আজ বৃহস্পতিবার। ১৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ। ২রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ। ৭ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি। এখন সময় বিকাল ৪:৩৩

৪৩ বছরেও হয়নি ছাত্রদলের গঠনতন্ত্র

৪৩ বছরেও হয়নি ছাত্রদলের গঠনতন্ত্র
নিউজ টি শেয়ার করুন..

উৎপাদনমুখী শিক্ষা ব্যবস্থাস্লোগানকে সামনে রেখে ১৯৭৯ সালের জানুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদীছাত্রদল। আশির দশকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোর ছাত্র সংসদে উল্লেখযোগ্য অবস্থান ছিল এই ছাত্র সংগঠনটির। নব্বইয়ের আন্দোলন কিংবা এর পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন আন্দোলনসংগ্রামেও সামনের সারিতে দেখা গেছে ছাত্রদলকে। যদিও বর্তমান সময়ে আন্দোলনসংগ্রামে সংগঠনটির অতীত ভূমিকা দৃশ্যমান নয়। ৩০২ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির মধ্যে ২২ সহসভাপতি, ৮২যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ৬২ সহসাধারণ সম্পাদক এবং সহসাংগঠনিক সম্পাদকই ৩৮ জন। জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটির আকারও একইরকম।টাউসকমিটির কারণে অযোগ্য নিষ্ক্রিয়রাও নেতা হচ্ছেন। যে কারণে অতীত ঐহিত্য হারাচ্ছে বিএনপিরভ্যানগার্ডখ্যাত এই সহযোগী সংগঠনটি। এছাড়া ৪৩ বছরেও একটি পূর্ণাঙ্গ গঠনতন্ত্র করতে পারেনি। এখন পর্যন্তখসড়াগঠনতন্ত্র দিয়ে চলছে সংগঠনটির কার্যক্রম।

ছাত্রদলের সাবেক নেতারা জানান, ১৯৯৭৯৮ সালের কমিটির সময়খসড়াগঠনতন্ত্র প্রণয়ন করা হয়। তবে কমিটি গঠনেরক্ষেত্রে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হওয়ায় সাংগঠনিক গঠনতন্ত্রের স্থায়ীরূপ দেওয়া হয়নি। বিএনপির শীর্ষ মহলথেকেও কোনো চাপ ছিল না, আবার যারা দায়িত্বে এসেছেনতাদের কাছেও বিষয়টি উপেক্ষিত থেকেছে। যদিও ২০১৯ সালের ১৯সেপ্টেম্বর গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। একটিখসড়া চূড়ান্ত করা হয়। কিন্তু কমিটিতে তা এখনো পাশ হয়নি।এছাড়া ছাত্রদলকে দেখভালের জন্য বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক সহছাত্রবিষয়ক সম্পাদকের পদও রয়েছে। কিন্তু ছয় বছর ধরে সে পদও ফাঁকা আছে। এখন সংগঠনটির সাংগঠনিক অভিভাবক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সরাসরি নির্দেশে কমিটির নেতারা সারা দেশে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

সাবেক ছাত্রনেতারা আরও জানান, জিয়াউর রহমান যখন বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন, তখন ভবিষ্যতের নেতৃত্ব তৈরির জন্য একটি ছাত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম ১৬১ সদস্যের কমিটি গঠন করেন। এরপর পর্যন্ত আরও ২৩ বার নতুন কমিটি করা হয়। এর মধ্যে ছয়বার নির্বাচনের মাধ্যমে সরাসরি ভোটে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়।তবে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত সব কেন্দ্রীয় কমিটির আকার দুইশর মধ্যে রাখা হয়। কিন্তু এরপর কমিটির আকার বাড়তে থাকে। ২০০৯ সালে কেন্দ্রীয় কমিটি হয় ২৩৫ সদস্যের, ২০১২ সালে বেড়ে হয় ২৯১ সদস্যের, ২০১৪ সালে আরও বেড়ে হয়৭৩৬ সদেস্যর। যদিও ২০১৯ সালে আংশিক কমিটি ছিল ৬০ সদস্যের। সবশেষ চলতি বছরের এপ্রিলে ৩০২ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। যদিও এর মধ্যে বিবাহিতসহ নানা অভিযোগে ৩২ জন নেতার পদ স্থগিত রাখা হয়েছে।

ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি সর্বোচ্চ দেড়শবা দুইশর মধ্যে হওয়ার কথা। কিন্তু সেক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে এখন অনেক বড় কমিটি হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিভিন্ন নেতা বা ব্যক্তিকে সন্তুষ্ট করারও হয়তো প্রশ্ন থাকে। তবে কখনো কখনো জরুরি মুহূর্তে সভা করতে হলে একশ বা দেড়শ সদস্যের কমিটিহলে, ত্রিশ শতাংশ নেতার উপস্থিতিতে জরুরি সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। কিন্তু বড় কমিটি হলে তা হয়তো কষ্ট হবে। কমিটি বড় হলেঅনেকে সন্তুষ্ট হয়। কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অনেক জটিলতা দেখা দেয়।

