আজ শনিবার। ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ। ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ। ১৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি। এখন সময় সকাল ১০:১১

হঠাৎ বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাতিসংঘ কেন?

হঠাৎ বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাতিসংঘ কেন?
নিউজ টি শেয়ার করুন..

হঠাৎ করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাতিসংঘ ইস্যুটি সামনে এসেছে। গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের সঙ্গে বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বৈঠক এবং তার আগে আওয়ামী লীগের দুই নেতা সালমান এফ রহমান এবং আনিসুল হকের সাথে বৈঠক এবং পরবর্তীতে বিকেলে আমির হোসেন আমুর বক্তৃতা- সবকিছুর পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাতিসংঘ ইস্যুটি সামনে চলে এসেছে।

বিভিন্ন সূত্র বলছে, পিটার ডি হাস বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ- দুই পক্ষকেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় করা যায় কি না- সেই প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছেন। বিভিন্ন সূত্রগুলো থেকে যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে আওয়ামী লীগের দুই নেতা এই প্রস্তাব সম্পর্কে ‘হ্যা’ ‘না’ কিছুই বলেননি। তারা বলেছেন, এটা নীতি নির্ধারনী সিদ্ধান্ত। এ মুহুর্তে এটা বলা সম্ভবব নয়। অন্যদিকে বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ প্রস্তাবে রাজি হয়েছেন। এ প্রস্তাব নিয়ে দুপুর বেলা যখন পর্দার আড়ালে বৈঠক চলে, তখন এ রকমই একটি প্রস্তাব সরসারি উত্থাপন করেন আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা আমির হোসেন আমু। তিনি গতকালের ১৪ দলের সভায় বিএনপির সঙ্গে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় আলাপ- আলোচনা করার প্রস্তাব দিয়েছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন,হঠাৎ করে জাতিসংঘের ইস্যুটি আনা বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য একটি অশনিসংকেত এবং সুনির্দিষ্ট একটি নীল নকশা বাস্তবায়নের জন্যই জাতিসংঘকে সামনে আনা হয়েছে। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ঢেলে দেওয়া হচ্ছে, তেমনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে নির্বাচনী ব্লু প্রিন্ট- তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হচ্ছে। কারণ জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় নির্বাচন করার অর্থই হলো- এই নির্বাচনে জাতিসংঘ তদারকি করবে, যে রকম তদারকি করে গৃহযুদ্ধে জর্জরিত যুদ্ধ বিধ্বস্থ দেশগুলোতে। বাংলাদেশের পরিস্থিতি কোনোভাবেই সেরকম নয়, তার পরেও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সংলাপ বা নির্বাচনের বিষয়টি আসলো কেন- সেটি ভেবে দেখার বিষয়। এর প্রধান কারণ হলো বাংলাদেশের রাজনীতিকে ঘিরে একটি গভীর ষড়যন্ত্র।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বেশ ভালো করেই জানে, তারা যে ভিসা নীতি দিয়েছে, সে ভিসা নীতিটি বাংলাদেশে খুব একটা কার্যকর হবে না। কারণ এই ভিসা নীতি- এর আগে নাইজেরিয়াসহ বেশ কিছু দেশে যুক্তরাষ্ট্র প্রয়োগ করেছিল- কিন্তু সে দেশগুলোতে এটা খুব একটা কাজে লাগেনি। বরং নাইজেরিয়া এ সমস্ত নিষেধাজ্ঞা সত্বেও তাদের নির্বাচন করে ফেলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভালো মতোই জানে, বাংলাদেশে মার্কিন কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে গেলে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যা চায় সেটা অর্জন করতে হলে শান্তিরক্ষা মিশনের উপর হাত দিতে হবে। কিন্তু শান্তিরক্ষা মিশনে হাত দেওয়ার ক্ষমতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একার নেই। বাংলাদেশের শান্তি মিশনে অন্তর্ভুক্তি যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বন্ধ করতে চায়, তাহলে বিষয়টি তাদেরকে অবশ্যই নিরাপত্তা পরিষদে আনতে হবে। সেখানে স্বাভাবিক ভাবেই রাশিয়া এবং চীনের ভ্যাটোর মুখোমুখি হবে মার্কিন প্রস্তাব।

আর অন্যদিকে বাংলাদেশে যদি জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় একটি সংলাপ করা যায়, যে সংলাপে আওয়ামী লীগ-বিএনপি অবস্থান করবে, তাহলে জাতিসংঘের মাধ্যমে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পথটা প্রসস্থ হয়। এরপর জাতিসংঘের তদারকিতে যদি নির্বাচন হয় এবং সেই নির্বাচনে কোনো রকম বিচ্যুতির অভিযোগ আসলেই- প্রথম হস্তক্ষেপ করা হবে শান্তিরক্ষা মিশনের ওপর। এটা সুস্পষ্ট যে, শান্তিরক্ষা মিশনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার অভিপ্রায় বাস্তবায়ন করতে চায়। আর সে কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের একাংশকেও তাদের পক্ষে নিয়ে এসেছে। আর এ কারণেই আমির হোসেন আমু এ ধরনের বক্তব্য রেখেছেন বলে অনেকে মনে করেন।

শুধু আমির হোসেন আমু নয়, আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা নিয়মিত মার্কিন দূতাবাসে যান। ঠিক এক-এগারোতে যেরকম আওয়ামী লীগ-বিএনপির একটি অংশ দলের মূল নেতৃত্বের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল এবং একটি নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণ করেছিল, যেটি সংস্কার প্রস্তাবের আদলে প্রকাশিত হয়েছিল, তেমনি এখন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা- তাদের দায়িত্ব না থাকা সত্বেও মার্কিন দূতাবাসে প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে যাচ্ছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতির পক্ষে সাফাই গাইছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে স্বাগত জানাচ্ছেন। এরাই আরেকটি এক-এগারোর প্রেক্ষাপট তৈরি করছেন কি না- সেটিই দেখার বিষয়।

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এমনও হতে পারে আমির হোসেন আমু একজন দক্ষ, চৌকষ এবং কুশলী রাজনীতিবিদ। তিনি নব্য আওয়ামী লীগে ঢুকে পড়া, নতুন নতুন নেতা হওয়া- আওয়ামী লীগের এ সমস্ত সুবিধাবাদীদের আসল চেহারা জানেন- এজন্যই তিনি ইচ্ছা করে জাতিসংঘের মধ্যস্থতার কথাটি বলেছেন- যেন এই উদ্যোগটি প্রকাশ্য হয় এবং দলের সভাপতিসহ নীতি নির্ধারকরা এ ব্যাপারে সচেতন হয়। তবে তিনি যে কারণেই বলেন না কেন, জাতিসংঘের মধ্যস্থতা বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য একটি অশনিসংকেত হবে।


নিউজ টি শেয়ার করুন..

সর্বশেষ খবর

আরো খবর