আজ শনিবার। ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ। ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ। ৯ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি। এখন সময় সন্ধ্যা ৬:৫৫

রামধনপুরে মাটির তৈরি স্কুল ভবন

রামধনপুরে মাটির তৈরি স্কুল ভবন
নিউজ টি শেয়ার করুন..

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার রামধনপুর গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঁশের বেড়া ও ছন দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল একটি সরকারি স্কুল। দেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত ওই কাঠামোতেই চলছিল স্কুলটির কার্যক্রম।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে রামধনপুরের পাশের গ্রাম সূর্যনগরে স্থানান্তর করা হয় স্কুলভবন। সেখানে মাটি দিয়ে নির্মাণ করা হয় ভবনটি। সেই থেকে কালের সাক্ষী হয়ে আছে এ ভবন।
সদর দক্ষিণ উপজেলার ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী গ্রাম সূর্যনগর। ওই গ্রামেই মাটির তৈরি স্কুল ভবনটি জানান দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও জনপদের ইতিহাসের কথা।
রামধনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে দুটি পাকা ভবনে এখন পাঠদান হয়। ১৯৯৪ ও ২০০৬ সালে এ দালান দুটি তৈরি হয়। তার আগ পর্যন্ত স্কুল প্রাঙ্গণের পূর্ব পাশে মাটির ভবনেই লেখাপড়া হতো।
বর্তমানে ১০৭ শিক্ষার্থী ও ৫ শিক্ষক নিয়ে চলছে স্কুলের কার্যক্রম।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭১ সালে রামধনপুর গ্রামে স্কুলটি নির্মাণ হলেও জায়গার অভাবে পাশের সূর্যনগর গ্রামে ১৯৭৩ সালে মাটি দিয়ে সেটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। তবে নাম থেকে যায় রামধনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত আইনজীবী একেএম ফজলুল হক। ৪ বছর আগে বার্ধক্যজনিত কারণে তার মৃত্যু হয়।
চারদিকে এখন ইট-পাথরের দালানকোঠা তৈরি হচ্ছে। কোথাও এখন মাটির ঘর খুব একটা দেখা যায় না। এতসব আমূল পরিবর্তনের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা মাটির ভবনটি নিয়ে স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থীদের আবেগের শেষ নেই। অনেকেই মাটির দেয়াল হাতড়ে খুঁজে বেড়ান স্কুল জীবনের সব স্মৃতি।

রামধনপুর সরকারি বিদ্যালয়ের প্রথম দিকের শিক্ষার্থী আবদুস সাত্তার। গল্পে গল্পে তিনি টাইমস অফ বিডিকে বলেন, ‘স্বাধীনতার পরপরই স্কুলটি চালু হয়েছিল। আমরা তখন কেউ লুঙ্গি পড়ে, কেউ আবার পায়জামা, গেঞ্জি পরে স্কুলে যেতাম। মাস্টার মশাইরা পায়জামা, পাঞ্জাবি পরে আসত।
‘শিক্ষকদের হাতে মাটির চক, ডাস্টার থাকত। আমরা কাঠের সিলেটে লিখতাম। তখন টেবিল ছিল না। মাটিতে পাটি বিছিয়ে চলতে আমাদের লেখাপড়া।’

সূর্যনগর গ্রামের সন্তান শফিকুল ইসলাম। স্কুলটির স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় আমি দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলাম। স্কুলটির পাশেই ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প। স্কুলের সামনের রাস্তা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা যাওয়া-আসা করতেন। এখন স্কুলের ইটের দালান হয়েছে।
‘তখন স্কুল বলতে রামধনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল। সে সময় সবার ঘরবাড়ি ছিল মাটির। এখন মাটির ঘরগুলো বিলুপ্তপ্রায়। এখন এ অঞ্চলে এই স্কুল ভবন ছাড়া আর তেমন কোনো মাটির ঘর চোখে পড়ে না।’
করোনায় বন্ধ থাকলেও নিয়ম করে স্কুলে আসেন শিক্ষকরা। সহকারী শিক্ষক কাজী মাঈন উদ্দিন জানান, ঈদ বা অন্য ছুটিতে সাবেক শিক্ষার্থীদের অনেকে তাদের প্রিয় স্কুলটিত আসেন। স্মৃতির ঝাঁপি খুলে স্কুলের মাঠে বসে গল্প করেন।
শিক্ষক মাঈন গর্ব করে বলেন, ‘মাটির ভবনে লেখাপড়া করে অনেকে আজ প্রতিষ্ঠিত, যার মধ্যে মনিরুল ইসলাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসক। (সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে) কুমিল্লা জজ কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ আহমেদ, পুলিশ কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেনসহ আরও অনেকেই আছেন।’
সাবেক শিক্ষার্থীদের চাওয়া মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্কুল ভবনটি যেন পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে স্কুলের সভাপতি আবদুল হান্নান বলেন, ‘আমরাও চাই মাটির ভবনটি সংরক্ষণ করা হোক। তাতে আমাদের ছেলে-মেয়েরা জানবে আমাদের সময় কীভাবে মাটির ঘরে লেখাপড়া করতাম। মাটির ভবনটি সংরক্ষণে ইউএনও মহোদয় সদয় সম্মতি দিয়েছেন।’
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শুভাশিষ ঘোষ টাইমস অফ বিডিকে জানান, তিনি কয়েক দিন আগে স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে মাটির ভবনটি দেখতে পান। ঘরটি সংরক্ষণের চিন্তা আছে।

তিনি আরও জানান, মাটির দালান সংস্কার করে পাঠাগার কিংবা মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ঘর করা যায় কি না, তা নিয়ে পরিকল্পনা করছেন। সর্বোপরি বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) কামরুল হাসানের সঙ্গে কথা বলে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছেন।


নিউজ টি শেয়ার করুন..

সর্বশেষ খবর

আরো খবর