ইন্টারনেট ব্যবহারই ৮৬ শতাংশ তরুণ শিক্ষার্থীর মানসিক সমস্যার কারণ: সমীক্ষা

বর্তমানে তরুণ শিক্ষার্থীরাই বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। কিন্তু এই ইন্টারনেট ব্যবহারই ৮৫ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থীর মানসিক সমস্যার কারণ।

এক সমীক্ষা চালিয়ে এমন তথ্য জানিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশন। দেশের ১ হাজার ৭৭৩ জন শিক্ষার্থী এই সমীক্ষায় অংশ নেন। এর মধ্যে ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ কলেজ পড়ুয়া, ৬৪ দশমিক ৩ শতাংশ স্নাতক পর্যায়ের, ৮ দশমিক ৪ শতাংশ স্নাতকোত্তর পর্যায়ের এবং ৮ দশমিক ৭ শতাংশ চাকরিপ্রত্যাশী।

আজ শনিবার ‘শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রভাব: কতটুকু সতর্ক হওয়া জরুরি?’ শীর্ষক সমীক্ষার ফল এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়।

সমীক্ষার তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ৩৮ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষার্থী পড়াশোনাবিষয়ক কাজে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। ৬৭ দশমিক ৫ শতাংশ অবসর কাটাতে, ৪২ দশমিক ৯ শতাংশ যোগাযোগে, ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ অনলাইন গেম খেলতে বা ভিডিও দেখতে, ১২ দশমিক ৬ শতাংশ অনলাইনে কেনাকাটা এবং ৮ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রয়োজনে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, বিশেষ করে ১৯-৩০ বছর বয়সী যে তরুণ যুবক গোষ্ঠী আছে তাদের হতাশা, বিষণ্নতা এবং অন্যান্য সামাজিক-মানসিক অস্থিরতা আগের তুলনায় অনেক বেশি। এদের মধ্যে আত্মহত্যার হারও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে ইন্টারনেট কিছুটা দায়ী বলেও প্রতীয়মান হচ্ছে।

ইন্টারনেটের অপরিমিত ব্যবহার
ইন্টারনেটের অপরিমিত ব্যবহার করছেন ৬২ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। সমীক্ষায় বলা হয়, দিনে ১১ ঘণ্টার ওপরে অনলাইনে থাকেন ৬ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষার্থী। ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ৮ থেকে ১০ ঘণ্টার মতো ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। ৫ থেকে ৭ ঘণ্টা ইন্টারনেটে থাকেন ৩৬ দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী এবং ৩২ দশমিক ৩ শতাংশ ব্যবহার করেন ২ থেকে ৪ ঘণ্টার মতো।

পড়াশোনা হুমকিতে
ইন্টারনেট ব্যবহারে আসক্তি অনুভব করেন ৯১ শতাংশ শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে ‘খুব বেশি আসক্ত’ ২২ দশমিক ৪ শতাংশ, ‘মোটামুটি আসক্ত’ ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ‘অল্প আসক্ত’ ২০ দশমিক ৯ শতাংশ।

পর্নোগ্রাফিতেও আসক্তি 
সমীক্ষার তথ্য বলছে, ৩২ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফি বা যৌন উত্তেজক বিষয় সম্পর্কিত ওয়েবসাইট দেখেন। এদের মধ্যে ৩৫ দশমিক ১ শতাংশ শিক্ষার্থীর মাথায় এবিষয়ক চিন্তা আসে। ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী সব সময় এ ধরনের কাজে আগ্রহ অনুভব করেন, ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ হীনম্মন্যতায় ভোগেন, ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ বিপরীত লিঙ্গের মানুষকে অসম্মানের দৃষ্টিতে দেখেন, ১০ দশমিক ৫ শতাংশ অনৈতিকভাবে যৌনতৃপ্তি উপভোগ করেন।

লাইক কমেন্টও ফেলছে প্রভাব
সমীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর আত্মবিশ্বাস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইক, কমেন্টস, শেয়ার কিংবা ফলোয়ার সংখ্যা বাড়া বা কমার ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে। তবে ৩৫ দশমিক ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী জানান, তাদের আত্মবিশ্বাসের ওপর এমন প্রভাব মাঝেমধ্যে পড়ে।

সামগ্রিক বিষয়ে আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট তানসেন রোজ বলেন, “আমাদের দেশে বিনোদনের ক্ষেত্রগুলো প্রায়ই সংকীর্ণ হয়ে গেছে। ইন্টারনেটে আমাদের মনোযোগ ঘোরানোর অসংখ্য উপাদান রয়েছে। তাই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ডিজিটাল লিটারেসি না থাকায় তারা ফাঁদে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়।”

এ ছাড়া সমীক্ষায় ইন্টারনেটের প্রভাবে পারিবারিক, ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়া, ঘুম ও শারীরিক সমস্যা, আচরণগত পরিবর্তনের কথাও উঠে এসেছে। একই সঙ্গে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে ডিজিটাল লিটারিসি প্রোগ্রাম চালু, খেলাধুলা ও ব্যায়ামাগারের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করাসহ ১০ দফা সুপারিশ করা হয়।

 

 

Leave a Comment