নিলামে ছাত্রলীগের পদ বিক্রি করেন তিনি

উপজেলা পৌরসভা কমিটিতে ভালো পদপদবি দেওয়ার আশা দিয়ে টাকা আইফোন নিয়েও পদ না দেওয়ার অভিযোগউঠেছে ভোলা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাসিব মাহমুদ হিমেলের বিরুদ্ধে। তিনি তাঁর অধীন ইউনিটগুলোর গুরুত্বপূর্ণপদ নিলামে বিক্রি করেন। ছাড়া বিবাহিত, ছাত্রদল এবং নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িত ব্যক্তিদের বিভিন্ন কমিটিতে শীর্ষ পদদেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এর প্রতিকার চেয়ে জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতিমেহেদী হাসান জিহাদ, বোরহানউদ্দিন পৌর শাখার সাবেক সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং সরকারি আবি আব্দুল্লাহকলেজ শাখার সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক শামীম মাহমুদ জয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক বরাবর লিখিতঅভিযোগ দিয়েছেন।

পদ না পেয়ে টাকা ফেরত চেয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে এক ভুক্তভোগী নেতার কথোপকথনের কল রেকর্ড, ভুক্তভোগীদের অভিযোগপত্র, টাকা লেনদেনের ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং অন্যান্য তথ্যপ্রমাণ প্রতিবেদকের
কাছে রয়েছে।

অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগীরা জানান, ২০২১ সালের অক্টোবরে জেলা ছাত্রলীগের সাতটি ইউনিটের কমিটি একসঙ্গে বিলুপ্তঘোষণা করে জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করা হয়। পরে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পদে আগ্রহী অন্য প্রার্থীদের মতো সবসাংগঠনিক নিয়ম মেনে তাঁরা জীবনবৃত্তান্ত জেলা ছাত্রলীগ বরাবর জমা দেন। সময় জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকহিমেল তাঁদের ইউনিট ছাত্রলীগের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক পদ দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অঙ্কেরঅর্থ নেন। পরে কমিটিতে পদ না দেওয়ায় তাঁরা সেই টাকা ফেরত চাইলে তিনি টাকা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানান।অভিযোগপত্রে মেহেদী লাখ টাকা একটি আইফোন, মামুন সাড়ে লাখ এবং শামীম লাখ টাকা দিয়েছেন বলে উল্লেখকরেন।

লিখিত অভিযোগকারীদের পাশাপাশি হিমেল আরও অনেকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়েছেন বলে অভিযোগউঠেছে। ভুক্তভোগীরা জানান, টাকা বেশি দিলেই হিমেলের কাছে মেলে পদ। নিলামে পদ বিক্রি হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, জেলা ছাত্রলীগের আওতাধীন সাতটি ইউনিটের কমিটি ফেসবুকে প্রেস রিলিজ দিয়ে বিলুপ্ত করার পরগঠনতন্ত্র অনুযায়ী সম্মেলনের মাধ্যমে এসব ইউনিটের কমিটি গঠনের কথা ছিল। কিন্তু গঠনতন্ত্রের নিয়মকানুনকে তোয়াক্কা নাকরে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক ফেসবুকে প্রেস রিলিজের মাধ্যমে কমিটি ঘোষণা করেন। অভিযোগ রয়েছে, এসব কমিটি গঠনের সময় তাঁরা বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে বিপুল অর্থ নিয়েছেন। পরে যাঁরা বেশি টাকা দিয়েছেন তাঁদেরই পদদিয়েছেন। তবে যাঁরা পদ পাননি তাঁদের টাকা পরে আর ফেরত দেননি।

