ধর্ষণ ব্যাধি, প্রতিকারে প্রয়োজন মানসিকতার উৎকর্ষ

Rape

বাংলাদেশে দিন দিন যেন বেড়েই চলেছে ধর্ষণের সংখ্যা। সবথেকে বড় ধাক্কার বিষয়, সেটা হলো কোথাও যেন নিরাপদ স্বত্তা নেই মেয়েদের জন্য।  কখনো মাদ্রাসার শিক্ষক, পাড়া প্রতিবেশী, বখাটে যুবক, কিশোর, শিশু,  বৃদ্ধ সবাই যেন আজকাল চিহ্নিত ধর্ষক।

প্রতিদিন খবরের কাগজে কিংবা টিভির পর্দায় এরকম যতগুলো খবর আসে সেটাই কি এই পৈশাচিক কার্যক্রমের সঠিক সংখ্যা, নাকি পর্দার আড়ালে চাপা পড়ে আছে আরো হাজার হাজর বোবা কষ্টের আর্তনাদ?  হ্যাঁ,  এমন অনেক গল্পই আছে অপ্রকাশিত।

মিডিয়ার চকচকে লেখনী, আর বিচারবিভাগের অমনযোগী স্বত্তা ব্যার্থতার কালপুরুষে যখন রুপ নেয় তখন প্রশ্নবিদ্ধ হয় সমগ্র জাতিস্বত্তা। আমাদের সমাজে ধর্ষক শুধু এক ধরনের হয় না, বরং ধর্ষকের বেশকিছু প্রকারভেদ বিদ্যমান।

একদল ধর্ষক হলো বখাটে, এরা সমাজ থেকে বিচ্যুত এবং উগ্র মানসিকতা সম্পন্ন। বখাটে স্বত্তা থেকে তাদের মাঝে নেই যেমন কোন সংশয়, ঠিক তেমনি ধর্ষণের যে একটা শাস্তি বিদ্যামান, তার দিকে ভ্রূক্ষেপটুকুও রাখার সময় নেই। গত কয়েকদিন আগে নোয়াখালির বেগমগন্জে ঘটে যাওয়া অমানবিক কর্মকান্ড তার উৎকৃষ্ট উদাহরন।

এবার আসি আরেকধরনের ধর্ষক নিয়ে।  তারা আসলে পাশবিকতা চালায় না, কিংবা এধরনের কাজও করে না। নিজের স্ত্রীর সঙ্গে জোরপূর্বক সম্পর্ক স্থাপন করার মানসিকতা রাখে। এদের কাছে নারীর সম্মতি জিনিসটা তেমন কোন গুরুত্বই রাখে না।  আর এটাকে বলে “Maritual Rape” বা বৈবাহিক সম্পর্কে ধর্ষণ। এদের কথা কেউ বলে না।

কারন এই মানসিকতা সমাজের যে, বিবাহিত স্ত্রী স্বামীর সকল আচরন মেনে নিতে বাধ্য। আর এভাবেই শত শত ধর্ষিত নারী বিয়ের পরেও চোখের জল ফেলে। ভালোর দিক শুধু একটাই এদের কেউ ধর্ষিতা বলে না।  কিন্তু এ নারীরা নিজেদের কে মনে মনে তাই মনে করে।

আরও এক ধরনের ধর্ষক আছে,  যাদের পরিমানটা আমাদের সমাজে অনেক দৃশ্যমান। এ ধরনের ধর্ষক প্রেমের মিথ্যে অভিনয় করে,  শত শত নারীর সাথে আবেগের সম্পর্ক তৈরি করে এবং গন্তব্য হয় শারিরিক সম্পর্ক স্থাপন পর্যন্ত। তারপর শেষ, নতুন কোন শিকারের সন্ধানে তারা মত্ত হয়,  পেয়েও যায়।

কারন, এ সমাজে মেয়েরাও আবেগ কিংবা আধুনিকতার বসে নিজের সর্বস্বটুকু দিয়ে দেয়।  সমস্যাটা তখনই হয় যখন একটা মেয়ে দেখে যাকে নিয়ে আবেগের সম্পর্ক ছিলো তার কাছে নেহাৎ শরীরটাই লোভনীয় বস্তু, এবং সে শুধুই ব্যবহার হয়েছে তখন তার মাঝে অনুশোচনা জন্ম নেয়,  সম্মতি থাকলেও তখন সে নিজেকে ধর্ষিতা বলে মনে করে। আর সেই পুরুষ,.?  দিব্বি ঘুরে ফেরে, ব্যবহার করা নারীদের মনে সে একজন জারজ, একজন ধর্ষক। কিন্তু বাইরের পৃথিবীতে?

বাইরের পৃথিবীতে বর্বরোচিত পর্দার সামনের ধর্ষণগুলো নিয়ে সেও মন্তব্য করে, ধর্ষক কে গালি দেয়,  মেয়েদেরকে মা, বোন,  দেবী হিসেবে উপস্থাপন করে।  কোথায় ছিলো তার সেই পরিবার স্বত্তা,  যখন প্রেমের নামে শরীরের নেশায় উন্মত্ত যুবক কুকুরের মত গন্ধ শুঁকে শুঁকে বিকৃত নতুন যৌণতার ফাঁদ খুঁজে বেড়াতো?  সেই মেয়েগুলোও তো মা, বোন, দেবী হতে পারতো।  এই সব ধরনের ধর্ষককে বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করানোর সামর্থ সমাজের নেই।

আর তাইতো ধর্ষক নয়, বরং ধর্ষণ স্বত্তার বিদায় এই সমাজে খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেকটি বিবাহের সম্পর্কে, কিংবা প্রেমে জড়ানোর প্রাক্কালে প্রয়োজন দ্বিপাক্ষিক মানুষিকতার উৎকর্ষ। প্রয়োজনে সেই মানসিকতা রোধে, তাদের প্রত্যেককে আনা হোক বিচারের আওতায়, দেয়া হোক ধর্ষিতার থেকেও তিনগুলো লোক সম্মুখে লজ্জা। আর বিকৃত ধর্ষকদের দেয়া হোক বিকৃত বিচার। যাতে করে সবার মানসিকতার একটু হলেও উৎকর্ষ হয়।

প্রত্যেকটি ধর্ষণ এর চিন্তার আগে যেন তাদের মাথায় আসে পরিনাম এর এক ভয়াবহ চিত্র। আর সেই মানসিক ভাবনাই পারে ধর্ষণের সংখ্যাটা কমাতে। মানসিকতার উৎকর্ষেই আমাদের নারীরা মা, বোন, দেবী রুপে চলার সাহস পাবে,  বাঁচার সাহস পাবে।

ধর্ষণ ব্যাধি আমাদের সমাজ থেকে চিরতরে নিপাত যাক। প্রত্যেকটি ঘরে ঘরে বেড়ে উঠুক প্রতিরোধী মানসিকতা। তবেই সম্ভব একটি সুস্থ স্বাভাবিক পৃথিবীতে বাস করা, যেখানে ধর্ষিতার আর্তনাদ কিংবা বোবাকান্না কোনটারই সাক্ষী এই সমাজকে হতে হয় না।

 

  • মোঃ নেয়ামুল হাসান (শান্ত)

         শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

Leave a Comment