আজ শুক্রবার। ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ। ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ। ৮ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি। এখন সময় সকাল ৬:৩৪

কেবলমাত্র প্রবল ইচ্ছাশক্তিই পারে কাউকে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে

কেবলমাত্র প্রবল ইচ্ছাশক্তিই পারে কাউকে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে
নিউজ টি শেয়ার করুন..

পারিবারিক বাধা আর সমাজের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বাংলাদেশের শিক্ষিত তরুণদের একটি বিশাল অংশ তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলছে। পোশাক, খাদ্য, মৎস্য, চামড়া, আইটি আর পোল্ট্রিসহ সব ধরণের কাজেই অবদান রাখতে শুরু করেছে এসব তরুণেরা। তবে তাদের এই পথচলাটা মোটেও সহজ নয়। পদে পদে তাদের বাঁধার সম্মুখিন হতে হচ্ছে। তারপরেও এসব তরুণ উদ্যোক্তারা এক সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেন। দ্যা টাইমস অফ বাংলাদেশ দেয়া সাক্ষাতকারে এমনিই এক তরুণ জানিয়েছেন তার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প।

আমাদের আজকের অতিথি মোঃ খায়রুল হুদা ওহী ,ম্যানেজিং ডিরেক্টর, লেদার জোন বিডি । সাক্ষাতকার নিয়েছেন আসিফুল হক জয় ।

প্রতিবেদকঃ
“সফল যারা, কেমন তারা” এর আজকের পর্বে দ্যা টাইমস অফ বাংলাদেশ পরিবারের পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম ।
অতিথি: আপনাকেও ধন্যবাদ আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য।


প্রতিবেদক: প্রথমেই জানতে চাইবো আপনার শিক্ষা জীবনের শুরুর দিকটার কথা ।


অতিথি: আসলেই আমার ছেলেবেলা কেটেছে আমার গ্রামের বাড়ি কেন্দুয়া উপজেলার চিরাং ইউনিয়নের চিরাং এ নিজ গ্রামের বাড়িতে,ওখানকার চিরাং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই আমার প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি। তারপর বড় ভাইয়ের চাকরির সুবাদে টাঙ্গাইল পুলিশ লাইন্স স্কুলে মাধ্যমিক শিক্ষা এবং কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী গুরুদয়াল কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে, চান্স পেয়ে ভর্তি হই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড ইন্সটিটিউট এ। সেখান থেকেই ব্যাবসায় হাতেখড়ি।


প্রতিবেদকঃ আচ্ছা ব্যাবসার শুরুটা কীভাবে?
অতিথি: আসলেই শুরুতেই ব্যাবসায় মাইন্ড সেট আপ করা কঠিন।মূলত এডুকেশনাল ব্যাকগ্রাউন্ড থেকেই আসা।আমার কাছে মনে হয়েছে জবের চেয়ে বিজনেসে সুযোগ বেশী,তাই আসা।


প্রতিবেদকঃকার প্রেরনায় ব্যাবসায় আসা?


অতিথিঃ আসলেই আমাদের রিইউনিয়ন বা নানা অনুষ্ঠানে আমাদের হলের সাবেক বড়ভাইদের মুখে তাদের এ খাতে সফলতার কথা শোনেই আসলে প্রেরনা পাওয়া । তাছাড়া আমার তিন বন্ধু বাহার,রণি ও মহসীন আমাকে উৎসাহ দিয়েছে সার্বক্ষণিক আমার পাশে থেকে ও আমাকে সহযোগিতা করে।


প্রতিবেদকঃতা আপনাদের চারজনের ব্যাবসার মূলধন কি?


অতিথিঃ আসলে মূলধন আমার টিউশনির জমানো খরচ বাদে থাকা অতিরিক্ত টাকা।


প্রতিবেদকঃ আচ্ছা আপনাদের ফ্যাক্টরির পণ্য কোথায় যায় বিদেশেও কি রপ্তানি হয়?


অতিথিঃদেশে আমাদের পণ্যের সবচেয়ে বড় একটা অংশ নেয় দেশের স্বনামধন্য ‘আরএফএল’ কোম্পানি। এছাড়াও দেশের বাইরে ইতালি,জাপান ও ইউএসএ তে আমাদের পণ্য রপ্তানি হয়।


প্রতিবেদকঃ যদি কেউ এ লেদার সেক্টরে আসতে চায় তার জন্য আপনার পরামর্শ কি!


অতিথিঃ আসলে লেদার সেক্টরও প্রতিযোগিতামূলক,তাই লাভবান হওয়াটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার,এখানে ধৈর্যই মূলমন্ত্র। ধৈর্য ধরে পড়ে থাকতে পারলে লাভ সুনিশ্চিত।


প্রতিবেদকঃ দেশের কর্মক্ষম শিক্ষিত বেকারদের জন্য আপনার মতো উদ্যোক্তাদের মেসেজ টা কি?


