আজ শনিবার। ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ। ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ। ৯ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি। এখন সময় দুপুর ১:৩১

পরিণতি

পরিণতি
নিউজ টি শেয়ার করুন..

সাত মাসের বাচ্চাটা পেটে নিয়ে যখন বাবার সামনে দাড়ালাম বাবা চোখের পানি ছেড়ে বুকে জরিয়ে নিলেন। বাড়ির সবাই আমাকে নিয়ে মাতামাতি। ৪ বছর পর নিজের বাড়িতে এলাম। তাও হাসিমুখে না, ডিভোর্সের কারনে। ভালোবেসে পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম আবির কে। বাড়ির বড় মেয়ে ছিলাম তাই আদর যত্ন কখনো কম হয় নি ৩ বোন ২ ভাই বাবা- মা। সুখের সংসারে অশান্তি দিলাম আমি। আবিরকে নিয়ে পালিয়ে বাবাকে যতটা কষ্ট দিয়েছি সেটা আবিরের অবহেলা আমাকে বুঝিয়েছে।
একটা মানুষ যখন জানোয়ার হয় তখনই সে তার বৌ য়ের উপর হাত তুলে। অমানবিক নির্যাতন করে।

সেদিনের পর আবিরের সাথে আর যোগাযোগ হয় নি। সব ভালোবাসার বন্ধন ছিন্ন করে নিজের সন্তানের কথা চিন্তা করে সব ত্যাগ করে চলে এসেছি।

আমার সকল দুঃখ কষ্টকে অবসান ঘটিয়ে আল্লাহ আমায় কন্যা সন্তান দান করেন।
মেয়েটা দেখতে ঠিক আবিরের মতো হয়েছে।
মেট্রিক পাস থাকায় গ্রামের একটা ব্যাক স্কুলে চাকরি করি। মেয়েকে মানুষ করার সকল দায়িত্ব তো আমাকেই নিতে হবে।
বাবা অবশ্য চেয়েছিলেন আমাকে আবার বিয়ে দেওয়ার কিন্তু যেখানে ভালোবাসার সংসার ঠিকে না সেখানে আবার বিয়ে কি করবে। আর আবির আমাকে যে ভালোবাসার আর সুখের লোভ দেখিয়েছিলো তার ছিটেফুটা ও আমি পাই না। ভালোবাসা বলতে কিছুই হয় না, সব হয় আবেগ আর মোহ।। যেটা প্রথম টের পাওয়া যায় না যখন আবেগ কেটে যায় তখন ই সেই ভালোবাসার মানুষই হয়ে ওঠে চরম ঘৃণার মানুষ।

আমার মেয়ে (ইভা) ওর চরিত্রে সবটাই বাবার রুপ।
ওকে নিয়ে আমার চিন্তার শেষ নেই। কখনো কোনো কষ্ট করতে দেই না। তবু ভয় হয় মেয়ে মানুষ। আবিরের মতো কোনো অমানুষের ছায়া যদি ওর মাঝে পড়ে তাহলে আমার জীবনের মতো ওর জীবনটা ও নষ্ট হয়ে যাবে।

দেখতে দেখতে ইভা মেট্রিক পরিক্ষা দেবে। অনেক জায়গা থেকে ওর বিয়ের প্রস্তাব আসছে কিন্তু আমার ইচ্ছে মেয়েকে অনেক পড়ালেখা করাবো।

একটি আমার ছোট ভাই ইভাকে আমাকে কাছে নিয়ে আসে, ওদের ২ জনের চেহারা অন্যরকম।

ভাইকে জিজ্ঞাসা করতেই ওর যা বললো নিজের কান কে বিশ্বাস করাতে পারলাম না। ইভা ও আমার মতো ভুল করতে বসেছিলো। সেই ভালোবাসায়, যেটা আমার জীবনটা কে নষ্ট করে দিয়েছে। সেরাতে আর ঘুম হলো না। মেয়েকে অনেক মারলাম। রাগে কষ্টে সারারাত পার করে দিলাম।
পরেরদিনই ইভার বিয়ে ঠিক করলো আমার ছোট ভাইটা ওর শশুর বাড়ির কি আত্মীয়। ছেলেটা খুব ভালো। সরকারী চাকরি করে।
সবকিছু ঠিক একদিনেই ইভাকে বিয়ে দেওয়া হলো। আমাকে একা করে মেয়েটা কে পাঠিয়ে দিলাম শশুর বাড়ি। সেরাতে আমার ঘুম নেই সারারাত কাঁদলাম। বুঝতে পারলাম সন্তান পাশে না থাকলে কতো কষ্ট হয়। একজন মা সেটা বুঝতে পারে কিন্তু একজন সন্তান সেটা বুঝার মতো মনেই করে না।

