টি খালি বস্তা।

চাল উদ্ধারের ঘটনায় উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। উদ্ধার হওয়া চাল স্থানীয় ডিলার ওই দিনমজুরের বাড়িতে রেখেছিলেন বলে অভিযোগ উঠলেও মামলায় তাকে আসামি করা হয়নি। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, শাহবাজপুর ইউনিয়নের ভাটাউচি গ্রামের দিনমজুর আব্দুস শুক্কুরের বাড়িতে পাওয়া চালগুলো স্থানীয় চাল ডিলার মো. সুলেমান রেখেছিলেন। ঘটনার আগের দিন সকালে ডিলার চালগুলো ওই বাড়িতে পাঠান। ডিলার সুলেমানের বাড়িও একই গ্রামে। তবে এই ঘটনার শনিবার রাতে থানায় দায়েরকৃত মামলায় কেবল দিনমজুর আব্দুস শুক্কুরকে আসামি করা হয়।

শুক্রবার সন্ধ্যায় আব্দুস শুক্কুরের বাড়ি থেকে সরকারি ৩০ কেজি ওজনের ৮টি বস্তা চাল উদ্ধার করে স্থানীয়রা। খবরটি উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মোস্তাক আহমদকে জানানো হয়। তিনিসহ খাদ্য অফিসের কোনো কর্মকর্তাই এদিন কর্মস্থলে না থাকায় ঘটনাস্থলে পাঠানো হয় নিরাপত্তা প্রহরী মাছুম আহমদকে। খবর পেয়ে শাহবাজপুর তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। খাদ্য অফিসের নিরাপত্তা প্রহরীর উপস্থিতিতে পুলিশ চালগুলো জব্দ করে। এরপর নিরাপত্তা প্রহরী স্থানীয় ডিলারের কাছ থেকে স্টক রেজিস্টার নিয়ে চলে আসেন। এর পরদিন শনিবার বিকেলে স্থানীয় ডিলার সুলেমানের বাড়ির অদূরে মুজম্মিল আলীর বাড়ির পাশের জঙ্গলে পরিত্যক্ত অবস্থায় ৪টি প্লাস্টিকের বস্তায় আরো ১২২ কেজি চাল ও খাদ্য অধিদপ্তরের ৮টি খালি বস্তা উদ্ধার করা হয়। চাল ও খালি বস্তা উদ্ধারের পর খাদ্য কর্মকর্তা ডিলারের গুদামে তালা দিয়ে বাজার বণিক সমিতির সম্পাদক আখতার হোসেন রহিমের কাজে চাবি বুঝিয়ে দেন। এই রাতে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের উপখাদ্য পরিদর্শক প্রানেশ লাল বিশ্বাস বাদী হয়ে বড়লেখা থানায় দিনমজুর আব্দুস শুক্কুরকে আসামি করে মামলা করেন।শনিবার বিকেলে আব্দুস শুক্কুরের বাড়িতে গেলে তার স্ত্রী হাজিরা বেগম অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার কার্ডের দুই মাসের ২ বস্তা চাল একসাথে পেয়েছি। আমরা গরীব মানুষ। বাড়তি আরো ৬ বস্তা চাল সুলেমান ভাই তার লোকজন দিয়ে আমার ঘরে পাঠান। আমার স্বামী বাড়িতে না থাকায় রাখতে চাইনি। পরে সুলেমান ভাইয়ের সঙ্গে কথা বললে তিনি আমাকে এগুলো রাখতে বলেন। চালগুলো তিনি পরে নেবেন বলে আমাকে জানান। পরেরদিন সরকারি লোকজন এসে চালগুলো নিয়ে যায়।’ 

স্থানীয় বাসিন্দা হোসেন আহমদ ও দুলাল আহমদ একই অভিযোগ করে বলেন, বৃহস্পতিবার ডিলার সুলেমান দিনমজুর শুক্কুরের বাড়িতে ৩০ কেজি ওজনের ৮ বস্তা চাল পাঠান। তখন শুক্কুর বাড়িতে ছিলেন না। বাইরের কোথাও দিনমজুরের কাজ করছিলেন। শুক্কুরের বাড়িতে চাল রাখার ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে পরদিন লোকজন প্রশাসনকে খবরটি জানায়। এরপর ওই বাড়ি থেকে ৮ বস্তা চাল জব্দ করা হয়। এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাল ডিলার মো. সুলেমানের মুঠোফোনে কল দিয়ে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু মুঠোফোন বন্ধ পাওয়ায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।

বড়লেখা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মোস্তাক আহমদ বলেন, ‘শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় সিলেটে বাসায় ছিলাম। প্রথমদিন নিরাপত্তা প্রহরীকে পাঠাই ঘটনাস্থলে। স্থানীয় ডিলারের স্টক রেজিস্টার নিয়ে আসতে বলি। শনিবার ওই গুদামে খোঁজ নিতে গিয়ে খবর পাই আরো কিছু চাল ও খালি বস্তা পাওয়া গেছে। এগুলোও পুলিশের মাধ্যমে জব্দ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ডিলারের কাগজপত্র মিল পাওয়া গেছে। যার ঘরে সরকারি চাল পাওয়া গেছে তার নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় অন্য কেউ জড়িত থাকলে পুলিশ তদন্ত করে তার বিরুদ্ধেও চার্জশিট দেবে। আমরা তো আর মামলা তদন্ত করতে পারি না।’

বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াছিনুল হক বলেন, ‘একজন উপপরিদর্শককে মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যারাই জড়িত থাকুক, তদন্তে যাদের নাম আসবে তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে।’


নিউজ টি শেয়ার করুন..

সর্বশেষ খবর

আরো খবর