বিরোধী ছাত্র সংগঠন নিয়ে গঠন হচ্ছে ছাত্রঐক্য

সরকারবিরোধী ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন নিয়ে গঠন করা হচ্ছে ছাত্রঐক্য। বিএনপির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতৃত্বে ১৯ সংগঠন রোববার বৈঠক করেছে। এতে প্রাথমিকভাবে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রঐক্য’সহ কয়েকটি নাম প্রস্তাব এসেছে। সেপ্টেম্বরে কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা রয়েছে ছাত্র সংগঠনগুলোর। দাবি আদায়ে ঐক্যবদ্ধভাবে নাকি যুগপৎ ধারায় মাঠে নামবে, তা আগামী বৈঠকে চূড়ান্ত হবে। ঐক্যের পরিধি বাড়াতে ছাত্র ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের সঙ্গেও আলাপ চলছে। এ দিনের বৈঠকে সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিষয়ে সব সংগঠন একমত হয়। সভার শুরুতে শিক্ষার্থীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট আরও নানা ইস্যু নিয়ে অলোচনা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

রোববার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত ছাত্র সংগঠনগুলো বৈঠক করে। এর মধ্যে অধিকাংশই সরকার পতনের একদফা দাবিতে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর ছাত্র সংগঠন। এর বাইরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র আন্দোলন এবং আন্দালিব রহমান পার্থ নেতৃত্বাধীন দলের ছাত্র সংগঠনও ঐক্যে রয়েছে। তবে ইসলামী ছাত্রশিবিরকে এ ছাত্রঐক্যে নেওয়া হবে না বলে সংশ্লিষ্ট নেতারা জানিয়েছেন। তারা মনে করেন, লক্ষ্য যেহেতু সরকার পতনের, তাই ইসলামী ছাত্রশিবির ঐক্যের বাইরে পৃথকভাবে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকতে পারে।

১৯ ছাত্র সংগঠনের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ছাত্র মিশন, নাগরিক ছাত্র ঐক্য, জাতীয় ছাত্র সমাজ (জাতীয় পার্টি, কাজী জাফর), ভাসানী ছাত্র পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জেএসডি), বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস, ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ, খেলাফত ছাত্র মজলিস, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাগপা), ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ জাতীয় ছাত্র সমাজ (বিজেপি, পার্থ), বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র সমাজ, গণতান্ত্রিক ছাত্রদল (এলডিপি) ও ছাত্র ফোরাম।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাঈফ মাহমুদ জুয়েল বলেন, ‘দেশ ও জাতির বর্তমান সংকট নিরসনের জন্য ছাত্র সংগঠনগুলো ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। সে লক্ষ্যে ক্রিয়াশীল সব ছাত্র সংগঠনকে নিয়ে আমরা তাদের মতামতের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ কিংবা যুগপৎ ধারায় আন্দোলনের চেষ্টা করব। প্রাথমিকভাবে ১৯ ছাত্র সংগঠনের শীর্ষ নেতারা বৈঠক করেছি। এতে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে সবাই একমত হয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘ক্রিয়াশীল অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার আন্দোলনের বিষয়ে তারাও ঐকমত্য আছেন। কিন্তু প্ল্যাটফরমটা ঐক্যবদ্ধভাবে নাকি যে যার জায়গা থেকে করবে, তা এখনো নির্ধারণ হয়নি। কিন্তু সবাই একমত ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য ছাত্র সংগঠনের দায় রয়েছে কাজ করার।

ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, ‘সব ছাত্র সংগঠন মনে করে, ফ্যাসিবাদী সরকারের পদত্যাগ এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। এর সঙ্গে আনুষঙ্গিক আরও কিছু দাবি আছে। যেমন: বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সব ছাত্র সংগঠনের রাজনৈতিক সহাবস্থান, ছাত্র সংসদ নির্বাচন, গণরুমে নির্যাতনের প্রতিবাদ এবং গত দশ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় যত হত্যাকাণ্ড হয়েছে, এর সঙ্গে জড়িতদের বহিষ্কার ও শাস্তির আওতায় আনাসহ আরও চার-পাঁচটি দাবিতে ছাত্র সংগঠনগুলোর এই ঐক্য গঠন। সামনের বৈঠকে হয়তো সব দাবি চূড়ান্ত হবে। এরপর ঘোষণা হবে। পরে কর্মসূচি নিয়ে সামনে এগোব।’

ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শরিফুল ইসলাম রিয়াদ বলেন, ‘একটা ঐক্যের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীবান্ধব, ছাত্ররাজনীতিসংশ্লিষ্ট অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সরকারের পদত্যাগসহ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন-এই জায়গায় সবাই একমত।’

সূত্রমতে, বৈঠকে ঐক্যের নাম নিয়ে তিনটি প্রস্তাব এসেছে। তবে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রঐক্য’ নামের বিষয়ে অধিকাংশ ছাত্র সংগঠন মত দেয়। এর বাইরে ‘ভোটাধিকার রক্ষায় ছাত্রঐক্য’ ও সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য’ নামেরও প্রস্তাব করা হয়। এদিকে ১৯ ছাত্র সংগঠনের বাইরে ছাত্র ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। কয়েকটি ছাত্র সংগঠন যুক্ত হতেও রাজি হয়েছে। ছাত্র ইউনিয়নসহ বাম ধারার কয়েকটি ছাত্র সংগঠন তাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। তবে সংগঠনগুলো এও বলছে, তারাও পৃথকভাবে সরকার পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে কর্মসূচি পালন করছে। তবে তাদের সঙ্গে ঐক্যে যেতে চান না।

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি দীপক শীল বলেন, ‘আমাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। আমাদের দাবি প্রায় একই। আমরাও সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। আমরা জোটও চাই। কিন্তু তাদের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে সাম্প্রদায়িক শক্তি বিশেষ করে আওয়ামী লীগবিরোধী সব শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই করতে তারা আগ্রহী। আসলে এই লড়াইয়ের সঙ্গে আমরা একমত না। নিশ্চয়ই আমরা স্বৈরাচারী শাসক দলের ছাত্র সংগঠনকে এখানে চাই না। সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে কোনো ধরনের আঁতাত করতে চাই না। কিন্তু এই মুহূর্তে স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইটা চলমান আছে। সেই লড়াইটা ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন এবং বাম প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনকে নিয়েই চলমান রাখতে চাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘দাবি আদায়ে আলাদা কর্মসূচি আমরাও পালন করছি। আমাদের প্রগতিশীল ছাত্র জোট আছে। এ জোটকে আরও বৃহত্তর পরিসরে দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘোষণা করব।

Leave a Comment