তুমি আর বাসায় এসো না। দু-চোখ যেদিকে যায়, সেদিকে চলে যাও।

শাকিলা বেগম। ঠিকানা না জানা ৮০ বছরের বৃদ্ধা গত ১০ দিন ধরে দিনাজপুরের হিলির সিপি মোড়ে অবস্থান করছেন।ঠিকানা বিহীন এই বৃদ্ধা জানিয়েছেন, ঢাকায় ছেলের সঙ্গে থাকতেন তিনি। কয়েক দিন আগে কাপড়ের ব্যাগ হাতে দিয়ে তাকে বাসে তুলে ছেলে বলেছেন, ‘তুমি আর কখনো বাড়িতে আসার চেষ্টা করবে না, যেদিকে চোখ যায় সেদিকে চলে যাও।

শনিবার (২২ জুলাই) সকালে গণমাধ্যমকে এসব জানান বৃদ্ধা শাকিলা বেগম।

একমাত্র ছেলে ছেলের বউ প্রায়ই মানসিক নির্যাতন করতেন বলে অভিযোগ করে বৃদ্ধা বলেন, ‘কয়েক দিন আগে ছেলে ছেলের বউ পরনের কিছু কাপড় চোপড়সহ একটি ব্যাগ হাতে ধরিয়ে দিয়ে বাসে তুলে দেন। বা সে তুলে দেওয়ার সময় ছেলে মাকে বলেছেন, ‘আর কখনোই বাড়িতে আসার চেষ্টা করবে না। যেদিকে চোখ যায় সেদিকে চলে যাও তুমি।

ইতোমধ্যে শাকিলা বেগমকে উদ্ধার করে হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তার পরিবারকে খুঁজে বের করারচেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

শাকিলা বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে জানান, স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে ছেলের সঙ্গেই থাকতেন তিনি। তবে ছেলের বাসা ঢাকা শহরের কোথায়, সেটা তিনি বলতে পারছেন না। বয়সের ভারে স্বামীর নামও ঠিক মতো বলতে পারছেন না। তার একমাত্র ছেলে জামিল হোসেন। ছেলের চার মেয়ে। তাদের মধ্যে তিন মেয়ের বিয়ে হয়েছে।

চোখের পানি মুছতে মুছতে তিনি বলছিলেন, ‘বাসে তুলে দেওয়ার পর আমি বাসের হেল্পার ছেলের কাছে মোবাইল নম্বর চাইছিলাম। সে তার নম্বর দেয়নি।

পরে বাসের ড্রাইভার তাকে হিলি সিপি মোড়ে নামিয়ে দেয় বলে জানান বৃদ্ধা।

হিলি সিপি সড়ক এলাকার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম সুইট বলেন, গত ১৪ জুলাই রাত থেকে ওই বৃদ্ধা তার বাড়ির বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছেন।নিজের ছেলের নাম ছাড়া আর কিছু জানাতে পারেননি। অনেকটা উর্দুভাষী টান রয়েছে তার কথায়। পাশের দোকান থেকে পুরি রুটি সংগ্রহ করে খেলেও অন্যের দেওয়া টাকা বা খাবার নিচ্ছেন না। বাড়িতে ফিরে যাওয়ার কথা বললে তিনি বলেছেন, বাড়িতে গেলে ছেলে ছেলের বউ আবারও বাড়ি থেকে বের করে দেবে।

পরিবারকে হারিয়ে অনেকটা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বৃদ্ধা। পরে বিষয়টি হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) থানার ওসিকে জানানো হয়। তাদের পরামর্শে গতকাল রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেভর্তির ব্যবস্থা করেছেন। পরিবারকে না পাওয়া পর্যন্ত তিনি সেখানে স্বাস্থ্যসেবা খাবার পাবেন।

বর্তমানে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন শাকিলা খাতুন। আজ সকালে হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শ্যামল কুমার দাস গণমাধ্যমকে বলেন, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় শাকিলা বেগমকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়েছে।

তার পরিবারের ঠিকানা জানার চেষ্টা চলছে। পরিবারকে খুঁজে পাওয়া গেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়েছেন হাকিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সায়েম মিয়া।

Leave a Comment