আজ শনিবার। ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ। ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ। ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি। এখন সময় রাত ৩:০৯

রাজশাহী সিটি কলেজ ছাত্র রাব্বি হত্যার কারণ উদঘাটনে নানা জল্পনা কল্পনা

রাজশাহী সিটি কলেজ ছাত্র রাব্বি হত্যার কারণ উদঘাটনে নানা জল্পনা কল্পনা
নিউজ টি শেয়ার করুন..

ভোর রাতে রাস্তার উপর কুপিয়ে হত্যা করা হয় রাজশাহী সিটি কলেজ ছাত্র ফারদিন ইসনা আশারিয়া ওরফে রাব্বিকে। এর কারন উদঘাটনে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা।

মঙ্গলবার বাড়িতে ফেরার আগের দিন বড় বোনকে বলেছিলেন সকালের ট্রেনে বাড়ি ফিরবেন সবার আদরের ছোট ভাই রাব্বি। সেই আশায় বাড়ির সবাই রাব্বির জন্য পথ চেয়ে বসেছিলেন। বড় বোন মোমিতা পারভীন গতকাল সকালে ছোট ভাই কতদূর জানার জন্য যখন ফোন দেন, তখন তিনি জানতে পারেন, রাব্বি আর বাড়ি ফিরবে না। ঘাতকদের চাপাতির কোপে প্রাণপ্রদীপ নিভে গেছে তাঁর। আর সেই খবরে যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে বোন মোমিতার। যে ভাইয়ের জন্য বাড়ির সবাই পথ চেয়েছিলেন, সেই ভাইয়ের লাশ নিতে তখন ছুটে যান রাজশাহীর উদ্দেশ্যে।পরে দুপুর একটার দিকে তাঁরা রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছে নিহত রাব্বির লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন দুই বোন।অন্যদিকে পরিবারের অন্য সদস্যরাও যেন শোকে পাথর হয়ে পড়েন।

নিহত রাব্বি রাজশাহী সিটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র। তাঁর বাড়ি দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার মমিনপুর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মৃত মোজাফফর হোসেন সরকারের একমাত্র ছেলে।

রাব্বিকে গতকাল মঙ্গলবার ভোর সোয়া ৫টার দিকে রাজশাহী নগরীর হেতেমখাঁ এলাকায় রাস্তার ওপরে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। রাব্বি ওই এলাকার ছোট মসজিদের পাশে একটি মেসে থাকতেন।সেখান থেকেই ভোরে ঘুম থেকে উঠে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি। রাজশাহী স্টেশন এসে ট্রেন ধরার কথা ছিল রাব্বির। কিন্তু মেস থেকে বের হয়ে পায়ে হেঁটে কিছু দূর যেতেই তাঁকে রাস্তার মধ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি মেস থেকে প্রায় ২০০ গজ দূরে। রাব্বি ওই এলাকার মুনসুর মূহরীর মেসের একটি কক্ষে থাকতেন। তাঁর সঙ্গে শাহেদ আক্তার রুদ্র নামের দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া অপর এক শিক্ষার্থীও একই কক্ষে থাকেন। রুদ্র নগরীর শাহমখদুম কলেজের ছাত্র।

পুলিশের সুরতহাল রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রায় ৫ফিট ১০ইঞ্চি লম্বা ফারদিন ইসনা আশারিয়া ওরফে রাব্বি (১৮)। তার মাথার পেছনে একটি বড় কাটা দাগা রয়েছে। এছাড়া শরীরের আর কোনো স্থানে আঘাতের চিহ্ন নাই। রাব্বির পরনে ছিল গেবাডিং প্যান্ট ও আকাশি কালার সার্ট। হাতে ছিল হাতঘড়ি। ঘটনাস্থল থেকে জব্দ তালিকায় মালামাল হিসেবে রাব্বির একটি ট্রাভেল ব্যাগ, মানিব্যাগ, একটি মোবাইল ও একটি হাতঘড়ি জব্দ দেখানো হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানার ওসি (তদন্ত) মাহবুব আলম।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার একরামুল হক বলেন, হত্যাকাণ্ডের ধরণ দেখে মনে হচ্ছে এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা। তাকে চাপাতি দিয়ে একটি কোপেই হত্যা করা হয়েছে। তবে কেন এবং কারা এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আমরা সবদিক বিবেচনা করেই হত্যাকান্ডে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাবো। আশা করি দ্রুতই ঘাতকদের আটক করা যাবে।

পুলিশ জানায়, ভোর ছয়টার দিকে রাব্বির লাশ রাস্তার ওপরে পড়ে আছে খবর পেয়ে খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে। তাকে পেছন থেকে মাথায় কোপ দিয়ে হত্যাকারীরা পালিয়ে যায়। এতে ঘটান্তলেই রাস্তার ওপরে লুটিয়ে পড়ে প্রাণ হারান রাব্বি। পুলিশ সেখানে পড়ে থাকা রাব্বির বাড়ি ফেরার জন্য ব্যবহৃত ট্রাভেল ব্যাগটি জব্দ করেছে। তবে কাউকে আটক করতে পারেনি।

