নির্বাচনি ছকে প্রশাসন সাজাচ্ছে সরকার!

গেল এক মাসে সরকার চারজন বিভাগীয় কমিশনার ৩১ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দিয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদে নতুন ৫৬ জন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পুলিশ প্রশাসনে রোববার ১৬ডিআইজি ৩৪ অতিরিক্ত ডিআইজি এবং ১৩ জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) পদে নতুন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সাধারণত জাতীয় নির্বাচনে জেলা প্রশাসকরা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। ইউএনও এবং এসপিদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকেনির্বাচনে। তাই নির্বাচনের ঠিক আগে এসব নিয়োগ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে সরকারের বিরুদ্ধে পছন্দমতো ছকে প্রশাসন সাজানোর অভিযোগ রয়েছে।

বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ পদোন্নতি প্রেষণ অনুবিভাগের (এপিডি) অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুস সবুর মন্ডল বলেন, ডিসিদের মধ্যে যাদের বদলির সময় হয়েছে তাদের প্রত্যাহার করে নতুন ডিসি দেওয়া হয়েছে।উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের মধ্যে যারা এডিসি হবেন তাদের প্রত্যাহার করে নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এসব রদবদলের সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। রদবদল প্রশাসনের রুটিন কাজ।

মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী কিংবা সচিবদের পিএসদের মধ্য থেকে কেন ডিসি নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন হলো, এর বাইরে থেকেদেওয়া যেত নাএমন প্রশ্নের জবাবে এপিডি বলেন, তারাও সরকারি কর্মকর্তা। তাদের যোগ্যতা থাকলে ডিসি হিসাবে নিয়োগ দেওয়া যাবে না? সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, আমাদের দেশের নির্বাচন নিয়ে বিতর্কআছে। নির্বাচন যদি ২০১৪ কিংবা ২০১৮ সালের স্টাইলে হয়, তাহলে কে ডিসি, কে এসপি তাতে কিছুই আসে যায় না। আর যদিবিতর্কমুক্ত সত্যিকারের নির্বাচন হয়, তাহলে নির্বাচনের আগে ডিসিএসপিদের মধ্যে যারা বিতর্কিত তাদের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে প্রত্যাহার করা হবে। যেভাবেই প্রশাসন সাজানো হোক তাতে কোনো লাভ হবে না।

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া বলেন, সব সরকারের সময় দলীয় আনুগত্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের এসব পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। বিশেষ করে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী কিংবা সচিবদের পিএসরা দলীয় আনুগত্যের মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হিসাবেবিবেচনা করা হয়। তাদের সহযোগিতায় সুবিধা পাওয়া নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়। সব সরকারের সময় এভাবে প্রশাসন কে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করা হয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ডিসি পদে নিয়োগ নিয়ে বেশি আলোচনাসমালোচনা হচ্ছে। নতুন ডিসিদের মধ্যে আটজনই বিভিন্ন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী সচিবের একান্ত সচিব (পিএস) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কর্মরত ১১জনকে এবার জেলা প্রশাসক করা হয়েছে। ডিসি পদে নতুন করে ২৭তম বিসিএসের কর্মকর্তাদেরও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া ২৪ ২৫তম বিসিএসের কিছুসংখ্যক কর্মকর্তাও ডিসি হয়েছেন। জেলা প্রশাসক পদে নিয়োগের আগে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিভিন্ন বিষয়ে সংস্থার মাধ্যমে তথ্য নেওয়া হয়। এছাড়া প্রশাসনের নিজস্ব চ্যানেলেও তাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করাহয়। তারা সরকারের প্রতি কতটা অনুগত, সেটা বোঝার চেষ্টা করা হয়। সার্বিক দিক বিবেচনা করে তাদের নিয়োগ চূড়ান্ত করাহয়।

সাধারণত নির্বাচনের আগে ধরনের নিয়োগে রাজনৈতিক বিবেচনা বেশি গুরুত্ব পায়। সব সরকারের সময় ধরনের নিয়োগ দেওয়ার অতীত রেকর্ড রয়েছে। ডিসিরা সবাই একেবারে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পান তা কিন্তু নয়। কিছু কর্মকর্তা যোগ্যতা মেধার কারণেও এসব পদে নিয়োগ পেয়ে থাকেন।

এবার মন্ত্রীসচিবের পিএসদের মধ্য থেকে আটজনকে ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একান্ত সচিব মু. আসাদুজ্জামানকে পাবনা, আইনমন্ত্রীর পিএস নূর কুতুবুল আলমকে পটুয়াখালী, পানিসম্পদ উপমন্ত্রীর পিএস আরিফুজ্জামানকে ভোলা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর পিএস খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমানকে কুমিল্লা, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রের পিএস শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিনকে বান্দরবান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের পিএস কায়ছারুল ইসলামকে টাঙ্গাইল, নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রীর পিএস মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদারকে যশোর এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পিএস মো. গোলাম মওলাকে নওগাঁ জেলার ডিসি করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যারা কর্মরত, তাদের সরকার ঘনিষ্ঠ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এসব মন্ত্রণালয় থেকে ১১ জনকে নতুন করে ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গতএক মাসের ব্যবধানে রাজশাহী, খুলনা, চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনারকে বদলি করে নতুন বিভাগীয় কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ রোববার সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারকে বদলি করে অতিরিক্ত সচিব আবু আহমেদ ছিদ্দীকীকে বিভাগীয় কমিশনার হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

সূত্র : যুগান্তর

Leave a Comment