কী আছে কল রেকর্ডে

বোরহানউদ্দিন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পদপ্রত্যাশী আব্দুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে হিমেলের কথোপকথনের কল রেকর্ডেমামুনকে বলতে শোনা যায়, ‘ভাইয়া, হে আমারে আজকে আসতে বলেছে।
হিমেল : ‘হে তোরে আজকে আইতে কয় ক্যা? আমারে না জিগাইয়া তোরে আজকে আইতে কয় ক্যা? আমি কি তোরে আজকেআইতে কইছি, বোকা?’
মামুন : ‘আমার বোনেরে আমি কইয়াছি আমি আজকেই টাকা দিমু মিল কইরা। বোনের জিনিসটা (গহনা) বন্ধক রাখছি, ভাইয়া।
হিমেল : ‘শোন শোন, তোরে আমি বলি, তোর কথা বুচ্ছি। ঈদের আগে তিন নিবি ঈদের পর এক নিবি, বুচ্ছস?’
মামুন : ‘ভাইয়া, আমারে পুরোটা একেবারে মিল কইরা দেন। আমি তো এমনেই শেষ, ভাইয়া। আমার জীবনডা আছে, কনভাইয়া?
হিমেল : ‘শোন শোন, তোরে আমি বলিআমার কাছে দুই আছে আর এক আমি তোরে ম্যানেজ করে দিতেআছি।

মামুন : ‘আমারে আজকে বাসাতে ঘুমাইতেও দিবো না, আমি এমন টর্চারের মধ্যে আছি, ভাইয়া।
হিমেল : ‘আমি ফোন দিলে তুই আইসা নিয়া যাইস। বৃহস্পতিবার হইল তারিখ, বুধবারও হইয়া যাইতে পারে আর বৃহস্পতিবারসর্বোচ্চ।
বিষয়ে মামুন সমকালকে বলেন, ‘হিমেল আমাকে বোরহানউদ্দিন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বানানোর কথা বলে ১০লাখ টাকা দাবি করে। আমরা যারা পৌর ছাত্রলীগ করি তাদের কাছে উপজেলার নেতৃত্ব পাওয়া একটা স্বপ্নের মতো। পরে আমিবিভিন্নভাবে ম্যানেজ করে অনেক কষ্টে তাকে এককালীন লাখ টাকা দেই। কিন্তু সে টাকা নিয়েও আমাকে নেতা বানায়নি। তখনটাকা ফেরত চাইলে দেব দেব বলে আর দেয়নি, ঘোরাচ্ছে।

ছাত্রদল বিবাহিতদের পদায়ন

সমকালের হাতে আসা বিভিন্ন নথিপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ভোলা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাইহান আহমেদ এবংসাধারণ সম্পাদক হাসিব মাহমুদ হিমেলের স্বাক্ষরে নাজিউর রহমান মঞ্জু নামের একজনকে ভোলা জেলার অন্তর্গত দুলারহাটথানা ছাত্রলীগের সভাপতি করা হয়েছে। কিন্তু এর আগে তিনি দুলারহাট থানার নীলকমল ইউনিয়ন ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদকছিলেন। সেই ছাত্রদলের কমিটির প্যাড সমকালের কাছে রয়েছে।

শশীভূষণ থানা ছাত্রলীগের সভাপতি করা হয়েছে তারেক পণ্ডিত নামের একজনকে এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে মাহফুজহাওলাদার নামের আর একজনকে। তাঁদের দুজনেই বিবাহিত হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তারেক পণ্ডিতের বিয়ের কাবিননামাএবং মাহফুজ হাওলাদের বিয়ের চেয়ারম্যান সার্টিফিকেটও সমকালের হাতে রয়েছে। কাবিননামায় দেখা যায়, তারেক পণ্ডিত২০২০ সালের ডিসেম্বরে বিয়ে করেন। ছাত্রলীগে বিবাহিতদের স্থান দেওয়ার সুযোগ নেই।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হিমেল বলেন, ‘আমি দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ছাত্রলীগ করছি। এই দীর্ঘ সময়ে কেউ বলতে পারবেনা যে, আমি কারও কাছ থেকে অন্যায়ভাবে সুবিধা নিয়েছি। যারা আমার নামে অভিযোগ দিয়েছেন, আমি জানি না তাদেরউদ্দেশ্য কী। তারা তো মুসলমানের ছেলে। তারা যদি মসজিদে দাঁড়িয়ে বলতে পারেন যে, তাদের অভিযোগ সত্য, তাহলে সবকিছুমাথা পেতে নেব। একইসঙ্গে আমি দ্বিগুণ জরিমানা দেব। সবাইকেই তো এক দিন মরতে হবে। মিথ্যা বলে কাউকে ফাঁসিয়ে কীলাভ তাদের? আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, অভিযোগ নিয়ে তদন্তহচ্ছে। প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তথ্যসূত্র : সমকাল

Leave a Comment