নিহত রাব্বির বোন মোমিতা পারভীন পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁরা চার বোন এক ভাই। সবার ছোট ছিল রাব্বি। চার বোনের তিনজনই স্কুল শিক্ষক। অন্য এক বোন ও সবার ছোট রাব্বি এখনো পড়াশোনা করছেন। আগের দিন সোমবার তাঁর সঙ্গে মোবাইল ফোনে রাব্বির কথা হয়। ওইদিন রাব্বি বোনকে জানান, ঈদের ছুটিতে মঙ্গলবার সকাল ৬ টা ২০ মিনিটের ট্রেন ধরে রাব্বি বাড়িতে ফিরবেন। প্রতিবেশী ও সহপাঠি রিপন মাহন্তের সঙ্গে তিনি বাড়িতে ফিরবেন। কিন্তু গতকাল সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে তিনি যখন ভাইকে ফোন দেন, তখন জানতে পারেন রাব্বিকে কে বা কারা বাড়ি ফেরার পথেই রাস্তায় কুপিয়ে হত্যা করেছে। কিন্তু কেন তাঁর ভাইকে হত্যা করা হয়েছে তা তিনি কিছুই জানেন না। খবর পেয়ে পরে পরিবারের লোকজন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন রাব্বির লাশ নিতে।

রাব্বির আরেক বোন মানসুরা পারভীন মনা বলেন, ‘একমাত্র ভাইকে নিয়ে আমাদের ভালোবাসার কোনো কমতি ছিল না। তাকে অনেক আদর-ভালোবাসা দিয়ে আমরা মানুষ করেছি। আজ সেই ভাইকে খুন করলো ঘাতকরা। আমার ভাইয়ের কারো সঙ্গে কোনো ঝামেলা ছিল না। কিন্তু কেন তাকে হত্যা করা হলো। এই হত্যার বিচার আমরা চাই।’

রাব্বির সহপাঠি রিপন মাহন্ত বলেন, ‘বাড়িতে যাওয়ার জন্য আগেরদিনই মোবাইলে ফোনে কথা রাব্বির। এর ৪-৫ দিন আগে রাব্বি নগরীর ঝাউতলা এলাকার একটি মেসে থাকা রিপনের সঙ্গে দেখা করে একসঙ্গে বাড়ি যাওয়ার বিষয়টি পাকা করে আসেন। সেই অনুযায়ী গতকাল ভোর সাড়ে ৫টার দিকে রাব্বিকে ফোন দেন রিপন মহান্ত। কিন্তু রাব্বি আর ফোন ধরছিলেন। শেষে সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে পুলিশ ফোন রিসিভ করে ঘটনাস্থলে রিপনকে ডেকে নেয়।

এদিকে ইভান নামের আরকে যুবক জানান, প্রায় এক বছর ধরে রাব্বি লাইলি কোটেজ নামে নগরীর হেতেম খাঁতে অবস্থিত তাদের মেসেই ভাড়া থাকতেন। কিন্তু গত ১ আগস্ট রাব্বি সেখান থেকে ছোট মসজিদের কাছের ওই মেসে গিয়ে ওঠেন। রাব্বির বোন মনার সহপাঠি হলেন ইভান। পুলিশ প্রথমে রাব্বি হত্যাকান্ডের বিষয়টি ইভানদেরই জানান। এরপর ইভান ও ওই মেসের সহপাঠিরা রাব্বির লাশ এসে সনাক্ত করেন।

রাব্বির আরেক সহপাঠি বাদশা জানান, রাব্বির কারো সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে তাদের জানা নাই। তবে রাব্বি অনেকটা প্রতিবাদি যুবক ছিলেন। কোনো অন্যায় পছন্দ করতেন না। যা বলার মুখের ওপর স্পষ্ট করে বলে দিতেন। তার পরেও কারো সঙ্গে তার ঝামেলা বা দ্বন্দ্ব ছিল বলে তাদের জানা নাই।

এদিকে কলেজ ছাত্র রাব্বি হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান রাজশাহী সিটি কলেজের অধ্যক্ষ সানাউল্লাহ শেখ। তিনি বলেন, ‘রাব্বি মেধাবী শিক্ষার্থী। তার সঙ্গে কারো ঝামেলা আছে বলে জানা নাই। কিন্তু কেন তাকে এভাবে খুন করা হলো ভাবতেই শরীর শিউরে উঠছে।

এদিকে পুলিশের একটি বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করেছে, গতকাল ভোরে যখন রাব্বিকে খুন করা হয়, তখন ওই রাস্তা দিয়ে একজন বৃদ্ধ মসজিদে নামাজ আদায় করতে যাচ্ছিলেন। তিনি রাব্বির সঙ্গে অপর তিজন যুবকের কথাকাটাকাটি হতে দেখেন। তবে ওই বৃদ্ধ কাউকেই চিনতে না পারায় তিনি মসজিদে চলে যান। তবে প্রত্যক্ষদর্শী ওই বৃদ্ধের নাম বলতে পারেনি সূত্রটি।

অন্যদিকে এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় গতকালই থানায় মামলা হয়েছে।

এম আর/টাইমস

নিউজ টি শেয়ার করুন..

সর্বশেষ খবর

আরো খবর