ছাত্রদলের আরেক সাবেক সভাপতি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, অতীতের মতোই ছাত্রদলতাদের ভূমিকা পালন করছে। বিগত কমিটির মধ্যে যারা প্রতিটি কর্মসূচিতে থেকেছে এবং শিক্ষাঙ্গনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সংগ্রাম করেছে, সাধারণ ছাত্রসমাজের মধ্যে যারা আবির্ভূত হয়েছে তাদের দিয়েই কমিটি করা হয়েছে। অনেক যাচাইবাছাই করেই কমিটি করা হয়েছে। সুতরাং এখানে কোনো ধরনের ব্যত্যয় হয়নি।

ছাত্রদলের বর্তমান কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল বলেন, বিষয়টি আকার বা প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে না।সমাজ বাস্তবতার ওপর নির্ভর করে। যেহেতু দীর্ঘ সময় ধরে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা আন্দোলনসংগ্রাম করছে। সময়ে সবচেয়ে বেশি গুমখুননির্যাতনের শিকার হয়েছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। সেখানে একজন ছাত্রের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার প্রয়োজন জরুরি হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে সারা বাংলাদেশের নেতাদের সংগঠিত করে কেন্দ্রীয় সংসদের কমিটি হয়। ছাত্রদলের ১১৭টিসাংগঠনিক ইউনিট রয়েছে। সেক্ষেত্রে ৩০২ সদস্যের কমিটি অনেক বড় বলে আমরা মনে করি না।

গঠনতন্ত্র প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ছাত্রদলের খসড়া গঠনতন্ত্র রয়েছে। পূর্ণাঙ্গ গঠনতন্ত্রের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিঃসন্দেহে সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হয়। এখন খসড়া গঠনতন্ত্র দিয়ে আমরা কাজ করছি।

সাবেক ছাত্রনেতারা জানান, ছাত্রদলের অতীত ঐতিহ্য গৌরবোজ্জ্বল। ৯০এর আন্দোলনসহ গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। ডাকসুর ভিপিসহ দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোর ছাত্র সংসদে উল্লেখযোগ্য অবস্থান ছিল। সাবেক নেতারাএখনো জাতীয় পর্যায়েও ভূমিকা রাখছে।

৫০২ সদস্যবিশিষ্ট বিএনপির বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতিসাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে অনেকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব, সম্পাদক সহসম্পাদক পদ পেয়েছেন। এছাড়া বিএনপির অঙ্গ সহযোগী সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দলের নেতৃত্বেও রয়েছেন কয়েকজন সাবেক ছাত্রনেতা।

ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, জিয়াউর রহমান ছাত্রদল প্রতিষ্ঠাক রেছিলেন ছাত্রদের অধিকার আদায়ের জন্য। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক ছাত্রদল কাজ করে আসছে। ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কাজকরতে গেলে অনেক বাধাবিপত্তি আসে। অনেক চড়াইউতরাই পেরিয়ে ছাত্রদল তাদের ঐতিহ্যকে লালন করে আসছে। বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্রদল ভূমিকা পালন করে আসছে।

তিনি বলেন, এখন একটা ফ্যাসিবাদী সরকার দেশে তাদের শাসনকার্য চালিয়ে যাচ্ছে। যেখানে ছাত্ররা তাদের অধিকার থেকেবঞ্চিত, তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে পারে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যক্রম, সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে পারছেনা। এরপরও বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে দেশের ছাত্র সমাজের নেতৃত্ব ছাত্রদল দিচ্ছে। আগামী দিনে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াএবং তারেক রহমানের নেতৃত্বে একটি দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই মুহূর্ত পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছে। আমার বিশ্বাস ছাত্রদলের যে ঐতিহ্য লড়াই সংগ্রামের তারই ধারাবাহিকতায় এবারও জয়ী হবে।

ছাত্রদলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল মনে করেন, অতীতে ছাত্র রাজনীতিতে একটি সংস্কৃতি ছিল। যেখানেসভাসমাবেশ করার অধিকার ছিল, যা সংবিধানেও আছে। কিন্তু এখন কোনো কিছুই নেই। তারপরও জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব ফেলার মতো শক্তিসামর্থ্য ছাত্রদলের রয়েছে। অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে আমরা এখন সুসংগঠিত। কিন্তু যেহেতু আন্দোলন এখনো চূড়ান্ত পর্যায়ে যায়নি, ফলাফল আসেনি, সেক্ষেত্রে এর বিকাশ দৃশ্যমান নয়। কিন্তু ছাত্রদলের অতীতের মতোএখনো গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রাখার মতো সবকিছুই রয়েছে। কারণ বর্তমান ছাত্রদল যে ফ্যাসিস্টকে মোকাবিলা করছে, অতীতেরছাত্র রাজনীতির ইতিহাসে রকম মোকাবিলা করতে হয়নি। এখন অসংখ্য সহযোদ্ধা গুমখুন হওয়ার পরও রাজপথে তেজোতীপ্ত ভূমিকা পালন করছে ছাত্রদল। মৃত্যুর উপত্যকায় দাঁড়িয়ে, মুক্তির স্লোগান দেওয়া সংগঠন হচ্ছে ছাত্রদল। এটি অনেকতাৎপর্য বহন করে।

সূত্র : যুগান্তর


নিউজ টি শেয়ার করুন..

সর্বশেষ খবর

আরো খবর