অপ্রাপ্তির কারনে দলের প্রতি নিরব প্রতিশোধ সাবেক কয়েকজন ছাত্রনেতার

অনেকতো হলো, এবার দয়া করে বন্ধ করুন
(সত্য তিক্ত হলেও তা সত্য)

ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট কোন্দলের কারণে বেশ বড় বিভক্তি তৈরি হয়েছে। এই বিভক্তি তেমন দৃশ্যমান না হলেও প্রভাবটাযে কতটা ভয়াবহ তা আর কিছুদিন পরেই টের পাওয়া যাবে। বিভক্তির দুটো ধারা রয়েছে, একটি বিবাহিত বাদ দেয়া অপরটি এসএসসি ব্যাচ অনুসারে বাদ দেয়া। এসএসসি ৯৯ সাল পর্যন্ত বাদ দেবার কারণে বড় একটি যোগ্য প্রজন্ম ছাত্রদলের রাজনীতি থেকে ঝরে গেছে। এই ধাক্কা সামলাতেই পার্টি হিমসিম খাবে। এর ভেতরে আবার বিবাহিত ইস্যু আনা হলো। বিবাহিত ছাত্র নেতাদের এমন নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হলো যে সারা বাংলাদেশ জানলো ছাত্রদলে বিয়ে করা আর “অসামাজিক ” কাজ করা সমান। বিবাহিত ইস্যু উঠিয়ে সারা দেশে কি পরিমাণ ত্যাগী – নির্যাতিত নেতা কর্মী জবাই করা হলো তার সঠিক পরিসংখ্যান এই দলের শীর্ষ নেতারা কেউ জানেননা। অন্যদিকে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক শ্যামলের এসএসসি ব্যাচ ২০০৩ হবার কারনে তার জুনিয়র দিয়ে সে ইউনিট কমিটি করতে চায়। ফলে ২০০০ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত মোট চারটি ব্যাচ এখানে ঝরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দেবার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নেতা কর্মী তেমন থাকছেইনা বলা যায়।

২০১৮ সালের ০৩ জুন যখন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ডিজল্ভ করে দিয়ে কাউন্সিলের প্রার্থীতা সংক্রান্ত নিয়মাবলী ঘোষণা করা হয় তখন যে তিনটি নিয়ম ধার্য করা হয় সেখানে বিবাহিতরা প্রার্থী হতে পারবেনা এমন কোন শর্ত ছিলনা। তার একুশ দিনের মাথায় ২৩ জুন যখন তফসিল ঘোষণা করা হল তখন আনুষ্ঠানিক সাংবাদিক সম্মেলনেও বিবাহিত বিষয়টা ছিলনা। সম্মেলন শেষ হবার পর এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে শামসুজ্জামান দুদু ভাই বললেন বিবাহিতরা নির্বাচন করতে পারবেনা। এই ঘোষণা আসার দিন পর্যন্ত ভাইটাল প্রার্থীদের বেশিরভাগই ছিল বিবাহিত। তাহলে হঠাৎ করে কেন এই ঘোষণা?
আমরা যারা প্রার্থী ছিলাম তারা এ বিষয় নিয়ে বিশদ অনুসন্ধান করে যা জেনেছি তা রীতিমতো লজ্জা ও অপমানজনক।


সংগঠনকে সুকৌশলে হত্যার আয়োজন করেছে কিছু নেতা। ২২ জুন ২০১৮ নির্বাচন পরিচালনা কমিটির স্কাইপি মিটিং ছিল জনাব তারেক রহমানের সাথে। সেই মিটিংয়ে ছাত্রদলের সাবেক এক সভাপতি বিবাহিতদের প্রার্থী হবার বিষয়ে আপত্তি তোলেন। তিনি তার আপত্তির পক্ষে যেসব যুক্তি উপস্থাপন করেন তা আর বিস্তারিত নাই বললাম। শুধু এতটুকু বলি, বিবাহিতরা নেতৃত্ব পেলে নাকি তিনি বা তিনারা প্রশ্নবিদ্ধ হন।


