অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় বিএনপি

বিএনপি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে আগামী রোববারের জন্য। রোববারে (১০ ডিসেম্বর) নাটকীয় কিছু ঘটতে যাচ্ছে এমন ইঙ্গিত দিচ্ছেন বিএনপির অনেক নেতাই। বিএনপির অন্তত একজন নেতা এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপচারিতায় বলেছেন, রোববার সন্ধ্যায় খবর নিয়েন, দেখেন কি হয়।

বিএনপির মধ্যে কেউ কেউ স্বপ্নবিলাসী। তারা মনে করছেন, এখনও অনেক ঘটনার বাকি আছে। ৭ জানুয়ারি নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কি না, তা নিয়েও বিএনপির কারও কারও মধ্যে নানা রকম সন্দেহ রয়েছে। অধীর আগ্রহে বিএনপি অপেক্ষা করছে, কিছু একটা ঘটবে। কে ঘটাবে, কি ঘটাবে? এ ব্যাপারে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলাপ করতে চাইলে তারা অবশ্য প্রকাশ্যে কিছু বলেন না। কিন্তু গোপনে তারা বলছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করছে। বাংলাদেশের উপর আসছে বড় ধরনের খড়গ।

আগামী ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস। এই মানবাধিকার দিবসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে যে মানবাধিকার রিপোর্ট প্রকাশ করবে তার ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় ধরনের ভূমিকম্প হবে, এমন আভাস দিচ্ছেন বিএনপির কোন কোন নেতারা। কোথায় থেকে, কিভাবে তারা এই তথ্য পেয়েছেন, সে সম্পর্কে তারা কিছু জানাননি।

তবে কূটনৈতিক সূত্রগুলো বিএনপির এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন। তারা বলছেন যে, বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে গত এক বছরে ঘটনাবলী যদি বিশ্লেষণ করা যায়, তাহলে দেখা যাবে যে, সরকার মানবাধিকার পরিস্থিতির বরং উন্নতি করেছে। বিগত দিনগুলোতে যেখানে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে নানা ধরনের সমালোচনা ছিল, সেখান থেকে পরিস্থিতির অনেকখানি উন্নতি হয়েছে।

জেনেভায় অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সম্মেলনে আইনমন্ত্রী বাংলাদেশের অবস্থানকে যেভাবে দৃঢ়তার সঙ্গে তুলে ধরেছেন, তা ইতিবাচক এবং এর ফলে বাংলাদেশ নিয়ে, বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞার মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে বলে তারা মনে করেন না। আর যদি এরকম পরিস্থিতি তৈরি হয়, সেটি হবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশকে নিয়ে একটি রূপকল্প রয়েছে। সেই রূপকল্প নিয়েই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত দুই বছর ধরে বাংলাদেশের নির্বাচন এবং অন্যান্য আনুষাঙ্গিক বিষয়গুলির দিকে নজর রাখছিল এবং এ ব্যাপারে বাংলাদেশের সঙ্গে বারবার কথাও বলছিল। কোনও কোনও ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদিও বলেছিল যে, তারা বাংলাদেশের নির্বাচনে কোনও পক্ষকে সমর্থন করে না, একটি অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে চায়। কিন্তু, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আচার-আচরণ বা পদক্ষেপগুলো থেকে একটা সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া গিয়েছিল। তাহলো- মার্কিন প্রশাসন বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে চাপে রাখতে চায়, যেন তারা অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে বাধ্য হয়। সরকারও এই চাপের কথা অস্বীকার করেনি বরং এই চাপ সামাল দিয়ে সরকার নির্বাচনের পথে হেঁটেছে।

বিএনপি গত ২৮ অক্টোবরের ঘটনার মাধ্যমে নিজের ফাঁদে নিজেই পড়েছে। যার ফলে তারা যে আন্তর্জাতিক সমর্থন এবং সহযোগিতা পাবে সে সুযোগ আর নেই। এরকম একটি পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে এক ধরনের নীরবতা পালন করছেন। কিন্তু, মানবাধিকার ইস্যু এবং শ্রম ইস্যু নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক তৎপরতাগুলো উদ্বেগজনক বলেও মনে করছেন কোনও কোনও মহল৷

তবে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞা বা কোনো কিছু দেবে না। অন্যদিকে, বিএনপি মনে করছে যে, ১০ ডিসেম্বরই কিছু একটা ঘটনা ঘটবে। আর সে কারণেই তারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।

Leave a Comment