মেহেদীজ্জামান গবি সংবাদদাতা :
চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলছে । খুলনা থেকে ঈশ্বরদী জংশন ও বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থেকে টাঙ্গাইল স্টেশন পর্যন্ত সম্প্রতি ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা বেড়েছে । পাথরের আঘাতে যাত্রীদের অনেকেই গুরুতর আহত হচ্ছেন । এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটেছে । গত বছরের এপ্রিলে পাথরের আঘাতে মারা যান রেলওয়ের এক কর্মকর্তা । শুধু পাথর নয় , ঘটছে মলমূত্র ও আবর্জনা নিক্ষেপের ঘটনাও । রেলওয়ের কর্মকর্তাদের ধারণা , বিপথগামী শিশু – কিশােরেরা এর সঙ্গে জড়িত । রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে , গত বছরের ৪ জুলাই থেকে চলতি বছরের ৭ এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের পাকশী বিভাগে পাথর নিক্ষেপের মােট ৩২টি ঘটনা ঘটেছে । পাথরের আঘাতে গুরুতর আহত হয়েছেন তিন শিশুসহ ১১ জন । মারা গেছেন এক রেলওয়ের কর্মকর্তা । পাকশী রেল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে , প্রায়ই বিভিন্ন স্থানে চলন্ত ট্রেনে পাথর ছুড়ে মারায় আহত হচ্ছেন অনেকে । হামলায় আহত ব্যক্তিরা ট্রেন ভ্রমণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন । শুধু পাথর নয়, চলন্ত ট্রেনে মলমূত্র ও ময়লা – আবর্জনাও নিক্ষেপ করা হচ্ছে । পাথরের আঘাতে ট্রেনের জানালা , দরজা , কাচ এবং লাইট ফ্যানসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ।
সবচেয়ে বেশি পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থেকে ঈশ্বরদী , টাঙ্গাইল থেকে মির্জাপুর , পার্বতীপুর থেকে নীলফামারী , খুলনা বেজেরডাঙা থেকে সৈয়দপুর এবং যশাের থেকে নওয়াপাড়া । স্টেশন পর্যন্ত । গত ১০ মাসে পাকশী রেল বিভাগে । পাথর নিক্ষেপের ৩২টি ঘটনা ঘটেছে । এতে ১১ যাত্রী আহত হয়েছেন । আর গত বছরের ৩০ এপ্রিল মারা গেছেন রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা । এ বিভাগে সর্বশেষ পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে গত ৭ এপ্রিল । ওই দিন চিলাহাটীমুখী রূপসা ট্রেন । বিরামপুর থেকে ফুলবাড়ী স্টেশনে পৌঁছানাের সময় পাথর নিক্ষেপ করা হয় । এতে ট্রেনের খাবার গাড়ির ( বগি ) জানালার কাচ ভেঙে ভেতরে পাথর ঢুকে এক যাত্রীর পায়ে আঘাত লাগে ।
এ ঘটনায় ওই ট্রেনের যাত্রী রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক রাজিবুল ইসলাম একটি লিখিত অভিযােগ দেন । রাজিবুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলােকে বলেন , ইদানীং চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কের মধ্যে ট্রেনে যাতায়াত করতে হচ্ছে । এর আগে গত ৫ মে রাজশাহী যাওয়ার সময় ঈশ্বরদী স্টেশনে প্রবেশের আগে রকেট মেইল ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ করা হয় । পাথরটি জুথি আক্তার নামের ১৩ বছরের এক শিশুর কপালে আঘাত করে । সঙ্গে সঙ্গে শিশুটি অজ্ঞান হয়ে যায় । রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে আসার দুই ঘণ্টা পর তার জ্ঞান ফেরে ।
পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনে দুর্বৃত্তদের নিক্ষেপ করা পাথরের আঘাতে গুরুতর আহত হয় পাঁচ বছরের শিশু ঈশানসহ দুজন । শিশু ঈশানের মাথায় । অস্ত্রপাচার করা হয় । তাঁকে ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয় । গত ১ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে জামতৈল স্টেশনের মধ্যবর্তী কোনাে স্থানে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বিকে বহনকারী রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে । এতে ট্রেনের বগির জানালার কাচ ভেঙে যায় । রাজশাহী – ঢাকা- রাজশাহী বিরতিহীন বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন চালুর পর ২ মে পর্যন্ত পরপর তিনবার পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় ওই ট্রেনের জানালার কাচ ভেঙে যায় ।
গত বছরের ৩০ এপ্রিল পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় শিকদার বায়ােজিদ নামের বেনাপােল কমিউটার ট্রেনের পরিবহন পরিদর্শক ( ট্রান্সপাের্টেশন ইন্সপেক্টর বা টিআই ) গুরুতর আহত হন । তাঁকে হেলিকপ্টারে করে চিকিৎসার জন্য প্রথমে ঢাকায় স্কয়ার হাসপাতালে ও পরে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় । চিকিৎসাধীন থাকার মাস খানিক পর তিনি মারা যান । এ নিয়ে রেলওয়ে ( জিআরপি ) থানায় মামলা হয় । পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে পরিবহন কর্মকর্তা ( ডিটিও ) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন , ইদানীং চলন্ত ট্রেনে শুধু পাথর নিক্ষেপের ঘটনাই ঘটছে না , মলমূত্র ও ময়লা – আবর্জনাও নিক্ষেপ করা হচ্ছে । এর ফলে যাত্রীদের জীবনও হুমকির মুখে ।
পাথরের আঘাতে ট্রেনের এক কর্মকর্তা মারা গেছেন । তার ধারণা , বাবা – মায়ের সুশাসন বঞ্চিত ও সামাজিক শিক্ষার অভাবে বিপথগামী উঠতি বয়সী তরুণ ও শিশুরা এর সঙ্গে জড়িত । পাথর নিক্ষেপের ঘটনা প্রতিরােধে প্রচারণা , লিফলেট বিতরণ এবং জনপ্রতিনিধি ও মসজিদের ইমামের মাধ্যমে প্রচারণা চালানাে হচ্ছে । পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপকের ( ডিআরএম ) নেতৃত্বে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ দল রেললাইন ও আশপাশের এলাকা নজরদারিতে রেখেছে । এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ের পাকশী জেলার পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম বলেন , পাথর নিক্ষেপ ঠেকাতে রেলওয়ে পুলিশ উদ্যোগী হয়ে মানুষের মধ্যে প্রচারণা চালাচ্ছে । পাথর নিক্ষেপ করলে কেমন শাস্তি হতে পারে সে বিষয়টি পুলিশ সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরছে ।