আজ বুধবার। ১৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ। ১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ। ৬ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি। এখন সময় রাত ৮:৫২

ওয়াসার এমডির যুক্তরাষ্ট্রে ১৪ বাড়ি!

ওয়াসার এমডির যুক্তরাষ্ট্রে ১৪ বাড়ি!
নিউজ টি শেয়ার করুন..

একটিদুটি নয়, ১৪ বাড়ি! দেশে নয়, সুদূর যুক্তরাষ্ট্রে। ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম খানযুক্তরাষ্ট্রের একাধিক শহরে কিনেছেন এসব বাড়ি। সব বাড়ির দাম টাকার অঙ্কে হাজার কোটি ছাড়াবে। দেশ থেকে অর্থ পাচার করে তিনি এসব বাড়ির মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বাড়ি কেনার অর্থের উৎস লেনদেন প্রক্রিয়ার তথ্য তালাশে নেমেছে ইন্টারপোলসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। বিপুল পরিমাণ অর্থে একের পর এক বাড়ি কেনার ঘটনায় দেশটির গোয়েন্দা তালিকায় সন্দেহভাজন হিসেবে তাকসিমের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে ১৪ বাড়ি কেনা এবং অর্থ পাচারকারী হিসেবে আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায় তাকসিম খানের নাম থাকা নিয়ে সম্প্রতি দুটি অভিযোগ জমা পড়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগে কিছু বাড়ির সুনির্দিষ্ট ঠিকানা, ছবি, কোন বাড়ি কখন, কত টাকায় কেনাতা উল্লেখ করা হয়েছে। তাকসিম সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ) ‘গভর্নমেন্ট ওয়াচ নোটিশ‘-এর একটি কপি অভিযোগের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

সিআইএসহ যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস (ডিওজে), ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই), দেশটির অন্যান্যসংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন (ইন্টারপোল) তাকসিম খানের বিষয়ে কাজ করছে বলে ওই নোটিশে উল্লেখ করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ১৩ বছরে ওয়াসার এমডির দায়িত্বে থেকে সীমাহীন অনিয়মদুর্নীতির টাকায় যুক্তরাষ্ট্রে একের পর এক বাড়ি কিনেছেন তাকসিম। তাঁর কিছু বাড়ির তথ্যপ্রমাণ এরই মধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে। বাকিগুলোর তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।

যুক্তরাষ্ট্রে তাকসিমের বাড়িগাড়িসহ অঢেল সম্পদ থাকলেও দেশে তাঁর কোনো সম্পত্তি নেই। গুলশান এর ৫৫ নম্বর সড়কে সরকারি বাসভবনে তিনি থাকেন না। তিনি থাকেন নয়াপল্টনে, শ্বশুরবাড়িতে।

যুক্তরাষ্ট্রে ১৪ বাড়ি: যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ির বিষয়ে সম্প্রতি দুদকে অভিযোগ জমা দেওয়া দুই ব্যক্তির একজন হলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি মো. সোহেল রানা। তিনি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য কমিশনের প্রতি অনুরোধ জানান।

দুদকে দেওয়া অভিযোগে বলা হয়, বিদেশি ঋণে করা ওয়াসার বড় বড় প্রকল্প থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে তাহুন্ডিসহ বিভিন্ন উপায়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করেছেন তাকসিম। পাচারের অর্থে দেশটির লস অ্যাঞ্জেলেস, নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন শহরের অভিজাত এলাকায় নগদ ডলারে ১৪টি বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, তাকসিম যুক্তরাষ্ট্রেরও নাগরিক। ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা অবস্থায় তিনি ঢাকা ওয়াসার এমডিহিসেবে যোগ দেন। তাঁর পরিবারের সব সদস্য যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। তাকসিমও প্রতিবছরে প্রায় তিন মাস যুক্তরাষ্ট্রে পরিবারের সঙ্গেঅবস্থান করেন। একসময়ের ভাড়াটিয়া তাকসিম লস অ্যাঞ্জেলেসের মতো অভিজাত শহরে বিলাসবহুল বাড়ি কেনেন। খবরওই শহরের বাঙালি পাড়ার মানুষের মুখে মুখে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিকত্ব পাওয়া এক প্রবাসী বাঙালি সমকালকে জানান, প্রবাসী বাঙালিদের অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে তাকসিমের কিছু বাড়ি দেখেছেন। বাড়িগুলো কোন শহরের কোন সড়কে, হোল্ডিং নম্বর কতসব তথ্যতাঁদের জানা।

