ছাত্রলীগ নেতা হত্যা : মামলা করে বিপাকে পরিবার

আজিজুল ইসলাম সজীব,হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে ছেলে হত্যার তিন বছর পর মামলা করেও আসামিদের হুমকি ধামকিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন বৃদ্ধ মা-বাবা। আসামীদের ভয়ে দিনরাত বাসা তালবন্ধ করে রাখতে হচ্ছে তাদেরকে। আর প্রাণ ভয়ে নিহতের বড় ভাই পালিয়ে গেছে দেশের বাহিরে।

জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ শায়েস্তাগঞ্জ তালগড়াই গ্রামের আব্দুল খালেক মিয়ার কাছে তার ছোট ছেলে ছাত্রলীগ নেতা আশরাফুল আলম ফয়েজ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার খবর যায়। কিন্তু হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে গিয়ে ছেলের লাশ দেখে দুর্ঘটনা নয় বরং তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেন আব্দুল খালেক। সঙ্গে সঙ্গে তার বড় ছেলের স্ত্রীর বড় ভাই ওবায়দুল হক জুয়েল তাকে মাইক্রোবাসে তুলে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। পরে নিহতের বড় ভাই ইতালি প্রবাসি আশরাফুল কাদির কয়েছকে ভূল বুঝিয়ে পুলিশকে লিখিত দিয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ নিয়ে এসে দাফন করে দেয়। বিষয়টি নিয়ে মামলা করতে গেলে জুয়েল তাদেরকে বাধা দেয়।

সকল ভয়ের উর্ধে গিয়ে ২০১৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর আদালতে মামলা দায়ের করেন নিহতের পিতা আব্দুল খালেক। এরপরও তাদের উপর আবার ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে আসামী পক্ষ। বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছে তাদেরকে। এমনকি অনেকবার তাদের বাড়িতে হামলাও করেছে তারা। ফলে এখন ২৪ ঘন্টাই বাসা তালা দিয়ে রাখতে হয় ওই পরিবারটিকে।

নিহতের পিতা আব্দুল খালেক মিয়া বলেন, আমার বড় ছেলের বউয়ের বড় ভাই ওবায়দুল হক জুয়েল সম্পত্তি পেতে মরিয়া হয়ে উঠে। প্রায়ই সে তার ছোট বোনের নাম সব কিছু লিখে দেওয়ার জন্য আমাকে চাপ দিত। এ নিয়ে তাদের সাথে আমাদের অনেকটা মন মালিন্য চলছিল। ঘটনার দিন ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ আমার ছোট ছেলেকে বার বার ফোন করে ডেকে নিয়ে যায় তারা। যার কল লিষ্ট আমার কাছে আছে। ওই দিন আমার ছেলের কাছে তাদের লোকজনের অন্তত ৫০টিরও অধিক ফোন আসে।

তিনি বলেন, জুয়েল পরিকল্পিতভাবে আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। ঘটনার পর আমি মামলা করতে গেলে জুয়েল ও তার লোকজন আমাকে বাধা দেয়। এমনকি আমার বড় ছেলে ইতালি থেকে দেশে থাকায় তাকে হত্যার হুমকি দেয়। ফলে আমি ভয়ে মামলা করিনি। এক পর্যায়ে আমার বড় ছেলে তাদের ভয়ে আবার ইতালি চলে যায়। এর পর আমি ও আমার স্ত্রী মামলা করার সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু আমার বড় ছেলে বিদেশ থেকেই আমাদের প্রাণের ভয়ে মামলা করতে বাধা দেয়।

তিনি বলেন, মামলা করেও এখন বিপাকে পড়েছি আমরা দুই বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। প্রতিদিন আসামী পক্ষের লোকজন আমাদের বাড়িতে এসে হুমকি-ধামকি দেয়। ২৪ ঘন্টাই বাসা তালাবন্ধ করে রাখতে হচ্ছে।

নিহতের মা মোছা. সাফিয়া খানম বলেন, ‘আমার ছেলে কারও সাথে কোনদিন খারাপ আচরণ করেনি। অথচ আমার নিরপরাধ ছেলেকে তারা নির্মাণভাবে হত্যা করেছে। আগে জানলে আমার সম্পূর্ণ সম্পত্তি তাদের নামে লিখে দিয়ে ভিক্ষা করে খেতাম।’

নিহত আশরাফুলকে যে প্রতিবেশিরা লাশের গোসল করিয়েছিলন তারা জানান নিহত ছাত্রলীগ নেতা আশরাফুল আলম ফয়েজের লাশ বাড়িতে যাওয়ার পর তারা দেখতে যান। এমনকি তারা লাশকে গোসল করিয়েছেন কিন্তু লাশের ঘায়ে সড়ক দুর্ঘটনার কোন আলামত ছিল না। ঘায়ে তোন ধরণের কাটা-ছোঁড়া ছিল না।

এই হত্যা মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে সিআইডি। মামলার সিআইডির দাবি, তাদের কাছে সম্প্রতি মামলাটি এসেছে। তাঁরা তদন্ত করে দেখছে। তবে দীর্ঘদিন পর মামলা করায় এবং লাশের ময়নাতদন্ত না করায় অনেক আলামত নষ্ট হয়ে গেছে।

হবিগঞ্জ জেলা সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার (সিআইডি) শেখ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সপ্তাহখানেক হলো মামলাটি আমাদের কাছে এসেছে। তাই তদন্ত না কওে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে দীর্ঘদিন পর মামলা করায় এবং লাশের ময়নাতদন্ত না করায় অনেক আলামত নষ্ট হয়ে গেছে।

উল্লেখ্য, ওবায়দুল হক জুয়েলের বিরুদ্ধে অজয় চন্দ্র সেন নামে এক ব্যক্তিকে গুলি হত্যা হত্যার অভিযোগ করেছে। ২০১১ সালের ৬ মার্চ ওই মামলায় তাকে অভিযোক্ত করে হবিগঞ্জ সদর থানার তৎকালিরন উপ-পরিদর্শক (এসআই) হারুন আল রশীদ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

Leave a Comment