পরিবারের কেউ মারা গেলে আঙুল কেটে ফেলতে হয় যে নারীদের

বিশ্বের মোট দেশের সংখ্যা ১৯৫টি। এর মধ্যে দুটি দেশ বাদে অন্য সবগুলোই জাতিসংঘ স্বীকৃত। তবে এর আনাচে কানাচেরয়েছে অনেক জাতি। যারা এখনো সভ্য জগত থেকে যোজন যোজন দূরে। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও তারা জানেন না প্রযুক্তিরব্যবহার, জানেন না বাইরের বিশ্বে কী ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত। নিজেদের গণ্ডি পেরিয়ে বেরিয়ে আসতেও চান না তারা।

তেমনই এক জাতি দানি উপজাতি। মোমের নিচে যেমন অন্ধকার, ঠিক তেমনই এই জাতির ইতিহাস। ইন্দোনেশিয়ারইন্দোনেশিয়ার জয়াউইজায়া প্রদেশে তাদের বাস। সেখানে আধুনিকতা পেরিয়ে অত্যাধুনিকের পথে এগিয়েছে সভ্যতা। সেখানেআজও তারা মেনে চলেন তাদের প্রাচীন রীতিনীতি। সেসব এতটাই অদ্ভুত এবং বীভৎস যা শুনলে রীতিমত শরীরে কাঁটা দিয়েউঠতে পারে আপনার।

এই প্রাচীন উপজাতির মধ্যে আজও বীভৎস এক রীতি প্রচলিত আছে। পরিবারের কেউ মারা গেলে ঘরের নারী সদস্যদের একটিআঙুল কেটে ফেলতে হয়। এটা তারা করেন মূলত প্রিয়জনের স্মৃতির উদ্দেশে। এটি শুধু নারীরাই করেন। ঘরের পুরুষ সদস্যেরআঙুল কাটতে হয় না এই প্রথায়।

তাদের এই উদ্ভট প্রথার নাম ইকিপালিন। প্রথা অনুযায়ী, পরিবারের কোনো পুরুষ সদস্য মারা গেলে তার প্রিয়জন হাতের একটিআঙুল কেটে ফেলেন। তবে পুরো আঙুল কাটেন না তারা। শুধু আঙুলের উপরের অংশ কেটে ফেলেন পরিবারের যে কোনোএকজন নারী। তাকে হতে হবে পরিবারের সবচেয়ে কাছের কেউ।

দানি উপজাতির লোকেরা বিশ্বাস করেন, যথাযথভাবে ইকিপালিন পালন করলে মৃত ব্যক্তির আত্মা শান্তি পায়। ইকিপালিনে যেনারীর আঙুল কাটা হবে, তার আঙুলটি প্রথমে শক্ত করে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়। যেন আঙুলটির রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়েযায়। এরপর ধারালো কুঠার দিয়ে কেটে ফেলা হয় সেই আঙুলটি।

আঙুলের মাথা কেটে ফেলার পর যখন গলগল করে রক্ত বেরিয়ে আসে, তখন সেই রক্তপাত বন্ধ করার জন্য আছে আরও নিষ্ঠুরপন্থা। আঙুলের ডগা আগুনের কাছে এনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এমন নিষ্ঠুর প্রথা হাজার হাজার বছর ধরে পালন করে আসছেনদানি উপজাতিরা।

এই উদ্ভট প্রথার পিছনে দানি উপজাতির আরও একটি ভাবনা কাজ করে। তারা মনে করেন, যে মানুষটি মারা গেছেন, তারমৃত্যুর বেদনা এই তীব্র শারীরিক যন্ত্রণার মাধ্যমে ভুলে থাকা যাবে। শরীরের ক্ষত ম্লান করে দেবে মনবেদনা। এক সপ্তাহ গোসলওকরেন না পরিবারের কেউ।

এই জাতির কথা প্রথম জানা যায় ১৯৩৮ সালে। একজন আমেরিকান অভিযাত্রী, রিচার্ড আর্চবোল্ড এই অঞ্চলে প্রথম দানিজাতির দেখা পান। যদিও তারা তাকে খুব ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। কাছে ঘেঁষতেই দেয়নি তাকে। তবে তিনি জানিয়েছিলেন এইউপজাতির সংখ্যা ওই অঞ্চলে প্রায় লাখ ৫০ হাজারের আশেপাশেই হবে।

১৯৭০ এর দশকের গোড়ার দিকে ইন্দোনেশিয়ার সরকার দানি জাতিকে সভ্যতার মূল স্রোতে আনতে চেয়েছিল। নগ্ন এই জাতিরজন্য শুরু করেছিলঅপারেশন কোটেকা এটি ছিল তাদের দানি পুরুষের নিম্নাঙ্গে ছোট একটি কাপড় দিয়ে আবৃত করার ব্যর্থপ্রয়াশ।

তবে কাপড় ব্যবহার না করলেও দানিরা শুকনা লাউয়ের খোসা দিয়ে তৈরি এক ধরনের খোলস ব্যবহার করেন নিম্নাঙ্গে। ২০১৬সালে হ্যান লিন নামের একজন ফটোগ্রাফার পাপুয়া নিউ গিনির যে অঞ্চলে ওই উপজাতির বাস সেখানে চারদিন ছিলেন। তারক্যামেরায় বন্দি হয় এই জাতির নানান অজানা কাহিনি।

এই জাতির বেশিরভাগ নারী বিশেষ করে যারা বয়স্ক তাদের হাতের কয়েকটি আঙুল কাটা। নিজেদের সংস্কৃতি আইনে চলেতারা। তবে তাদের মধ্যে অনেকের ছিল কান কাটা। এটিও নাকি ইকিপালিনের অংশ। তারা সবসময় মুখে ছাই এবং কাদামাটিরপ্রলেপ দিয়ে রাখে। এখনো শিকার করেই আসে খাদ্যের যোগান।

নিষ্ঠুর এই প্রথা বন্ধ করতে ইন্দোনেশিয়ার সরকার অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। আগের চেয়ে ইকিপালিনের দাপট অনেক কমেছে।তবে আজও তা নির্মূল হয়নি। দানিরা এখনো মেনে চলেন পূর্ব পুরুষের রেখে যাওয়া নিষ্ঠুর এই প্রথা। তবে জাতি হিসেবে দানিরাখুবই সহজ সরল। নিজেদের মধ্যে ঐক্য রেখেই চলেন তারা।

সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান নাইজেরিয়া

Leave a Comment