বিএনপির যেসব সঙ্গীরা নির্বাচনে যেতে পারে

বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে তৎপর হয়েছে ভারত। ভারত কেবল প্রকাশ্য বিবৃতি দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি। বরং বাংলাদেশের রাজনীতিতে মেরুকরণের চেষ্টা করছে। বিএনপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যে সমস্ত রাজনৈতিক দল রয়েছে তাদেরকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করানোর জন্য ভারতের তৎপরতার খবর পাওয়া গেছে। তবে শুধু ভারত নয়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে আগামী নির্বাচনে নিয়ে আসার জন্য নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে। এর ফলে বিএনপির যারা যৌথ আন্দোলনের সঙ্গী তাদের অনেকেই আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে বলে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

উল্লেখ্য, বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে এক দফা আন্দোলন করছে। এই এক দফা আন্দোলনে ৩৪ টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিএনপি জোট বেঁধেছে। তবে এই ৩৪ টি রাজনৈতিক দলের অন্তত ১০ টি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে এমন খবর পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বিএনপির যৌথ আন্দোলনের অন্যতম সঙ্গী লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল অবসরপ্রাপ্ত অলি আহমেদ এক সময় বিএনপির রাজনীতির প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। ভারতের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আর এই কারণেই শেষ পর্যন্ত তিনি এক দফা আন্দোলনের বৃত্ত ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারেন এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন। এ নিয়ে সরকারের বিভিন্ন মহলের সাথে কর্নেল অলি আহমেদের আলাপ আলোচনা হয়েছে—এমন খবর পাওয়া যাচ্ছে।

যৌথ আন্দোলনের অন্যতম অংশীদার আ স ম আবদুর রব এর জেএসডি। জেএসডি’র সূত্রগুলো বলছে, জেএসডি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে ইতিমধ্যে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। আ স ম আবদুর রব এর সঙ্গেও ভারতের অন্তত ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। আর এই সম্পর্কের সূত্র ধরেই শেষ পর্যন্ত জেএসডি নির্বাচনে যাবে বলে বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলের ধারণা।

এছাড়া মাহমুদুর রহমানের নেতৃত্বে নাগরিক ঐক্য শেষ মুহূর্তে বিএনপির কাছ থেকে সরে এসে নির্বাচনে যাওয়া যেতে পারে—এমন তথ্য পাওয়া গেছে। যদিও মাহমুদুর রহমান মান্না এখন পর্যন্ত সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র অবস্থান রেখেছেন। গণফোরামের একটি অংশ ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে, অন্য অংশটি আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা মোস্তফা মহসিন মন্টুর নেতৃত্বে কাজ করছে। দুটি অংশই সরকার বিরোধী জোটে সক্রিয়। বিভিন্ন সূত্র জানাচ্ছে, গণফোরামের দুটি অংশই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে। তবে বিএনপির জোটের সঙ্গে না থাকলেও বাম গণতান্ত্রিক জোট আগামী নির্বাচনে আসতে পারে। এ ক্ষেত্রে এটি হবে বড় চমক।

২০১৪ নির্বাচনে বাম গণতান্ত্রিক জোট অংশগ্রহণ করেনি। বিভিন্ন বাম সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে এই মোর্চায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাসদ সহ একাধিক বাম দল রয়েছে। এই বাম দলগুলোর সঙ্গে ভারতের অন্তত সুসম্পর্ক রয়েছে। বাম গণতান্ত্রিক মোর্চা এখন পর্যন্ত নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অটল এবং তারা যুগপৎ কর্মসূচি না করলেও ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান থেকে কর্মসূচি পালন করছে। তবে এই কর্মসূচি পাশ কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত বাম মোর্চা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে—এমন গুঞ্জন রয়েছে।

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, ভারত বাংলাদেশে সেকুলার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনের মাঠে আনতে পারে এবং উগ্র ধর্মান্ধ মৌলবাদী এবং সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলোকে নির্বাচনের মাঠ থেকে দূরে রাখতে পারে। যার ফলে বাংলাদেশে যারা গণতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চা করে এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী তারা সকলেই শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর এটি যদি শেষ পর্যন্ত সফল হয় তাহলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি বরং গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে। শেষ পর্যন্ত বিএনপি করে এটি দেখার বিষয়।

Leave a Comment