আজ বৃহস্পতিবার। ৩০শে নভেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ। ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ। ১৫ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি। এখন সময় বিকাল ৫:৪৭

কুমিল্লায় পল্লী বিদ্যুতের ভেল্কিবাজিতে জনজীবন অতিষ্ঠ

কুমিল্লায় পল্লী বিদ্যুতের ভেল্কিবাজিতে জনজীবন অতিষ্ঠ
নিউজ টি শেয়ার করুন..

চান্দিনা ,কুমিল্লা , প্রতিনিধিঃ চান্দিনায় সামান্য বৃষ্টি,মেঘলা আকাশ আর বাতাস বইলেই গায়েব হয়ে যায় বিদ্যুৎ। এমন দুরাবস্থা গত প্রায় ২০ বছর ধরে। বিদ্যুৎ গেলে এমনও হয়, কখনো ১৮ ঘণ্টা আবার কখনো ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকে চান্দিনার বিভিন্ন এলাকা। গতকিছু দিন কালবৈশাখী ঝড়ে উপজেলার বিদ্যুতের খুঁটি-বিলবোর্ড-সাইনবোর্ড দোকানপাটের ছালা উড়িয়ে লণ্ডভণ্ড করে বিদ্যুৎ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।এতে করে গ্রাহকরদের চরম বিদ্যুৎ ভোগান্তি ও জনমনে অসহনীয় দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।

বিদ্যুৎ বন্ধ থাকার কারণে চান্দিনা বাজার সহ উপজেলা বিভিন্ন হাট-বাজারের সকল প্রকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সর্ব সাধারণের মাঝে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।এমন কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলো বিদ্যুৎ ছাড়া অচল। তন্মোধ্যে ক্লিনিকের এক্স-রে মেশিন, ওয়ার্কসপ, ছাপাখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ ছাড়া কাজ করা যায় না। এছাড়া কম্পিউটার, ফটোকপি, জুয়েলারী দোকান, কসমেটিক্স, গার্মেন্টস, ব্যাংক-বিমা অফিসগুলোতে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণের বিদ্যুতের কারণে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়।স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়া বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা ভর্তিকৃত রোগীরা সুস্থ না হয়ে আরও বেশী অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

সামান্য মেঘলা আকাশে কেন বিদ্যুৎ গায়েব হয়ে যায় এমন প্রশ্নের উত্তরে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ১ এর চান্দিনা জোনাল অফিসের কর্মকর্তাগন বলেন, কালবৈশাখী ঝড়ের কারণে বিদ্যুতের খুটি ভেঙে যাওয়া এবং কিছু এলাকায় তার ছিড়ে যাওয়ার কারণে বিদ্যুৎ কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে। বিদ্যুৎ যোগাযোগ পুরোপুরি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা কাজ করছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা জানায়,চান্দিনার বিভিন্ন অঞ্চলসহ পৌর এলাকা ও উপজেলার প্রায় সকল এলাকার বিদ্যুৎ লাইনগুলো মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ফলে এসব এলাকার ঝড়-বৃষ্টির হওয়ার আগে বা মেঘলা আকাশে হালকা বাতাসের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে।

পৌরসভাধীন চান্দিনা মডেল পাইলট স্কুলের এক শিক্ষক বলেন,মেঘলা আকাশ বা সামান্য বৃষ্টি শুরুর সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ চলে যায়। তা ছাড়া একটু দমকা বাতাস বইলে চার-পাঁচ ঘণ্টা এমনকি কোন কোন সময় তিন-চারদিন বিদ্যুৎ থাকে না। এ যন্ত্রণায় আমরা অতিষ্ঠ।

কম্পিউটার অপারেটর মো.শাহাজান জানান, বিদ্যুৎ না থাকলে কাস্টমার রীতিমত আসে না। আর বিদ্যুৎ ছাড়া জেনারেটরের মাধ্যমে কাজ করলে যে পরিমাণ খরচ হয় তা কাস্টমারদের কাছ থেকে আদায় করা যায় না।

বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মমতাজ জানান, পবিত্র মাহে রমজানের আর অল্পকয়েক দিন বাকী রয়েছে। যেভাবে লোডশেডিং ও বিদ্যুত ভেল্কিবাজী বৃদ্ধি পেয়েছে এতে করে ব্যবসায়ীরা লাভতো দূরের কথা লোকসান গুনতে হবে।মাধাইয়া বাজারের এক সেলুন মালিক রবিন্দ্র জানান, বিদ্যুৎ না থাকলে আমাদের দোকানে কোন কাষ্টমার আসে না।

জানা যায়,উপজেলায় বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করলেও সংস্কার না হওয়ায় এগুলোর অবস্থা খুবই করুণ। অনেক খুটি ও সংযোগের তার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রামঞ্চলে যে সকল কাঠের খুঁটি রয়েছে সেগুলোও জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। এর ফলে প্রবল বেগে বাতাস হলে ওই সব খুঁটি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।

বিদ্যুৎ বিভাগের এক লাইনম্যান জানান, একটু বাতাস হলেই তারে তারে ঘষা লেগে তা জ্বলে যায় কিংবা ছিড়ে যায়। লাইন মেরামত না হওয়া পর্যন্ত ওই সব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে দিনের পর দিন।এসব ঝুঁকিপূর্ণ খুঁটির কারণে লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ছেন গ্রাহকরা। একটু জোরে বাতাস শুরু হলেই বিদ্যুৎ গায়েব হয়ে যায়।উপজেলার গ্রামাঞ্চলের অবস্থা আরও খারাপ। দিনে-রাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকছে বিভিন্ন এলাকা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জরাজীর্ণ সরবরাহ লাইন, মান্ধাতা আমলের ট্রান্সফরমার এবং যখন তখন মেরামত কাজ করার কারণে ঝড়ের সময় বিদ্যুতের এই দুরবস্থা দেখা দেয়।তাই চান্দিনার গ্রাহকরা এখন মেঘলা আকাশ দেখলেই বুঝেন বিদ্যুৎ গায়েব হয়ে যাবে, কখন আসবে কেউ জানে না।এমনকি বিদ্যুৎ গেলে কখন আসবে সেই তথ্যও গ্রাহকদের জানাতে পারে না বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। বিদ্যুৎ চলে গেলে চান্দিনা বিদ্যুৎ বিভাগের টেলিফোন বা মুঠোফোন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উঠায় না কেউ।

বিদ্যুৎ গ্রাহকদের অভিযোগ, বাড়িঘর, গাছ ও বাঁশবাগানের ওপর এলোমেলোভাবে অপরিকল্পিত বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপন করায় ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিচ্ছে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য লোকসানের মুখে পড়েছে।চান্দিনা বাজারের একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী বলেন,চান্দিনায় ছোট বড় ১৫/২০টি শিল্পকারখানাসহ বড় বড় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বর্তমানে ঝড়-বৃষ্টির মৌসুম। সামান্য বাতাস হলেই বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়া হয়। বিদ্যুৎ বন্ধ হলে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টায়ও আসে না।এ জন্য জেনারেটরের ওপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছে ব্যবসায়ীরা।

বছরের পর বছর বিদ্যুৎ নিয়ে এমন ভোগান্তি থেকে চান্দিনাবাসীকে মুক্তি দিতে দ্রুত পরিকল্পিত ভাবে উপজেলার পুরানো তারগুলো সরিয়ে নতুন করে বিদ্যুত তার টানানোর দাবি চান্দিনাবাসীর।


নিউজ টি শেয়ার করুন..

সর্বশেষ খবর

আরো খবর