অতিথিঃ আসলে চাকরির জন্য দৌঁড়িয়ে তীব্র প্রতিযোগিতামূলক সোনার হরিণ চাকরি না পেয়ে যারা হতাশ হোন তাদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই।পড়াশোনা চলা অবস্থায়ই কোন কাজকে ছোট মনে না করে, চাকরির পেছনে না দৌঁড়িয়ে এ পেশায় আসার এবং স্বাবলম্বী হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।আমাদের এ তরুণদের চিন্তাগুলো গ্লোবালি করা উচিত,বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে তাদের সুনির্দিষ্ট পেশাগত জ্ঞান অর্জন করা জরুরি বলে আমি মনে করি।আর এ পেশায় এসে হতাশ হওয়ার কিছু নেই, লেগে থাকলে কর্মসংস্থান হয়ে যাবে এবং সুফলও খুব তাড়াতাড়িই পাবেন বলে আশা করি।

প্রতিবেদকঃ আচ্ছা অনেকেই বলেন এই পেশায় ঝুঁকি বেশী, ঝুঁকি মোকাবেলায় করণীয় কি?


অতিথিঃ এক্ষেত্রে আমি বলবো অর্ডার কম নেওয়ার কথা।রিস্ক জোনের ভিতর অর্ডার নেওয়া।

প্রতিবেদকঃ এ পেশায় পরিপূর্ণ অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা আসতে কতো বছর সময় লাগতে পারে?


অতিথি : নিষ্ঠার সহিত লেগে থাকলে পাঁচ বছর।


প্রতিবেদকঃ কিছুদিন আগে ভারতে অনুষ্ঠিতব্য ‘International leather fair’ এ আপনার কোম্পানির প্রতিনিধি দল গিয়েছিলেন, এ বিষয়ে যদি কিছু বলেন ।


অতিথি : আসলে সত্যি কথা বলতে ভারত সহ অন্যান্য দেশ আমাদের চেয়ে ‘Technologically’ অনেক এগিয়ে।’ Market demand’ এর ব্যাপারে তারা সম্পূর্ণ সচেতন। ‘Global trade’ সম্পর্কেও তারা দারুণ ধারণা রাখে।ওখানে গিয়ে এক স্টলে দেখলাম কোন জ্যাকেট আপনাকে পড়লে কেমন লাগে তা জানার জন্য জামা চেঞ্জ করে জ্যাকেট পড়তে হয় না,পায়ে জুতার সাইজ কতো,কোন জুতা সাটবে তা জুতা খুলে হেঁটে চেক করতে হয় না,নির্দিষ্ট জোনে আসলে জায়ান্ট স্কিনে তা এমনিতেই ভেসে ওঠে,
আলাদা trial এর দরকার পড়ে না।


প্রতিবেদকঃ আচ্ছা ভবিষ্যতে এলাকায় এই শিল্প কে নিয়ে যাওয়ার কোন ইচ্ছা আছে কি?


অতিথি : জি, যে এলাকায় বড় হয়েছি ছোটবেলা থেকে, সে এলাকার মানুষের জন্য কিছু করার একটা দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে আমি আমার শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে এলাকায়ও প্রসার ঘটাতে চাই যাতে করে বৃহৎ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী হয় এবং এর সুফল আমার এলাকার,আমার গ্রামের মানুষ ভোগ করতে পারে । তার পাশাপাশি এলাকায় একটা এতিমখানা এবং একইসাথে বৃদ্ধাশ্রম গড়ে তুলতে চাই । যাতে করে এতিম শিশু যাদের বাবা মা নেই তারা এতিমখানাতেও মাতৃ ও পিতৃস্নেহে বড় হয়। আর যাদের কুলাঙ্গার সন্তানেরা তাদের বাবা মাকে নিজ দায়িত্ববোধের কথা ভুলে গিয়ে এই বৃদ্ধাশ্রমে রেখে গিয়েছে তারা যেনো ঐ কু-সন্তানদের জন্য চোখের পানি না ফেলে ঐ বাবা মা হারা এতিম শিশুদের মাতৃস্নেহের পরশে বড়ো করে।


প্রতিবেদকঃ আপনার সকল ইচ্ছা পূরণ হোক।আপনার মূল্যবান সময় থেকে কষ্ট করে আমাদেরকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।


অতিথি : আপনাদেরকেও ধন্যবাদ ।

প্রসঙ্গত সীমিত সম্পদ দিয়েও যে ঘনবসতিপূর্ণ একটা ছোট্ট দেশে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখা যায়, বাংলাদেশ ইতিমধ্যে তা প্রমাণ করেছে। জাতিসংঘের দেওয়া টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) পূরণে একটা বড় ভূমিকা রাখতে পারেন তরুণ উদ্যোক্তারা। বাংলাদেশকে বিশ্ব মানচিত্রে সম্মানের সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করতে হলে তরুণ উদ্যোক্তাদের যথাযথ ভূমিকাই তো এখন সময়ের দাবি।

সামাজিক উদ্যোক্তা আন্দোলন থেকে শুরু করে লাভজনক বা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্ভাবনাময় তরুণ উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। একটু ভালোমতো লক্ষ করলেই দেখা যায়, এসডিজির ১৬৯টি টার্গেট অর্থনীতির সব ক্ষেত্রজুড়ে আছে। অর্থাৎ এই টার্গেট পূরণই নতুন নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারে।


নিউজ টি শেয়ার করুন..

সর্বশেষ খবর

আরো খবর