১৯৭৬ সালের ১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চ ভারতের পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদ। আর এই ফারাক্কা লংমার্চের মাধ্যমেই বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের বীজ বপন হয়েছিল বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া।
তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর ফারাক্কা লংমার্চ কর্মসূচী সকল আধিপত্যবাদ বিরোধী সংগ্রামে আমাদের আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবে।
বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনের যাদু মিয়া মিলনায়তনে ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চের ৪৩তম বার্ষিকী স্মরণে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ ঢাকা মহানগর আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, নদীমাতৃকার দেশ বাংলাদেশ। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, কর্ণফুলী, সুরমা, তিস্তা, বরাকসহ অসংখ্য ছোট-বড় নদ-নদী বাংলাদেশকে জালের মতো ছেয়ে রেখেছে। নদীমাতৃক এই বাংলাদেশ আজ মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। প্রতিবেশী বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের অব্যাহত পানি-সীমান্ত-সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের কারণে বাংলাদেশ আজ তার স্বাধীন অস্তিত্ব নিয়ে টিকে থাকবে কিনা সে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আর তাদের আগ্রাসনের পক্ষে কাজ করছে শাসকগোষ্ঠীর ভেতর লুকিয়ে থাকা তাদেরই এ দেশীয় এজেন্টরা।
ন্যাপ মহাসচিব বলেন, ভারত উজানের রাষ্ট্র হিসেবে ভাটির দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে সৎ প্রতিবেশী হিসেবে আচরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফারাক্কা সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ সরকার টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের পক্ষে দেশের স্বার্থবিরোধী ওকালতি করছে। যারা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারে না তাদের ক্ষমতায় থাকার বা যাবার অধিকার থাকে না। প্রতিবেশী বন্ধুরাষ্ট্র মূলত দুটি উদ্দেশ্যে পানি আগ্রাসন অব্যাহত রেখেছে। এর একটি হচ্ছে রাজনৈতিক কারণে পানিকে ব্যবহার করা আর রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রন করা ও পঙ্গু রাষ্ট্রে পরিণত করা। ভারতসহ সকল আধিপত্যবাদী শক্তির আগ্রাসন রুখতে হলে দেশের জনগনের ঐক্যকে শক্তিতে পরিণত করতে হবে। ভারতের পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর মতো নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ফারাক্কা বাঁধের ফলে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলকে মরুভূমিতে পরিনত করেছে এবং টিপাইমুখ বাঁধ নির্মানের মাধ্যমে আবারো দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে মরুভূমিতে পরিনত করার যে ষড়যন্ত্র করছে তার বিরুদ্ধে দেশের সকল দেশপ্রেমিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর পদর্শিত পথই হচ্ছে ভারতের অব্যাহত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পথ। ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক হতে হবে সমমর্যাদার ভিত্তিতে কার্যকরী সম্পর্ক। আমরা শুধু ভারতে দিয়ে যাব বিনিময়ে আমরা কিছুই পাবো না তা হতে পারে না।
ন্যাপ ঢাকা মহানগর সভাপতি মো. শহীদুননবী ডাবলু’র সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশগ্রহন করেন গণতান্ত্রিক ঐক্যের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম, এনডিপি মহাসচিব মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা, ন্যাপ ভাইস চেয়ারম্যান কাজী ফারুক হোসেন, স্বপন কুমার সাহা, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ কামাল ভুইয়া, নগর সাধারন সম্পাদক অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম, সহ-সম্পাদক সাদিয়া ইসলাম ইমন প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে মো. শহীদুননবী ডাবলু বলেন, ভারতের সাথে বাংলাদেশের অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে বাংলাদেশের শাসকগোষ্টি কখনো সোচ্চার নন। ভারতের পানি আগ্রাসন রুখতে হলে ১৬কোটি মানুষের ঐক্যকে শক্তিতে পরিনত করতে হবে। ভারত সীমান্ত ও পানি নিরাপত্তা দিতে চরম ব্যর্থ হয়েছে।