যুক্তরাষ্ট্রকে পাল্টা চাপে রাখার কৌশলে সরকার

জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের এক ধরণের স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। এই স্নায়ুযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেমন সরকারকে চাপে রাখার কৌশল নিচ্ছে, একের পর এক অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের নামে কিছু নীতি এবং সতর্ক বার্তা প্রকাশ করছে। ঠিক তেমনিভাবে সরকারও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পাল্টা চাপ দিচ্ছে এবং এই পাল্টা চাপের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যপারে বাড়াবাড়ি করবে না এমন প্রত্যাশা করছে সরকার।

২৪ মে বাংলাদশের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে। এই ভিসানীতি ঘোষণার এক সপ্তাহের মধ্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কর ফাঁকির মামলার রায় দিল হাইকোর্ট। রায়ে ইউনূসকে কর ফাঁকির ১২ কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর আগেই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চাপে রাখার ব্যাপারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অবস্থান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছার বিপরীতে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন সময় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যাপারে সরকারকে নমনীয় হবার অনুরোধ জানিয়েছিল। ইউনূসকে যখন গ্রামীণ ব্যাংকের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়, সে সময় তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করেছিলেন এবং ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাখার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু সে সময় সাফ জানিয়ে দেন ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংকে থাকা না থাকা তার হাতে হয়, এটি আইনের বিষয়। আইন অনুযায়ী তার বয়স সীমা অতিক্রম হয়েছে এ কারণে তাকে ওই পদে রাখা সম্ভব নয়।

ইউনূস ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালত ইউনূসের আবেদন নাকচ করে দেন। ইউনূসের ইস্যু নিয়ে সরকারের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নানা টানাপোড়ন চলছে। যখন দুর্নীতি দমন কমিশন ড. ইউনূসের ব্যাপারে তদন্তের সিদ্ধান্ত নেন, ঠিক সেই সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস দুর্নীতি দমন কমিশনে ছুটে গিয়েছিলেন। এখন হাইকোর্টের রায়ের ফলে ইউনূস যেমন চাপে পড়বে, তেমনি অস্বস্তি তৈরি হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যমত বিশ্বস্ত বন্ধু ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ঘিরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে নানা সময় বিভিন্ন পর পরিকল্পনা করছে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কর ফাঁকির মামলাটি সম্পূর্ণ আইনি লড়াই। এর সাথে কোন রাজনীতির সম্পর্ক নেই। এটি আইনগত বিষয়। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত স্বাধীনভাবে চলে। কাজের কোন রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের আলোকে এই ধরণের রায় হয়নি। আইন যে সবার জন্য সমান সেটি এই রায়ের মধ্যে দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে। তবে দুর্নীতি দমন কমিশন ইউনূসের বিরুদ্ধে যে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেই মামলাটি নিয়ে চিন্তিত ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

এখন দেখার বিষয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে যখন আইনি লড়াই চলছে তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে নমনীয় হয় কিনা এবং সংবিধান সম্মতভাবে আগামী নির্বাচন করার ব্যাপারে একটি সহমত অবস্থানে আসতে পারে কিনা। এখন পর্যন্ত সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কাছে নতি স্বীকার করেনি। এখন দেখার বিষয় চাপ এবং পাল্টা চাপে কে জয়ী হয়।

 

Leave a Comment