আজ শনিবার। ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ। ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ। ৯ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি। এখন সময় রাত ৮:০৮

শ্রমিকদের রক্তক্ষরণ- সোনালী আশ হলো ফাঁস

শ্রমিকদের রক্তক্ষরণ- সোনালী আশ হলো ফাঁস
নিউজ টি শেয়ার করুন..

মানবতার মা, আমাদের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাদের আশ্রয়, বাসস্থান, চিকিৎসাসহ সকল রকম সুযোগ-সুবিধা দিয়েছেন। গত ১৮ মাসে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবিরে লক্ষাধিক শিশু জন্মগ্রহণ করেছে। অর্ধ লক্ষ মা গর্ভবতী হিসেবে আছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন পাটের বহুমুখী ব্যবহার বাড়াতে হবে। কারণ এই পাট আমাদের জাতীয় সম্পদ। একদিকে এটি কৃষি সম্পদ অন্যদিকে আমাদের শিল্পপণ্য। সেই পণ্যের যারা কারিগর তারা এখন রাজপথে প্রচ- খরা-তাপে বেঁচে থাকার তাগিদে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। রাজপথেই নামাজ ও ইফতার সারছে। এ যেন দেখার কেউ নেই। এ যেন বলার কেউ নেই। যেদেশে নিজ অর্থায়নে পদ্মাসেতু হয়, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় হয় সেদেশে সোনালী আশের শ্রমিকরা মানবেতর জীবন-যাপন কেন করবেন ? ব্যক্তি মালিকানাধীন পাটকল প্রতি বছর লাভের মুখ দেখছে আর রাষ্ট্রায়াত্ত¦ পাটকলের শ্রমিকরা নিজেদের কাজের টাকা পাবার জন্য রমজান মাসেও রাজপথ দখল করছে। রাষ্ট্রায়াত্ত্ব পাটকলের সুদিন ফিরে আসছে না কেন ? এ বিষয়ে কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ‘সরকারি মাল দরিয়ায় ঢাল’।

কিছু সংখ্যক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে বিপুল পরিমান লোকসানের মুখে পড়ছে সরকারি পাটকলগুলো। যখন কাঁচামাল বা পাট কেনার সময় তখন মিলে টাকা থাকে না। বিজেএমসি পাট কিনতে টাকা দেয় না। পরে চড়া দামে পাট কেনা হয়। আর পাট কিনতেই লোকসান আর দুর্নীতির কবলে পড়ে রাষ্ট্র। অন্যদিকে একই সময়ে ব্যক্তি মালিকানাধীন পাটকলের মালিকরা নতুন নতুন সম্ভাবনার কথা বলছে। রাষ্ট্র কর্তৃক পাট দিবসসহ নানা দিবসে বিশেষ পুরস্কার অর্জন করছে। অথচ রাষ্ট্রীয় পাট শ্রমিকরা রাতদিন কাজ করেও মাসের পর মাস বেতনাদি পাচ্ছে না। তারা তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পরিবারের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না। কেউ কেউ নিরূপায় হয়ে অনৈতিক পথও বেছে নিচ্ছে জীবন-জীবিকার তাগিদে। বিবাহযোগ্য কন্যাদেরকেও অর্থাভাবে বিবাহ দিতে পারছে না। অনেকেই টাকার অভাবে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাহ উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে না। কাঁদছে মানবতা, কাঁদছে বাংলাদেশ। এ যেন দেখার কেউ নেই, শোনার কেউ নেই, বলার কেউ নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনা শিল্পাঞ্চল থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান এম.পিকে শ্রম প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত করেছেন। শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ানের মরহুম স্বামী আবু সুফিয়ান দক্ষিণাঞ্চলের প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা ছিলেন। শ্রমজীবী মানুষের পক্ষে লড়াই-সংগ্রাম করতে গিয়েই অকালে জীবন দিতে হয়েছে। তারই সহধর্মিনী এমপি থাকাবস্থায় শ্রমিকরা বারবার মানবেতর জীবনযাপন করবে কেন ? ইতিমধ্যেই ঢাকায় শ্রমিক লীগ নেতৃবৃন্দ ও সিবিএ নেতৃবৃন্দের সাথে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বসেছেন এবং ১ সপ্তাহের মধ্যে সমাধান করে দেবেন বলে আশ^স্ত করেছেন। অথচ তিনি যখন তার নির্বাচনী এলাকায় ৪ দিনের সফরে যাচ্ছেন সেই সফরে শ্রমিকদের সাথে বর্তমান সমস্যা নিরসনে কোন কর্মসূচি রাখেননি। যা অত্যন্ত কষ্ট ও দুঃখজনক। অথচ শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকার শ্রমিকদের ভোটেই নেতা নির্বাচিত হয়। যদিও আজকাল নির্বাচিত হতে জনগণের ভোটের প্রয়োজন হয় না।

সে কারণেই হয়তো মাননীয় প্রতিমন্ত্রীর ভোটারদের কথা মনে নেই। ১৩ মে থেকে খুলনা অঞ্চলে ৯টিসহ দেশের সব রাষ্ট্রায়াত্ত্ব পাটকলে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে পাটকল শ্রমিক লীগ, সিবিএ ও ননসিবিএ নেতারা। বকেয়া মজুরী পরিশোধ, মজুরী কমিশন, গ্রাচুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং বদলী শ্রমিকদের স্থায়ীকরণসহ ৯ দফা দাবিতে উৎপাদন বন্ধ রেখেছে তারা। রাজপথ, রেলপথ অবরোধ করারও ঘোষণা দিয়েছে শ্রমিকরা। অদ্ভুত জীবন তাদের। চাকরি আছে বেতন নেই, পেট আছে খাবার নেই, রোগ আছে চিকিৎসা নেই, মানুষ আছে মানবতা নেই, স্থানীয়ভাবে মন্ত্রী আছে সমাধানের উদ্যোগ নেই। প্রধানমন্ত্রী একাই যেন সব সমস্যা সমাধানের একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে বসে আছেন। আর কারো কোন করণীয় নেই। তিনি বিদেশে রয়েছেন তাই শ্রমিকরা রাজপথে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-এমপি-সচিবরা কি করছেন ? মাস শেষ হলেই বড় বড় বেতন আর সুযোগ-সুবিধা কোন কমতি তাদের নেই। রাষ্ট্রীয় এত সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতে পারলে রাষ্ট্রীয় সমস্যা সমাধানে কেন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারছেন না। এভাবে উন্নয়নের বাংলাদেশ আর কত দূর এগুবে ? আশা করছি প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে এলেই অসহায় শ্রমিকরা নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখবে। বন্ধ কলকারখানা আবার চাকা ঘুরে উঠবে, শ্রমিকের মুখে হাসি ফুটবে তারা রাজপথ ছেড়ে কারখানায় ফিরে গিয়ে উন্নয়নের অংশীদার হবে। সেই শুভ কামনায় আমরা শ্রমজীবী এলাকার মানুষ হিসেবে এইটুকু প্রত্যাশা করতেই পারি। শ্রমিকদের ৯ দফা দাবি এখন ১৭ কোটি মানুষের দাবি। দেশের উন্নয়ননের স্বার্থে তাদের এই দাবি মেনে নেয়া সময়ের দাবি বলে মনে করি।
লেখক: মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা, চেয়ারম্যান, জাতীয় মানবাধিকার সমিতি

নিউজ টি শেয়ার করুন..

সর্বশেষ খবর

আরো খবর