ইবি প্রতিনিধি : মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা শহরের কাথুলী মোড় এলাকায় শ্বশুরবাড়ি থেকে তাসনিম উর্মি (২৩) নামের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ফোকলোর স্টাডিস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এক ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) ভোররাতে খবর পেয়ে গাংনী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে স্থানীয় থানা পুলিশের একটি টিম তার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এরপর ময়নাতদন্তের জন্য মেহেরপুর মর্গে পাঠানো হয়।
ঘটনার পর থেকেই তার স্বামী আশরাফুজ্জামান প্রিন্স পলাতক রয়েছেন। এক পুত্র সন্তানের জননী উর্মি গাংনী উপজেলার শহরের কাথুলী মোড় এলাকার আশরাফুজ্জামান প্রিন্স এর স্ত্রী ও একই উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের গোলাম কিবরিয়ার মেয়ে।
উর্মির বাবা গোলাম কিবরিয়া জানান, ওর স্বামী একটা নেশাখোর। নেশা করে এসে আমার মেয়েকে মারধোর করেছে। তার গায়ে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন আছে। তারা আমার মেয়েটকে মেরে ফেলে জানালার সাথে ঝুলিয়ে রেখেছিলো। তারপর হাসপাতালে লাশ নিয়ে গেছে। কি দরকার ছিলো এই নাটক সাজানোর। হাসপাতালের ডাক্তার বলতেছে যে মৃত্যু অনেক আগেই হয়ে গেছে লাশ পরে নিয়ে আসছে। আমি সাড়ে ১১ টার দিকে জানতে পারি যে উর্মী অসুস্থ হাসপাতালে নিয়ে আসছি আপনারা আসেন। আমার সাথে রাত ৮ টার দিকে সর্বশেষ কথা হয় ওর মায়ের চোখের ডাক্তার দেখানো নিয়ে। তখন সে খুব উৎফুল্ল ছিলো। এরকম কিছু হবে বুঝতে পারিনি। তিনি আরো বলেন, আমার মেয়ের মৃত্যুর জন্য ওর শ্বশুরবাড়ির সবাই দায়ী। ওরা এক বছর যাবৎ আমার মেয়ের উপর শারীরিক, মানসিক নির্যাতন করছিল। ওর স্বামী নেশা করত যখনি ও স্ত্রী হিসেবে এইটা বলে তখনি তারা এক হয়ে আমার মেয়ের উপর নির্যাতন করত।
উর্মির মা জানান স্বামী সন্তান ঘড়ে থাকা অবস্থায় আমার মেয়ে কখনোই আত্মহত্যা করতে পারেনা। আমার সাথে সন্ধ্যার আগে কথা হয়েছে ভিডিও কলে আমার নাতি হাটা শিখেছে এইটা নিয়ে খুব খুশি ছিলো ও। ও আমাকে সবসময় ভিডিও কল দিতো। আমি স্কুলে থাকলেও আমাকে কল দিয়ে কথা বলত। আমার মেয়েকে তার স্বামী প্রিন্স শ্বাসরোধে হত্যা করে। হত্যার পর উর্মি আত্মহত্যা করেছে বলে ঘটনা ধামা চাপা দেয়ার চেষ্টা করছে।
স্থানীয়রা জানান,প্রিন্স ছিল মাদকাসক্ত। প্রতিনিয়ত সে কারণে-অকারণে তার স্ত্রীকে মারধর করতো।
গাংনী থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক বিষয়টি নিশ্চিত করে গণ মাধ্যমকে জানান, খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়েছে। ময়নাতদন্তের পরে হত্যার কারণ জানা যাবে।
এ বিষয়ে ফোকলোর বিভাগের সভাপতি ড. মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পুলিশ এটা একটা অপমৃত্যু মামলা নিয়েছে। আমরা চাই মৃত্যুর সঠিক কারণটা উদঘাটিত হোক। সাইন্টিফিক রিপোর্ট অনুযায়ী যদি এটা অপমৃত্যু হয়ে থাকে, তার প্রাণহানির পিছনে যদি কোনো ব্যক্তি মানুষ থাকে, সেটা যেন উদঘাটন করা হয় এবং এর সাথে যারা জড়িত থাকবে তাদের সর্বোচ্চ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয় এটা আমাদের দাবি থাকবে।
তাসনিম উর্মি ছিল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্নাস চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তার স্বামীও কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের অর্নাস তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তারা ৪ বছর পূর্বে প্রেম করে বিয়ে করেছিল। বিয়ের পর তাদের সংসারে রয়েছে আবনাব আবিব প্রত্যয় নামের ১৩ মাস বয়সী শিশু পুত্র।