আজ শনিবার। ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ। ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ। ৯ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি। এখন সময় সন্ধ্যা ৬:১৪

বাংলাদেশে নির্বাচন: যেসব বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত ভিন্নমত

বাংলাদেশে নির্বাচন: যেসব বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত ভিন্নমত
নিউজ টি শেয়ার করুন..

বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত পরস্পর বিরোধী অবস্থানে চলে গেছে এবং নিয়ে এখন আর কোনো গোপনীয়তা নেই, প্রকাশ্যেই দুই দেশ তাদের অবস্থান ব্যক্ত করেছে। কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বাংলাদেশেরনির্বাচন নিয়ে ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচটি ভিন্নতার প্রকাশ্য রূপ পেয়েছে এবং এই পাঁচটি ভিন্নতার ব্যাপারে যদিসমঝোতা না হয়, তাহলে আগামী নির্বাচনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত পৃথক পৃথক অবস্থান গ্রহণ করবে। যে পাঁচটি বিষয়েদুইটি দেশের মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে

. অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন মানেই সকল দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, যে নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে না বললেও আকারইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছে, বিএনপিযদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করেসে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না। কিন্তু ব্যাপারে ভিন্নমত ভারতের। ভারত মনে করে, একটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলো কি করলো না, এটি তাদের নিজস্ব বিষয়। নির্বাচন একটি দেশের আভ্যন্তরীণবিষয়। যে সমস্ত দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, তাদের মধ্যে থেকে নির্বাচনটি যেন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হয়, সেটি প্রত্যাশিত।তবে এটি একটি দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। 

. নির্বাচনের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে সুস্পষ্টভাবে হস্তক্ষেপ করতে চায়। এই কারণেইগত ২৪ মে তারা নতুন ভিসা নীতি প্রয়োগ করেছে। তারা বলেছে,অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে বাধা দিলে, যারা বাধাদিবেতাদের এবং তাদের পরিবারদেরকে মার্কিন ভিসা দেওয়া হবে না। এটি সুস্পষ্টভাবে একটি হুমকি। অন্যদিকে ভারত বলছে, একটি দেশের নির্বাচন সে দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। নির্বাচন কিভাবে হবে না হবে, সেটি সেই দেশের জনগণ ঠিক করবে।কাজেই আগাম হুমকি দিয়ে এই নির্বাচনকে প্রভাবিত করা অর্থহীন। 

. প্রাক নির্বাচনী অবস্থা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন থেকেই বাংলাদেশের নির্বাচন এবং সুশাসন নিয়ে তদারকি করছে। তারা দেখছে, বিরোধী দলকে দমন করা হয় কি না, মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে কি নাইত্যাদি। কিন্তু ভারতের অবস্থান তা নয়। তারা মনেকরছে,নির্বাচন নিয়ে পর্যবেক্ষণ তখনই শুরু হবে, যখন আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করা হবে এবং নির্বাচননিয়ে অংশীজন তৎপর হবে। আগে থেকেই একটি দেশের নির্বাচন কিভাবে হবেতা নিয়ে মতামত দেওয়া বা নির্দেশনা দেওয়া সেদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের শামিল। সেটি ভারত কখনোই চায় না। 

. ধর্মীয় মৌলবাদের ব্যাপারে আগ্রহ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার সর্বশেষ মানবাধিকার রিপোর্টে জামায়াতের ব্যাপারে নমনীয় আচরণদেখিয়েছে। জামায়াতকে রাজনৈতিক কার্যকলাপ করতে দেওয়া হচ্ছে নাএমন অভিযোগও উত্থাপন করেছে। গত রাতে সরকারজামায়াতকে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে। আজ ইঞ্জনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু ভারতেরদৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। ভারত মনে করে, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূল বিষয় হলো অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি। অসাম্প্রদায়িকচেতনাকে লালন করাই বাংলাদেশের গণতন্ত্রের উপজীব্য। তাই মৌলবাদী, উগ্র, ধর্মান্ধ, সাম্প্রদায়িক শক্তি, যুদ্ধাপরাধীদেরবাংলাদেশে রাজনীতি করা মানে গণতন্ত্র নয়। ভারত মনে করে, সুস্থ ধারার রাজনীতিকে বিকশিত করতে গেলে সাম্প্রদায়িকশক্তিকে প্রতিহত করতে হবে।

. শর্তযুক্ত গণতন্ত্র: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তারা শর্ত দিয়ে গণতন্ত্রকে ঠিকঠাক করতেচায়। তারা মনে করে, স্যাংশন দিয়ে, ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বা আরও কঠিন পদক্ষেপ নিয়ে গণতন্ত্রকে শুদ্ধ করতে হবে। কিন্তুবিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশটি ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করে। তারা মনে করে, গণতন্ত্র একটি সতত প্রবাহ নদীরমতো। নানা রকম ত্রুটিবিচ্যুতি, ঘাতপ্রতিঘাতের মধ্য দিয়েই গণতন্ত্র এগিয়ে যায়। 

আর এই মৌলিক পার্থক্যের জায়গাগুলোতে যদি শেষ পর্যন্ত মীমাংসিত না হয়, তাহলে আগামী নির্বাচনে ভারত এবং মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রের ভিন্নমতের প্রতিফলন দেখা যাবে নির্বাচনেও। 

নিউজ টি শেয়ার করুন..

সর্বশেষ খবর

আরো খবর