বাইডেন-মোদি বৈঠকে বাংলাদেশ নিয়ে কি আলোচনা হলো?

বহুল আলোচিত বৈঠকটি হোয়াইট হাউসে শেষ হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একান্ত বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে যেমন আলোচনা হয়েছে তেমনি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার প্রসঙ্গটিও উঠে এসেছে। দুই দেশের সরকার এবং রাষ্ট্রপ্রধান বৈঠক শেষে বলেছেন, তাদের সম্পর্ক উই দ্য পিপল। জনগণের মধ্যে সম্পর্ককে আরও প্রগাঢ় করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন বিশ্বের প্রভাবশালী দেশের দুই নেতা। এই বৈঠক নিয়ে বাংলাদেশের আগ্রহ ছিল অন্যমাত্রা। বাংলাদেশের প্রসঙ্গটি বাইডেন-মোদি বৈঠকে আলোচনা হবে এমন খবর প্রকাশিত হয়েছিল বিভিন্ন গণমাধ্যমে। কিন্তু বৈঠক শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে দুই দেশের কেউই এ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে।

কূটনৈতিক মহল বলছেন যে, বাংলাদেশ বা এই অঞ্চলের কৌশলগত যে আলোচনা তা প্রকাশ্যে সংবাদ সম্মেলনে বলার বিষয় নয়। তবে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টর বৈঠকের আগে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অন্যদেশের পরামর্শ গ্রহণ করবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ সবার আগে। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আলোচনা হবে কিনা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতের পরামর্শ গ্রহণ করবে কিনা এরকম প্রশ্নের জবাবে জন কিরবি এরকম মন্তব্য করেছিলেন।

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, এই বৈঠকে আসলে কী আলোচনা হয়েছে তার প্রভাব বা তার দৃশ্যমান পরিণতি দেখা যাবে আরো কিছুদিন পর। আগামী কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে এই বৈঠকে আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী কি বুঝিয়েছেন বা আদৌ কিছু বুঝিয়েছেন কিনা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নরেন্দ্র মোদির প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন কিনা। তবে এই বৈঠকের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা একটি কূটনৈতিক শব্দ। এর অর্থ হলো এই অঞ্চলকে স্থিতিশীল রাখা। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীলও এই শব্দগুচ্ছের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার একটি বড় মাপকাঠি। এই নির্বাচনের আগে যদি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়, নির্বাচন নিয়ে বিরোধ যদি একটি অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় আনে কিংবা নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা যদি ছড়িয়ে পড়ে সে ক্ষেত্রে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বিঘ্ন হবে।

বাংলাদেশ ভারতের জন্য একটা স্পর্শকাতর প্রতিবেশী। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ যদি অস্থিতিশীল হয় বা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা এবং ধারাবাহিকতায় যদি নষ্ট হয় সেক্ষেত্রে তার প্রভাব অনিবার্যভাবেই ভারতের ওপর পড়বে। আর এ কারণেই আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার বিষয়টি গভীর তাৎপর্যপূর্ণ এবং বিশ্লেষণের দাবি রাখে। দুই নেতা কি আলোচনা করেছেন বা এ সফরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ নিয়ে কি আলোচনা হয়েছে তা হয়তো কখনোই প্রকাশ হবে না। তবে আঞ্চলিক স্বার্থের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে এখনো ভারতের বলয় থেকে বেরোতে পারেনি এই বৈঠক তার একটি প্রমাণ। এই বৈঠকে নরেন্দ্র মোদিকে যে ধরনের সম্মান দেয়া হয়েছে তা বিরল। এর মাধ্যমে একটি বার্তা স্পষ্ট হয়েছে যে, মার্কিন নীতিনির্ধারক মহলে এখনো ভারতের প্রভাব বলয় রয়েছে। আর তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে ভারতের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সহসা চটজলদি কোন কিছু করে ফেলতে পারবে না।

বৈঠকের কূটনৈতিক পরিভাষায় বলা হয় যে, নরেন্দ্র মোদির মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় জো বাইডেন এবং নরেন্দ্র মোদির বডিল্যাঙ্গুয়েজ প্রমাণ করে যে তারা দুইজনই তাদের আলোচনায় সন্তুষ্ট এবং এই আলোচনায় উভয়পক্ষই জয়ী হয়েছে। আর সেটি যদি হয় তাহলে বাংলাদেশ প্রসঙ্গটি অবশ্যই তাদের আলোচনায় এসেছে এবং বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ভারতের অভিপ্রায় যে একেবারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উড়িয়ে দেবে এমনটি মনে হয় নাই বৈঠকের আবহে। আর তাই আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে আরও কদিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এরপর কি করে? নরেন্দ্র মোদির সফরের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাল্টায় কিনা সেটিই এখন দেখার বিষয়।

Leave a Comment