নাজির আহমেদ আল-আমিন,ভৈরব(কিশোরগঞ্জ): ক্রিকেট খেলা সার্বজনীন খেলা হলেও এই ক্রিকেট এখন জুয়াবাজির অন্যতম কারণ হিসেবে স্থায়ী রুপ নিয়েছে সর্বত্র। চলতি মৌসুমের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ (আইপিএল) ক্রিকেট খেলায় কিশোরগঞ্জের ভৈরবে জমজমাট ভাবে দিন দিন বেড়েই চলছে আইপিএল জুয়া । শুধু বিত্তশালীরাই নয় আইপিএল জুয়ায় ক্রমেই আসক্ত হয়ে পড়ছেন দিনমজুর, চা-দোকানী, রিক্সা ভ্যানচালক, সিএনজি চালক, গ্যারেজ ব্যবসায়ী, মাছ ব্যবসায়ী, মুদি দোকানী, বিভিন্ন কাপড়ের দোকানের মালিক কর্মচারী, ভ্যারাইটিজ ষ্টোরের মালিক কর্মচারী ও স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও মেতে উঠেছে আইপিএল জুয়ায়।
বিভিন্ন কর্মস্হলে কর্মরত অনেক শ্রমিক রিক্সা ভ্যানচালক, চা-দোকানী ব্যবসায়ীও আইপিএলের জুয়ায় প্রতিদিনের রোজগার ও আগাম মাসিক বেতনের টাকা ও একদিনেই হেরে যাচ্ছেন। অনেকে আবার নিজের অটো-বাইক ও গৃহকাজের প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়েই ধরছেন বাজি। আইপিএল বাজি এখন ভৈরবে মহামারী আকারে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। দিন যত গড়াচ্ছে জুয়ার মাঠ তত বেশি গরম হচ্ছে। ম্যাচ শুরু হওয়ার আগেই আইপিএল জুয়াড়িরা কার সঙ্গে কে বাজি ধরবেন এনিয়ে দালালও নিয়োগ করা থাকে। এজন্য দালালরা পেয়ে থাকেন কিছু কমিশন বিজয়ীদের কাছ থেকে। অনেক জুয়াড়ি নিজের কাছে রাখা গচ্ছিত টাকা হেরে চড়া সুদে বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে ধরছেন বাজি।
ফলে আইপিএলের জুয়ার বাজারে সুদি ব্যবসায়ীদের ব্যবসা এখন জমজমাট। তাছাড়া অনেক শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা সন্তানদেরকে আইপিএল জুয়া থেকে বিরত রাখতে না পেরে নিজ গৃহের ডিসলাইন সংযোগ বিছিন্ন করে দিয়েছেন। তার পরও কোন ক্রমেই বন্ধ করা যাচ্ছেনা আইপিএল জুয়া। এছাড়া ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ আইপিএলের জুয়ায় বাজি ধরে লাখ লাখ টাকা হেরে সর্বস্বান্ত হয়ে দেনার দায়ে অনেকেই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আবার অনেক যুবকই বাজি ধরে হয়েছেন লাখ লাখ টাকার মালিক। প্রতিদিন ম্যাচ শুরু হওয়ার আগেই জুয়াড়িরা লাখ লাখ টাকার বাজি ধরছেন।
আইপিএল ২০১৮ সালের এবারের দলগুলো হল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ, দিল্লি, রাজস্থান, ব্যাঙ্গালুর, চেন্ন্াই , মুম্বাই, কলকাতা ও পাঞ্জাব। এসব দলের মধ্যে প্রতিটি ম্যাচেই হচ্ছে লাখ লাখ টাকার জুয়াবাজি। আইপিএলের আসর শুরু হওয়ার পর থেকেই এজুয়া এখন মহামারী আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন ম্যাচ শুরু হওয়ার পর থেকে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভার প্রায় গ্রামেই তরুন সমাজ ও স্বীকৃত জুয়াড়িরা এই বাজি ধরছেন ম্যাচ প্রতি লাখ লাখ টাকা এর মধ্যে সবচেয়ে বেশী জমজমাট হচ্ছে কমলপুরের গাছতলাঘাট,আমলাপাড়ার(পাকিস্তান মোড়),ভৈরব বাজারের টিন পট্টি, নিউ মার্কেট কয়েকটি দোকান,চন্ডিবের,পুলতাকান্দা,মাছ বাজারসহ কিছু মাছ ব্যবসার ঘর,কালিপুর দ:পাড়া মাদ্রাসা রোড,কালিপুর হাই স্কুল মোড়সহ উত্তর পাড়া এলাকায়।
গত কয়েক দিনে আইপিএলের জুয়ায় সর্বস্বান্ত হয়ে অনেকেই এখন পথে বসেছেন। শুধু ম্যাচই নয় প্রতিটি বলে বলে ধরা হচ্ছে বাজি। এই বলে ছক্কা হবে এই বলে চার হবে। এই বলে আউট হবে এসব নিয়েও জুয়াবাজিতে সরগরম বাজির মাঠ। খেলা শুরুর পর থেকে ভৈরবের বিভিন্ন এলাকায় বাজি ধরা হয়েছে কয়েক লাখ টাকা।
শহরের কালীপুর এলাকার কাপড় ব্যবসায়ী আইপিএল জুয়াড়ি গত আইপিএল এ ১৫ লাখ টাকা হেরে এলাকা ছেড়েছেন । এমনকি তার কাপড়ের দোকানও বিক্রি করেছেন এই খেলার ঋণ পরিশোধ করতে।
এমন দাবি মেঘনা ফেরীঘাটের মাছ বাজার এলাকার একজন মাছ ব্যবসায়ী ১৭ লাখ টাকা হেরে ব্যবসা বন্ধ করে এখন পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ।
এছাড়াও এই আইপিএল জুয়ায় রিক্সচালক, চা-দোকানী, মুদিব্যবসায়ী, দিনমজুর কিস্তি ঋনের সুদের চাপে দেনার দায়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আইপিএল জুয়ায় টাকা হেরে অনেক যুবক মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। আইপিএলের জুয়ার কারণে সমাজে নানা অপরাধ মূলক কর্মকান্ড বেড়েই চলছে ।