৩ দিন পর ইভা আসে। ওর অবস্থা দেখে বুঝতে পারলাম সুখেই আছে। তবুও মেয়েকে কাছে এনে কিছু সংক্ষিপ্ত যাচাইবাচাই করলাম।

ইভার ইন্টার এ ভর্তি হয়। তার শশুর বাড়ি থেকে কলেজ খুব দুরে তাই আমার কাছে থেকেই পড়াশুনা করে।
শশুর বাড়ির কারোই আপত্তি নেই।
ইদানিং ইভা ওর স্বামীর সাথে অনেক কথা কাটাকাটি করে আমি জিজ্ঞাসা করলে কিছুই বলে না আবার সারারাত কারো সাথে ফোনে কথা ও বলে।
ইভার ইন্টার পরিক্ষা শেষ করলো। জানতে পারলাম তার স্বামী ছাড়া ও আরো একটা ছেলের সাথে ফিজিক্যাল রিলেশন আছে। যা শুনার পর নিজেকে খুবই করুন আর পাপী মনে হচ্ছে। সেদিও আবার ইভাকে মারলাম। কিন্তু সে বার ইভা আমার উপর প্রতিশোধ তুলে সেই ছেলের সাথে সেদিন রাতেই পালিয়ে যায়।
পাড়ায় এই কথা জানাজানি হতে বেশি সময় লাগে নি। সেদিন প্রথম আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ভাগ্য তো আমাকে নিয়ে আরো খেলার ছিলো।
তাই হয়তো বেঁচে গেছি। ইভা তার প্রথম স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে নতুন স্বামী ( ইমরান) এর সাথে সংসার করছে।
মাস কয়েক কোনো যোগাযোগ রাখিনি। কিন্তু মা তো আমি যাকে গর্ভে ধারন করেছি সেই মায়া এতো সহজে ছাড়া মনে হয় আল্লাহর তরফ থেকে হয় নি।

ইমরান দেশের বাহিরে চলে যাবে। ইভাকে টাকার জন্য খুব চাপ দিচ্ছে। আমি খুব কষ্ট করে টাকা কিছু জুগার করে দিলামম। এতে ও হলো না। বুঝতে পারলাম আমার মেয়ে আবেগের বশে যে কাজ করেছে তার ফল পাচ্ছে।
৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ইভা। প্রথম বার সন্তান হবে। শরিল ওর সবসময় দুর্বল থাকে। শশুর বাড়িতে ঠিকমতো খেতে দেয় না। কয়েকবার গিয়েছিলাম আনতে কিন্তু ইমরান আর ওর মার এক কথায় মেয়েকে নিতে চায়লে যেন একবারে নিয়ে যাই। অনেকবার ইভাবে বলেছি চলে আসতে কিন্তু ও আসে না ।

৮ মাস চলাকালিন সময় ইভার খুব জ্বর আসে। আমার ও খুব অসুখ। একপ্রকার হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম আমি। মেয়েটা শুধু ফোন করে সেদিন সন্ধ্যায় বলেছিলো ” মা তোমায় দেখতে আমার খুব ইচ্ছে করছে আর হয়তো দেখা হবে না ”
ওর এই কথা আমার ভেতরে হৃদপিন্ডটা নাড়িয়ে দিলো। সিধান্ত নিলাম সকাল হলেই মেয়েকে দেখতে যাবো রাতে র মধ্যেই হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরে যাবে।

কিন্তু নিয়তির খেলা বুঝা খুব কঠিন।
পরেরদিন সকালে ইমরান ফোন করে -প্রচন্ড জ্বরের কারনে আমার ইভা আমাকে ফেলে চলে গেছে। আমাকে সে আর দেখতে পারলো না।
পাগলের মতো ছুটতে ছুটতে ইভার কাছে গেলাম।
মেয়ে আমার লাশ হয়ে শুয়ে আছে। নতুন সন্তানকে সে পৃথিবীর আলো দেখাতে ব্যার্থ।
সেদিন মেয়েকে না সাথে আমাকে ও কবর দিয়ে এসেছি।

ভালোবাসা, আবেগ মানুষকে কখনো সুখ দিতে পারে না।ক্ষনিকের চাওয়া, ভালোলাগা সারাজীবনের জন্য নয়। জীবনটাকে সুন্দর করতে চায়লে সুন্দর একটা জীবনসাথীর প্রয়োজন।

লেখক : সানজিদা জামান ইরা


নিউজ টি শেয়ার করুন..

সর্বশেষ খবর

আরো খবর