সাবেক সেই সভাপতির এই প্রস্তাবের সাথে আরও কয়েকজন সাবেক সম্মতি দেন। মজার বিষয় হচ্ছে যারাই বিবাহিতদের পক্ষে ভেটো দিয়েছিলেন তাদের সকলেরই প্রার্থী ছিল। শুধুমাত্র দুদু ভাই আর রিপন ভাই কিছু চালাক নেতার কৌশলের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। তখন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যা বলেন তার সারকথা হচ্ছে, “যেহেতু নির্বাচন হবে সেহেতু প্রার্থীর বৈবাহিক অবস্থা শিথিল করে দেন। তাদের যদি কাউন্সিলররা নির্বাচিত করে তবে এতেতো পার্টির কোন দায় নেই। এরপরেও যদি আপনারা আপত্তি করেন তবে তফসিলের নিয়মাবলীতে লিখে দেন, বিবাহিতদের আমরা অনুৎসাহিত করি এবং অবিবাহিতদের উৎসাহিত করি। ” উনার এমন মতামতের পরও সাবেক কিছু নেতার কঠোর অবস্থানের প্রেক্ষিতে বিবাহিতরা প্রার্থী হতে পারবেনা বিষয়ে তিনি সায় দেন। সেখানে শুধুমাত্র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে অবিবাহিত হতে হবে এমন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এধরনের সিদ্ধান্তের পরও কেন পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বিবাহিতদের বাদ দেয়া হল?
একটা বিষয় উল্লেখযোগ্য যে, এসএসসি ২০০০ ব্যাচ অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০২-২০০৩ সেশনের ছাত্র আমি, মেহেদী তালুকদার, আসাদ টিটু, মিরাজ আজীম, সর্দার সাগর কারোরই মনোনয়ন টেকেনি। এদের মধ্যে যারা আত্মস্বীকৃত বিবাহিত তারা বাদে বাকিদের কোন তথ্যসূত্র ছাড়াই মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। যেহেতু নির্বাচন একটি অফিসিয়াল প্রক্রিয়া সেহেতু এখানে কারও মনোনয়ন বাতিল হলে তাকে অবশ্যই অফিসিয়ালি বৈধভাবে বাতিল করা উচিত। কিন্তু সেটা করা হয়নি, এমনকি সর্দার সাগর অবিবাহিত হওয়া স্বত্বেও তার মনোনয়ন কেন বাতিল করা হলো সেটাও আমরা জানতে পারলামনা। আমি হলফ করে বলতে পারি ০২-০৩ সেশনের একজনও যদি প্রার্থী হতে পারতো তবে আজ ছাত্রদলের ইতিহাস ভিন্নভাবে লেখা হতো। কেননা আমাদের ব্যাচের অধিকাংশ নেতাই কোন নির্দিষ্ট বলয়ের সাথে অন্ধভাবে যুক্ত নয় এবং সারাদেশের প্রায় সবকটি ইউনিটের সাথে আমাদের অনেক আগে থেকেই সাংগঠনিক ও ব্যাক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে। চাইলেই যে কোন ব্যক্তি বা বলয় তাদের ইচ্ছেমতো আমাদের চালাতে পারবেনা। যে কারণে এই কাটাকাটির সুকৌশল খেলার বলী হয়েছি আমরা।

নির্বাচন নিয়ে যা হয়েছে তা আর কি বলবো। ছাত্রদলের এই নির্বাচন প্রমান করে দিয়েছে, জনাব তারেক রহমান ছাত্রদলকে সিন্ডিকেট মুক্ত করার জন্য যতটা আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন, ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের একটা অংশ ততটাই প্রমাণ করে দিয়েছে যে, আগামীতে ছাত্রদলের রাজনীতি করতে চাইলেও বড় সিন্ডিকেটের সাথে যুক্ত হতে হবে। না হলে তার রাজনৈতিক শ্রমটুকুই বৃথা যাবে। একটা ছাত্র সংগঠন যে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নির্লজ্জ ক্রীড়ানক হতে পারে তা এই নির্বাচন দেখিয়ে দিল। স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দ থেকে শুরু করে আতি পাতি নেতা কে না এই সিন্ডিকেটের বাইরে ছিলো? কত খেলোয়াড় খেললো কিন্তু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে গোল দিলো সাবেক দুই সেক্রেটারি। একজন উত্তরাঞ্চল কোটায়, আরেকজন ভাই কোটায় । বাকিরা যা পেলো তা হচ্ছে আগামীতে কিভাবে গোল দিতে হবে তার শিক্ষা। আর দল যা পেলো তা হচ্ছে শুধুমাত্র “বিভক্তি “।
তাহলে এর দায় কার?

দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারান্তরীন থাকার সুবাদে জনাব তারেক রহমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দলের। সঙ্গত কারনেই হয়তো ভাবা হবে দায়টা জনাব তারেক রহমানের উপরই বর্তায়। আমার লেখায় ইতোমধ্যে বোঝা গেছে কিভাবে সাবেক নেতাদের একটা পক্ষ সিন্ডিকেশনের মাধ্যমে ছাত্রদলকে তাদের করালগ্রাস করতে চেয়েছে। তাদেরই বিজয়ী অংশ ২৩ জুন ২০১৮ থেকে শুরু করে অদ্যবধি বলেই যাচ্ছে জনাব তারেক রহমান বিবাহিতদের ছাত্রদলে রাখতে চাননা। আমি দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ভাই ও ছাত্রদলের সভাপতি খোকনকে প্রশ্ন করেছিলাম, দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সেন্ট্রাল থেকে শুরু করে ইউনিয়ন ওয়ার্ড পর্যন্ত যদি কমিটি করা হয় তাতে ছাত্রদলের মোট পদবীযুক্ত নেতার সংখ্যা কত হয়? ৯৯ সেশন বাদ দেবার পর কি পরিমাণ জনশক্তি অবশিষ্ট আছে? বিবাহিত হিসাব করলে কত পার্সেন্ট বাদ যায়।