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে ১৪ বাড়ির মধ্যে পাঁচটির তথ্য মিলেছে। ওই সব বাড়ির ঠিকানা ছবি সমকালের কাছে রয়েছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এক বাঙালি তাকসিমের ওই পাঁচ বাড়ির ঠিকানা সমকালকে জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে পরিবারপরিজন নিয়ে তাকসিম যে বাড়িতে থাকেন, সেটার ঠিকানা– 531, N Louise St. Unit 302, Glendale, CA 91206 এই বাড়ি তিনি কত টাকায় কিনেছেন, তা জানা যায়নি। ছাড়া 419, E Cypress Avenue Burbank, CA 91501- ঠিকানায় ২০১৭ সালে ১৯ লাখ ৭৬ হাজার ৮৮৯ ডলারে (সে সময়ের দরে আনুমানিক ১৭ কোটি টাকা) কেনা বাড়িটিতে রয়েছে ১৪টি বেডরুম ১৪টি বাথরুম। 518, Salem Street Glendale, CA 91203- এই ঠিকানায় ২০১৮ সালেরআগস্টে ৪৩ লাখ ৯৮ হাজার ৪৭৪ ডলারে (আনুমানিক ৩৭ কোটি টাকা) কেনা বাড়িটিতে রয়েছে ছয়টি বেডরুম ছয়টিবাথরুম। 350 E 30th Street New York, NY 10016-8386- এই ঠিকানায় ২০১৭ সালের জুলাইয়ে কোটি ২৯ লাখ ৮০হাজার ৬১৪ ডলারে (আনুমানিক ৫৩৫ কোটি টাকা) কেনা বাড়িটিতে রয়েছে ১০২টি বেডরুম ১০২টি বাথরুম। 3555 Kystone Avenue Los Angels, CA 90034- এই ঠিকানায় ২০১৯ সালের অক্টোবরে ৮২ লাখ ৭৫ হাজার ৯৮০ ডলারে(আনুমানিক ৭০ কোটি টাকা) কেনা বাড়িটিতে রয়েছে ১২টি বেডরুম ১২টি বাথরুম। বাড়িগুলো তাকসিন ভাড়া দিয়ে রেখেছেন।

আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায় নাম: বিপুল পরিমাণ অর্থের উৎস এবং লেনদেনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থা সন্দেহভাজন তালিকায় তাকসিমের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দেশটির লসঅ্যাঞ্জেলেস, নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন শহরে বিলাসবহুল বাড়ি কেনার ঘটনা খতিয়ে দেখছে। ১৪ বাড়ি কেনার বিপরীতে অর্থের জোগান কোথা থেকে এসেছেসেদিকেই নজর গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকে অভিযোগকারী যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিকত্ব পাওয়া ওই প্রবাসী বাঙালি জানান, তিনি ওয়াসায় ঠিকাদারি কাজ করতেন। সে সময় তিনি দেখেছেনকীভাবে তাকসিম ঢাকা ওয়াসার বড় বড় প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করে যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করেছেন। দুর্নীতির কারণে অনেক প্রকল্পের কার্যকারিতা ধ্বংস করা হয়েছে। এসব তথ্য প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনতে অনেক চেষ্টা করেও তিনি ব্যর্থ হন। প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনতেই তিনি তাকসিমের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ জমা দিয়েছেন।

দুদকের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ওয়াসার এমডি তাকসিম খানের নামে যুক্তরাষ্ট্রে ১৪ বাড়ি দেশটির একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায় সন্দেহ ভাজন হিসেবে তাঁর নাম রয়েছেএমন দুটি অভিযোগ দুদকে জমা পড়েছে।দুদক আইন অনুযায়ী অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায় নাম থাকার বিষয়ে জানতে সম্প্রতি ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম খানকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। একই বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য গত বৃহস্পতিবার এমডির ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) মাকসুদুর রহমানকে ফোন করে ওই দিনই সাক্ষাতের সময় চাওয়া হয়েছিল। এর জবাবে পিএ বলেন, ‘স্যারের সঙ্গে আজ কথা বলা যাবেনা। স্যার মিটিংয়ে ব্যস্ত আছেন।

সূত্র : সমকাল


নিউজ টি শেয়ার করুন..

সর্বশেষ খবর

আরো খবর