ব্যান্ডেজে মোড়ানো প্রতিবাদের অগ্নিশিখা

জীবন থেকে আগুন মুক্তি দিয়েছে নুসরাত কে। প্রশ্ন রেখে গেছে সকল বিবেকবান মানুষদের।
তনু-থেকে নুসরাত নীমতলি চুরিহাট্টা হয়ে এফ আর টাওয়ার সব আগুনই জীবন ধ্বংসকারী।

যারা নৈতিকতার বুলি উড়ায় তাদের হাতেই আজ আমার বোন ধর্ষিত।স্বপ্ন আর মুক্ত নিঃশ্বাসে ভরপুর এবং সাহসী নুসরাতরা আজ হারিয়ে যায় অনন্ত জীবনের পথে ,নৈতিকতার প্রতীক (শিক্ষক) নামে লম্পট যৌন সন্ত্রাসের লালসায় শিকার হয়ে।


নুসরাত তার খাতায় লিখেছিল, আমি লড়বো শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত। আমি প্রথমে যে ভুলটা করেছি, আত্মহত্যা করতে গিয়ে– সেই ভুলটা দ্বিতীয়বার করব না। মরে যাওয়া মানে তো হেরে যাওয়া। আমি মরবো না, আমি বাঁচব। আমি তাকে শাস্তি দেব, যে আমায় কষ্ট দিয়েছে। আমি তাকে এমন শাস্তি দেব যে, তাকে দেখে অন্যরা শিক্ষা নেবে। আমি তাকে কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি দেব ইনশাল্লাহ।


নুসরাত লড়ছে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত, প্রতিবাদের দ্রোহ হয়ে। আমরা দেখেছি ব্যান্ডেজে মোড়ানো নুসরাতের শরীরে প্রতিবাদের অগ্নিশিখা।দেখেছি নিথর দেহের বৃদ্ধাঙ্গুলির লাল টুকটুকে মেহেদীর সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলছে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘাপটি মেরে থাকা অমানুষগুলোর কুৎসিত বদনের প্রতিচ্ছবি।


শিশুদের মনটা স্বর্গীয় ফুলের মতোই সুন্দর” এডমন্ড ওয়ালির এই উক্তির মাধ্যবেই অনুধাবন করা যায় যে,শিশুরা নিষ্পাপ।কিন্তু এই সতেজ,কোমল,ও পবিত্র প্রাণগুলোও আজ নানা অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার এই পাষন্ড হায়েনাতের হাতে। মাদ্রাসা পালিয়ে ক্রিকেট খেলায় চান্দিনায় ৮ বছরের সায়মনকে কিভাবে এমন অমানুষের মতো নির্যাতন করল শিক্ষক নামের নরপিশাচ।


আমরা দেখেছি কিভাবে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর এক মাদ্রাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় ছাত্রের লাশ উদ্ধার হল।কিন্তু তাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।এই বিকৃতমনা অমানুষদের হাত থেকে কেউ রক্ষা পাচ্ছে না।
লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগে অর্জিত এই সোনার বাংলাদেশে আর কত তনু আর কত মিতু আর নুসরাতরা এভাবেই জীবন দেবে? আর কত আমার বোনেরা বিকৃতমনা নরপিশাচদের লালসার শিকার হবে।


আমি কখনো মাদ্রাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে নয়। দেশে হাজার হাজার মাদ্রাসা রয়েছে ।রয়েছে সেখানে স্বপ্নবান আদর্শবান অসংখ্য ভাল শিক্ষক।
তবে নুসরাত হত্যাকারীদের শাস্তি না হলে এমন ঘটনা যে ঘটতেই থাকবে, এই রাষ্ট্রকে তা বুঝতে হবে।প্রত্যেক ঘর থেকে প্রতিবাদের আগুন জ্বালাতে হবে।নুসরাতের খাতায় লেখা ওই কথাগুলোর মর্ম অনুধাবন করতে হবে।

আইসিইউতে নুসরাতের প্রাণশক্তি চিৎকার দিয়ে ওঠে প্রতিবাদের অগ্নিশিখা হয়ে। আর আমরা ??????? নুসরাতের এই অকাল প্রয়াণ আমাদের জন্য লজ্জার ঘৃণার । ভাল থেকো বোন ওপারে। সবশেষে..
“স্বাধীনতা তুমি ঝলসে মরা নুসরাতদের মুখ”

স্বাধীনতা তুমি পশু সিরাজদের পক্ষে আত্মসুখ।


লেখক : শফিক আহমেদ ভূইয়া
                   গণমাধ্যমকর্মী 

Leave a Comment