ডাক্তারদের বলা হল শুধু পানি আছে,ইফতার শেষ

সারাদিন রোজা রেখে ডিউটি করে ইফাতারের সময় ইফতার পাননি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসক। ইফতার না দেয়ার অভিযোগ উঠেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। ১৬ এপ্রিল, রবিবার হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের কয়েকজন চিকিৎসক ইফতার চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, শুধু পানি আছে, ইফতার শেষ।

এমনই অভিযোগ করে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন ইফতার না পাওয়া চিকিৎসকের সহকর্মী কার্ডিওলজি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মারুফ রায়হান খান।

তার পোস্টটি নিচে হুবুহু তুলে ধরা হলো-

“আজকে ইফতারি না করেই থাকতে হচ্ছে। খাবার নাকি শেষ।”  

“সরি, কর্তৃপক্ষের কাছে ইফতার চেয়ে আমি দুঃখিত এবং কিছুটা লজ্জিত। ইনশা আল্লাহ আর চাইব না”

বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ মেডিকেল কলেজ হসপিটালে দুটো আলাদা ডিপার্টমেন্টে এখন ডিউটিরত দুজন চিকিৎসকের কথা উপরের দুটো। হ্যাঁ, আপনি বিশ্বাস না করলেও এটা সত্যি যে আজ তাদের কোনো ইফতার ছিল না পানি ছাড়া।

আজ যিনি ডিউটি করছেন তিনি আমার অত্যন্ত প্রিয় ভাইয়া এবং অজ্ঞাতকারণে আমাকে বিশেষ স্নেহ করেন। বিকেলে ফোন দিয়েছেন। মারুফ, তুমি চলে আসো একসাথে ইফতার করি। একা একা ভালো লাগবে না। বাসা থেকে এতোদূর হেঁটে হসপিটালে যেতে ইচ্ছে করল না। ভাইয়া পরে বললেন, আসোনি খুব ভালো করেছো। ইফতার ছিল না৷ আমি ভাবছিলাম, আমি আজ উনার ইনভাইটেশনে ইফতার করতে গেলে কী লজ্জাটাই না তিনি পেতেন।

একটা মানুষ সেই কখন থেকে ডিউটি করছে। পরিবার ছেড়ে বাইরে। একদিকে ভয়াবহ করোনার আতঙ্ক। এসিবিহীন কক্ষে পিপিই পরে ডিউটি করা। রোজা। ক্ষুধা। তৃষ্ণা। ক্লান্তি। নতুন রোগী ভর্তি করা। পুরনো রোগীদের দেখভাল করা। আর সারাটিদিন পর এই মানুষটি ইফতার পেলেন না। যেহেতু হসপিটাল থেকে ইফতার দেবে তাই তিনি আর অন্য চিন্তা করেননি। ইফতারের আগমুহূর্তে জানা গেলো খাবার শেষ। তিনি বলছিলেন, “আমার ইফতার নেই মেনে নিয়েছি। কিন্তু আমার আন্ডারে যারা ছিলেন তারা কেউই ইফতার পায়নি। এটা আমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে।”

বাহ ডাক্তার বাহ! এজন্যই ডাক্তাররা আজ লজ্জা পায় নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিতে৷ এদের মানুষই মনে করে না৷ উনারা যারা আজ ইফতার পাননি তাদের বাসায় ভিখিরি এলেও অনেক উন্নতমানের ইফতার পায়। না খেয়ে থাকে না এলাকার কুকুরটিও। কী ভীষণ মন খারাপ লাগছে উনাদের জন্য বলে বোঝাতে পারব না।

যে সমাজ একজন ডাক্তারকে ইফতারের সময় অভুক্ত রাখতে পারে, সে সমাজের চিকিৎসার দরকার কী? এরা যদি একদিন আল্লাহর কাছে সব বলে দেয়?

Leave a Comment