বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাকে খুঁটির সাথে বেঁধে নির্মম নির্যাতন

দীর্ঘ ১৬ বছর পর গ্রামে ফেরা এক বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাকে পূর্ব শত্রুতার জেরধরে আটক করে খুঁটির সাথে বেঁধে নির্মম নির্যাতন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আব্দুল মজিদ সরদার (৭২) নামের ওই বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করা হয়েছে।

একই সময় ওই মুক্তিযোদ্ধার সাথে থাকা আজাহার ওরফে মনু (৬৫) নামের আরেক বৃদ্ধকে হাঁতুড়ি পেটা করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীরনগর (আগরপুর) ইউনিয়নের ঠাকুরমল্লিক গ্রামের কবিরাজ বাড়ি সংলগ্ন এলাকায়। খবর পেয়ে স্থানীয় পুলিশ ক্যাম্পের একদল সদস্য গুরুত্বর অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধাসহ আহত দুইজনকে উদ্ধার করে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধাসহ দুইজনকে অমানুষিক নির্যাতনের ঘটনাটি ধাঁমাচাপ দিতে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ভিন্ন কর্মসূচী পালন করা হয়েছে। এমনকি ওই কর্মসূচীতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়কে তার নিজ উপজেলা বাবুগঞ্জে অবাঞ্ছিত করার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার সকালে শেবাচিমে চিকিৎসাধীন বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ সরদার টাইমস অফ বিডিকে বলেন, ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সরদার তারেকুল ইসলাম তারেক ও তার সহযোগীরা প্রকাশ্যে তাদের ওপর হামলা চালিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করেছে। তিনি আরও জানান, দীর্ঘ ১৬ বছর পর গত ৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাতটার দিকে তিনি (মজিদ সরদার) বাহ্মদিয়া গ্রামের আজাহার ওরফে মনুকে সাথে নিয়ে তার পিত্রালয়ে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে স্থানীয় কবিরাজ বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় পৌঁছলে তারেকের সহযোগীরা অস্ত্রের মুখে তাদের জিম্মি করে প্রকাশ্যে হামলা চালায়। একপর্যায়ে তাদের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে নিয়ে খুঁটির সাথে বেঁধে নির্মম নির্যাতন করা হয়। তিনি আরও জানান, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তারেক নিজে তার (মুক্তিযোদ্ধা মজিদ) বাম হাতের আঙুল হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে থেতলে ও কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছে।

মুক্তিযোদ্ধা মজিদ সরদার ও তার সাথে থাকা আজাহার ওরফে মনুকে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তারেকুল ইসলাম তারেক বলেন, হামলা বা নির্যাতনের কোন ঘটনা ঘটেনি। উল্টো অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, উল্লেখিত দুই ব্যক্তিসহ ৭/৮ জনের একটি সন্ত্রাসীদল আমাকে হত্যার উদ্দ্যেশে এলাকায় অবস্থান নিয়েছিলো। বিষয়টি এলাকাবাসী জানতে পেরে সন্ত্রাসীদের ধাওয়া করে। এসময় অন্যান্যরা পালিয়ে গেলেও মজিদ সরদার ও মনুকে এলাকার লোকজনে আটক করে গণধোলাই দিয়েছে। এ ঘটনায় সোমবার দিবাগত রাতে তিনি (তারেক) নিজে বাদী হয়ে মজিদ ও মনুসহ বেশ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

বাবুগঞ্জ থানার ওসি মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, হামলার স্বীকার বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ সরদার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সরদার তারেকুল ইসলাম তারেকের পিতার হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। মজিদ সরদার ও সাবেক চেয়ারম্যান তারেক একই বাড়ির বাসিন্দা হলেও দীর্ঘদিন পর মজিদ সরদার গ্রামে আসায় তারেক অনুসারীদের সন্দেহ হয়। যে কারণে তারেকের অনুসারীরা মজিদ সরদারসহ তার সাথে থাকা মনুকে মারধর করেছে।

Leave a Comment