২০১২–১৩ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগে ভর্তি হয়ে ক্লাস শুরু করেনছাত্রলীগ নেত্রী তিলোত্তমা শিকদার। ৯ বছর ১০ মাস পার হতে চললেও এখনো তিনি তৃতীয় বর্ষের গণ্ডি পেরোতে পারেননি, অথচ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্যও। এইটা যদি বিশ্ব সম্পদ্রায় জানতে পারে ঢাবিকে নোবেল দিবে।
২০১২–১৩ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগে ভর্তি হয়ে ক্লাস শুরু করেনছাত্রলীগ নেত্রী তিলোত্তমা শিকদার। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্যও। তবে ৯ বছর ১০ মাস পার হতে চললেওএখনো তিনি তৃতীয় বর্ষের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। যদিও তার বিভাগের সহপাঠীরা ২০১৮ সালে অনার্স শেষ করেছেন।
বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১২–১৩ সেশনের শিক্ষার্থীরাই ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের প্রথমব্যাচ। আর সেই ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন তিলোত্তমা শিকদার। এক বছরের সেশনজটসহ সেই ব্যাচের নিয়মিত অনার্স শেষ হয়২০১৮ সালে। আর তিলোত্তমা সেই ব্যাচের সঙ্গে সর্বশেষ ২০১৬ সালে তৃতীয় বর্ষের পঞ্চম সেমিস্টারের পরীক্ষা দিয়েছেন। কিন্তুপঞ্চম সেমিস্টারের রেজাল্ট শিটে তার নাম না আসায় তিনি ষষ্ট সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের একটি আদেশে বলা আছে, আট বছরের বেশি কোনো শিক্ষার্থী ঢাবির নিয়মিত ছাত্র হিসেবেঅধ্যয়ন করতে পারবে না। এই আট বছরের ভেতর ছয় বছরে স্নাতক ও দুই বছরের মধ্যে স্নাতকোত্তর করতে হবে। কিন্তু তিলোত্তমাএখনো অনার্সের গণ্ডিও পার হতে পারেননি।
এ বিষয়ে বিভাগের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, আমাদের বিভাগ সেমিস্টার সিস্টেম। দুই সেমিস্টার মিলিয়ে একটা ইয়ার।প্রতি ইয়ারের দুই সেমিস্টারের কোনো একটির যেকোনো কোর্সে ফেল হলেও যদি কারও গড় জিপিএ ২.২৫ এর উপরে হয় তাহলে সেপরবর্তী বর্ষে উত্তীর্ণ হতে পারবে। আর যে কোর্সগুলোতে সে ফেল করেছে পরবর্তী দুইটা ব্যাচের সঙ্গে সেই কোর্সগুলোরইমপ্রুভমেন্ট দিতে পারবে। আর যদি দুইটা ব্যাচ ওভার করে ফেলে তাহলে তাকে স্পেশাল পারমিশন নিয়ে সেই কোর্সের পরীক্ষাদিতে হবে।
এ কর্মকর্তা বলেন, তার (তিলোত্তমা) প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বর্ষের গড় জিপিএ ২.২৫ এর উপরে না আসায় তার নাম রেজাল্টশিটে আসেনি। তার প্রথম সেমিস্টারের ১টি, দ্বিতীয় সেমিস্টারের দুইটি আর চতুর্থ সেমিস্টারে একটি কোর্সে ফেল আছে। সুতরাংগড় জিপিএ ২.২৫ এর উপরে না আসার এটাও একটা কারণ হতে পারে। এখন তিনি যদি চতুর্থ বর্ষে উত্তীর্ণ হতে চান তাহলেতাকে পূর্বের বাকি থাকা চার কোর্সের ফলোন্নয়ন পরীক্ষা দিতে হবে। এসব পরীক্ষা দিয়ে সেসব পরীক্ষার রেজাল্ট মিলিয়ে যদিতার সিজিপিএ ২.২৫ এর উপরে হয় তাহলে তিনি চতুর্থ বর্ষে উত্তীর্ণ হতে পারবেন।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, এখন এই চার কোর্সের কোনো একটিতে যদি তিনি আবার ফেল করেও সিজিপিএ ২.২৫ এর উপরেচলে আসে তাহলে তিনি পরবর্তী বর্ষে উত্তীর্ণ হতে পারবেন কিন্তু সেই বর্ষের কোর্সসমূহের সাথে ফেল করা কোর্সের ফলোন্নয়নপরীক্ষা দিতে হবে। কারণ আট সেমিস্টারের সকল কোর্সের মধ্যে যদি একটা কোর্সেও কোন শিক্ষার্থী ফেল করেন সেই কোর্সে পাসনা করা অবধি কেউ অনার্স পাস করতে পারবে না।
বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে তৃতীয় বর্ষের রেজাল্ট শিটে যখন তিলোত্তমার নাম আসেনি সে সময় থেকে চলতি বছরেরঅক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত তিনি বাকি থাকা চার কোর্সের কোনো ফলোন্নয়ন পরীক্ষা দেননি এবং পরীক্ষার জন্য আবেদনওকরেননি।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলছেন, এখন কেউ যদি ফলোন্নয়নের জন্য আবেদন না করেন তাহলে তো আমরা কিছু করতে পারি না।শিক্ষার্থীই তো সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি পরীক্ষা দেবেন কী দেবেন না।
এর মধ্যে তিলোত্তমা শিকদার ২০১৯ সালে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে সদস্য পদে ডাকসু নির্বাচন করে নির্বাচিত হন। এরপর জুনমাসে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি হিসেবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান তাকে সিনেট সদস্য পদে মনোনয়ন দেন। ২০১৯এবং ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২ ও ৫৩তম সমাবর্তনে সিনেট সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া এইসময়ে অনুষ্ঠিত সিনেটের বিভিন্ন অধিবেশনে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
সর্বশেষ গত মাসের শেষ সপ্তাহে তিনি চার কোর্সের ফলোন্নয়ন পরীক্ষার জন্য স্পেশাল অনুমোদনের আবেদন করেন। সে সময়অনুষ্ঠিত হওয়া ডিনস কমিটির সভায় এটি অনুমোদন হয়।