ড্রেজার বসাতে গিয়ে জনরোষের শিকার হয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু। এলাকাবাসীর অনিচ্ছা থাকা সত্তেও ড্রেজার বসাতে জোর করায় বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে উত্তেজিত এলাকাবাসী এমপি বাবু ও তার লোকজনকে ধাওয়া দেয়। এ সময় নজরুল ইসলাম বাবুর সাথে থাকা কয়েকজনকে মারধরের ঘটনাও ঘটেছেন বলে জানা গেছে।আড়াইহাজার খাগকান্দা ইউনিয়নের কাকাইমোড়া ও শান্তিরবাজার এলাকায় শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে এই ঘটনা ঘটে।
কাকাইমোড়া এলাকার বাসিন্দারা জানান, ড্রেজারে বালু উত্তোলন শুরু হলে গ্রামের পর গ্রাম নিশ্চিহ্ন হওয়ার ঘটনা নতুন নয়।কিন্তু গ্রামবাসীর মতামতকে গ্রাহ্য না করে খাগকান্দা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের কাকাইমোড়া আজগর চেয়ারম্যানের বাড়ির সাথেভাই ভাই রাইস মিলের পাশ দিয়ে বালু উত্তোলনের জন্য ড্রেজার বসানো হয়। এলাকাবাসী এই ড্রেজার বসানোর শুরু থেকেইআপত্তি তুলে আসছিল এবং ড্রেজার বসাতে বাধা দিচ্ছিল।
এইখানে ড্রেজার বসিয়ে পাশে সোনারগাঁয়ের বারদী ইউনিয়নের লায়ন বাবুলের এলাকায় বালু নেয়ার ব্যবস্থা করেছিল তারা।এলাকাবাসীর বাধার মুখে এখান থেকে বালু উত্তোলন করতে না পারায় তারা নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের এমপি নজরুল ইসলাম বাবুকে খবর দেয়। শুক্রবার মাগরিবের সামান্য আগে খাগকান্দা ইউনিয়নের ড্রেজার বসানোর জায়গায় আসেন এমপি বাবু।তিনি এলাকাবাসীর পক্ষে কথা বলে উল্টো ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলনের পক্ষে মত দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে যায় এলাকাবাসী।
কিন্তু এরপরেও এলাকাবাসীর মধ্যে মনির, মঞ্জুসহ অন্যান্যদের ড্রেজার বসাতে দিতে গালিগালাজ শুরু করে। এরপরেই এলাকার জুলহাস মেম্বার, লোকমান মেম্বারসহ অন্যান্যদের সাথেও বাজে ব্যবহার করেন তিনি। এছাড়া স্থানীয়রা মনে করে বিল্লাল হোসেননামে এক ব্যক্তিকে মারধরও করেন তিনি। তখন বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ের এলাকার ৫/৭’শ লোক ধাওয়া দেয় এমপি বাবুকে।
এ সময় এমপি সাথে থাকা লোকজনদের কেও মারধর করে এলাকাবাসী। উত্তেজিত জনতার রোষানলের মুখে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জয়নালের বাড়িতে আশ্রয় নেন এমপি বাবু। পরবর্তীতে সেখানেও এলাকাবাসীর উত্তেজনা দেখা দিলে তিনি স্থানীয় শান্তিরবাজার কেন্দ্রীয় মসজিদের গিয়ে আশ্রয় নেন। পরবর্তীতে পরিস্থিতি শান্ত হলে তিনি এশার নামাজের পরপর ওইএলাকা ত্যাগ করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা বাবুল জানান, এই এলাকায় ড্রেজার বসালে গ্রাম বাসীর কি কি ক্ষতি হবে তা এলাকার লোকজনএমপি সাহেবকে বুঝানোর চেষ্টা করেছেন। তিনি গ্রাম বাসীর পক্ষে কথা না বলে উল্টো ড্রেজার বসাতেই মরিয়া হয়ে উঠেছে।এলাকার মুরুব্বিদের গালিগালাজ করে ড্রেজার বসাতে চাপ প্রয়োগ করেছেন। পরে মানুষজন উত্তেজিত হয়ে পড়লে তিনি এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন।
খাগকান্দা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার জুলহাস বলেন, নদী খননের জন্য সম্প্রতি নাকি সিডিউল হয়েছে। সিডিউল হয়ে থাকলে তো নদীর শুরু (তিনগাঙের মুখ বটলতলা) থেকে কেটে কেটে শেষ পর্যন্ত (গোপালদী বাজার) পর্যন্ত যাওয়ার কথা। কিন্তু আমাদের গ্রামে এসে পাশের বারদী ইউনিয়নের বাবুল চেয়ারম্যান, জজ মিয়া মেম্বার, চেঙ্গাকান্দি ইউনিয়নের ইসমাইল মেম্বারসহবেশ ক’জন ড্রেজার বসায়। তারা এখান থেকে বালু কেটে পাশের বাবুল চেয়ারম্যানের ১০ বিঘা জমিতে পাইপ টেনে বোঝাই করার প্ল্যান করে।
আর এই কাজের উদ্বোধন গতকাল এমপি সাহেবকে দিয়ে করাতে চেয়েছিল। এলাকাবাসী বলেছে, এভাবে মাঝখান থেকে তোবালু কাটার কথা না। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যেভাবে বালু কাটা হবে আমাদের এখান থেকেও ওই নিয়মেই হবে। এটা নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হয়। কালকের ঘটনার পর আজ (শনিবার) এমপি সাহেব আমাদের গ্রামবাসীকে তার সাথে দেখা করতে ডেকেছেন। আমাদের একটাই কথা, গ্রামের ফসলি জমি, বাড়ি-ঘরের ক্ষতি করে এইভাবে বালু কাটা যাবে না।
এ ব্যাপারে জানতে বারদী ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান লায়ন বাবুলের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি মুঠোফোনে কল রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুকে ফোন দিলে তার পিএস ফোন রিসিভ করে জানান, তিনি মিটিংয়ে আছেন।
শেষ খবর পর্যন্ত শনিবার এলাকাবাসীর সাথে নজরুল ইসলাম বাবু বৈঠক ডাকলেও এলাকাবাসী তাতে সাড়া দেননি। তারাবলছেন, গ্রামের মানুষের সহায় সম্বলকে ঝুঁকির মুখে ফেলে কোনক্রমেই ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা যাবে না। রাতে বালুউঠানো হতে পারে মনে করে রাতে জেগে পাহারা দিচ্ছেন এলাকাবাসী। এদিকে উত্তেজনা তৈরি হওয়ায় এলাকায় পুলিশ টহলদিচ্ছে।