বিবাহিতদের বাদ দিয়ে তাদের রিপ্লেসমেন্টে যাদের আনা হচ্ছে তাদের যোগ্যতা সম্পর্কে জনাব তারেক রহমানকে জানানো হয়েছে কি না? তারা দুজনেই এ বিষয়ে তাদের জানা নেই বলে স্বীকার করেছে। আমরা বারবার বলেছি প্রয়োজনে আমাদের নিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সাথে বসানো হোক, কেউ বিষয়টি কর্ণপাত করেনি। আমি নিজে সারা দেশে কাউন্সিলরদের সাথে কথা বলেছি, তারা জানিয়েছেন বিবাহিত বাদ দিলে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি করার উপায় থাকবেনা। সেন্ট্রাল থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত কমিটির একোমডেশন হল ২৫ লক্ষ। এখন সারা দেশে ৫ লক্ষ খুজে পাবেননা। এরভেতরে আবার বিবাহিত বাদ দিয়েছে। সঠিক তথ্য উপাত্ত ছাড়া যারা দলকে আজ সংকটে ফেলে দিয়ে এর দায় জনাব তারেক রহমানের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে তারা পক্ষান্তরে সংগঠনের উপর দীর্ঘদিনের ক্ষোভের প্রতিশোধ নিচ্ছে। নির্বাচিত দুই নেতার দুই ইমামের জীবনেই রয়েছে অপ্রাপ্তির ক্ষোভ। এই ক্ষোভ থেকেই সংগঠনকে ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে তারা। তাদের রাজনৈতিক জীবনে প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির হিসেব নিলেই ক্ষোভের কারণটাও বুঝে যাবেন।


আমাকে অনেকবার বলা হয়েছে বিশেষ একজনের সাথে বসে সৃষ্ট মনোমালিন্য দূর করতে, তাহলেই নাকি সব ঝামেলা শেষ, বিবাহিত কোন ইস্যুই হবেনা। নিজের ছোট্ট ব্যাক্তিত্বটুকু নষ্ট করে তার সাথে আমি বসিনি। ফলাফলতো সবাই দেখলেন। আমি কিভাবে ছাত্রদলের রাজনীতি করে তা দেখে নেয়া হবে এমন থ্রেটও শুনেছি। মেহেদী, টিটু আমি নাকি ডিস্টার্ব! আমরা থাকলে খোকন শ্যামল সহজভাবে সংগঠন চালাতে পারবেনা। বিয়াত্যা যদিও থাহে, তাইলেও আরাফাইত্যারে রাজনীতি করতে দিমুনা। এমন কথাও শুনেছি। প্রথমে আনম্যারিড দিয়া কমিটি আংশিক করমু, তারপর যদি ম্যারিডরা হাউকাউ করে তাইলে পূর্ণাঙ্গ করার সময় কিছু নিয়া নিমু। তহনও যদি বেহায়ার মতো আরাফাত মেহেদী টিটুরা ফালাফালি করে তাইলে জুনিয়রের পিছনে রাজনীতি করতে হইবো।এজাতীয় অসংখ্য বাক্যের ব্যাবহার হয়েছে যার তথ্য প্রমান স্বাক্ষী সবই রয়েছে।

খোকন বা শ্যামলের সক্ষমতা নিয়ে আমার কোন কথা নেই। এই সংগঠনে নাকি আলুকেও বসালে আলু নেতৃত্ব দিতে পারে। আলু দিয়েই সংগঠন চলুক। ঢাবিতে পড়েও সংগঠনের শীর্ষ নেতা যখন Committee বানান Komity লেখে আর অন্যজনের ম্যানার নিয়ে তার নিজের বড় ভাই যখন আপসেট তখন ছাত্রদলের komity নিয়ে comedy হতেই পারে। এতে সংবিধান লংঘন হয়না।
মেহেদী টিটু আরাফাত মিরাজ সাগর বা আমাদের ব্যাচের কাউকে পদ দিতে হবেনা। আল্লাহর ওয়াস্তে তোরা তারেক সাহেবের নাম আর ভাঙ্গাসনা। লন্ডনে থাকা একজন মানুষ যতটা আস্থা আর বিশ্বাস নিয়ে কাউন্সিল দিয়েছিলেন, তারও বেশী বেঈমানী তাঁর সাথে তোদের বড় ভাই আর তোরা করেছিস। এবার এসব বন্ধ কর প্লিজ। মানুষটাকে আর ঠকাস না। আমাদের বাদে বাকি বিবাহিত যারা আছে তাদের পদায়ন কর। আর জনাব তারেক রহমানের দোহাই দিয়ে দলটার ক্ষতি করিসনা। ভুলে যাসনা, লোকালয় পুড়লে দেবালয় এড়ায় না।
কাউন্সিলে প্রার্থী দিয়ে জয়ী ও পরাজিত সিনিয়র সাবেক নেতাদের বলি, অনেকতো হলো, এবার দয়া করে বন্ধ করুন।
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

Leave a Comment