কামাল হোসেন , তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
দেশের শীর্ষস্থানীয় মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর (জিপি) গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনায় চরম ভোগান্তিতে দিন কাটছে পর্যটন অঞ্চল বলে খ্যাত সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার প্রায় দেড় লক্ষাধিক গ্রামীণফোনের গ্রাহকেদের।
তাহিরপুর সদর ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র বাদাঘাটে
বেশ কিছুদিন হলো প্রযুক্তির নতুন সেবা ৪জি চালু হলেও নামমাত্র সেবা টুকুও গ্রামীণ গ্রাহকদের মিলছে তাতে, যার ফলে গ্রামীণফোনের ইন্টারনেট স্পিড কখনো কখনো ৩জি গতিতেও দেখা মেলা এ যেন হাতে আকাশ পাওয়ার মত , এ অভিযোগ ভুক্তভোগী গ্রাহকের।
নেটওয়ার্কের এই যখন অবস্থা, তখন নতুন করে আরেক সমস্যার উদ্ভব ঘটেছে, বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের সহিত পাল্লা দিয়ে বেড়ে উঠেছে নেটওয়ার্ক ভোগান্তি। নুন্যতম নেটওয়ার্ক কাভারেজ খুঁজে পাওয়া হয়ে উঠে দুষ্কর। স্বাভাবিক ইনকামিং-আউটগোয়িং ব্যবস্থাতে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন থাকতে হচ্ছে গ্রাহকদের। এতে করে মোবাইল নেটওয়ার্কের উপর নির্ভর কার্যক্রম সমূহে সেবা পেতে গ্রাহক তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জরুরী কাজটুকুতে নেটওয়ার্ক সার্চ করতে গিয়ে অন্ধকারে হন্য হয়ে হাতড়ে বেড়াচ্ছে। আর ভোগান্তির মাত্রা কেবলি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। মিলছে না সেই নুন্যতম কাঙ্খিত নেটওয়ার্ক।
শীর্ষ অপারেটর গ্রামীণফোনের এমন নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনার শিকার হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে দৈনিক ভোরের কাগজের স্থানীয় প্রতিনিধি সাজ্জাদ হোসেন শাহ্ ও দৈনিক সংবাদের স্থানীয় প্রতিনিধি কামাল হোসেন জানান, শুরু থেকে আজ অবধি জিপির মোডেম ও ইন্টারনেট সিম পেশাগত ও ব্যক্তিগত কার্যক্রমে ব্যবহার করে আসছি কিন্তু ইদানিং জিপির নেটওয়ার্কের এমন বিড়ম্বনায় সত্যিই হতাশা ব্যক্ত না করে পারছিনা। আমাদের পেশাগত তথ্য আদান প্রদান ব্যহত হচ্ছে মারাত্মক ভাবে। তাই খুব শীগ্রই নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনার এ বিষয়টি সমাধানে কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ নিবেন বলে আমরা আশাবাদী।
ক্যাবল ব্যবসায়ী জাকির হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ডিজিটাল যুগে আজও আমাদের বাজারে কোনো মোবাইল কোম্পানির নেটওয়ার্ক ঠিক মতো পাই না। এ বিষয় কোম্পানিগুলোর অফিস এবং হেল্পলাইনে একাধিকবার জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি।’
বাদাঘাট বাজারের একাধিক মোবাইল নেটওয়ার্ক নির্ভর ব্যবসায়ী, জননী টেলিকমের কর্ণধার সবুজ আহমেদ, কলি এন্ড কায়েস টেলিকমের শহিদুল ইসলাম, সততা ট্রেডার্সের মালিক রাসেল আহমেদ সহ আরো অনেকের অভিযোগ ‘আমাদের এলাকায় সব কোম্পানির নেটওয়ার্ক অত্যন্ত দুর্বল। মোবাইলে জরুরি কথা বলার সময় কলড্রপ, ইমাজেন্সি নেটওয়ার্কসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। আধুনিক প্রযুক্তির যুগে নেটওয়ার্কের এ অবস্থা মেনে নেয়া যায় না। তাই দ্রুত সমস্যার সমাধান করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’ বিশেষ করে শীর্ষ মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক ভোগান্তি মেনে নিতে কষ্টকর হচ্ছে, আমাদের মোবাইল নির্ভর ব্যবসায়িক কার্যক্রম চরম আকারে ব্যহত হচ্ছে। ব্যবসায়ীক ভাবে হচ্ছি ক্ষতিগ্রস্ত।
বাদাঘাট সরকারি কলেজের ছাত্র সুহেল আহমেদ বলেন, ‘মোবাইল নেটওয়ার্কের সমস্যার কারণে আমরা শিক্ষার্থীরা ডিজিটাল যুগেও পরীক্ষার ফলাফল, ভর্তি ও চাকরির আবেদন, মোবাইল ব্যাংকিংসহ অনলাইন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। তাই দ্রুত সমস্যার সমাধান করতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
এলাকার হাট-বাজার, ব্যবসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তথ্য প্রযুক্তি এবং অনলাইন ভিত্তিক দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তির যুগেও শীর্ষ মোবাইল কোম্পানির এমন সেবায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।
কবে নাগাদ নেটওয়ার্ক স্বাভাবিক হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামীণফোনের স্থানীয় সেলস রিপ্রেজেনটেটিভ বলেন, নেটওয়ার্ক কখন স্বাভাবিক হতে পারে তা তাদের জানা নেই, সঠিক করে বলতেও পারিনা। এ অবস্থা চলতে থাকলে গ্রাহক ক্ষুব্ধ হয়ে গ্রামীণফোন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবার আশংকা করছি। তাই দ্রুত সমস্যা সমাধানের জন্য উর্ধতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানিয়েছি, বলছেন অচিরেই এ অবস্থার অবসান ঘটবে এবং নেটওয়ার্ক তার স্বাভাবিক গতিতেই কাজ করবে।