আজ মঙ্গলবার। ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ। ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ। ১৩ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি। এখন সময় সন্ধ্যা ৭:৫৮

টিউশনি খুঁজছো?

টিউশনি খুঁজছো?
নিউজ টি শেয়ার করুন..

শিক্ষকতা মহান পেশা এটা আমাদের কারো অজানা নয়। এই শিক্ষকতার শুরুটাও হতে পারে ছাত্রজীবন থেকেই। এই পড়ানো হতে পারে ছাত্রজীবনে আয়ের উৎসও। নিজের চাইতে বয়সে আর ক্লাসে ছোট শিক্ষার্থীদের পড়িয়েই করা যেতে পারে অর্থ উপার্জন। আজকের টেন মিনিট স্কুলের শুরুর দিকের ফান্ডিং হয়েছিলো আমার এই পড়িয়ে রোজগার করা টাকা থেকেই।

চলো আজ জেনে নেওয়া যাক এই মহান পেশা শিক্ষকতার মাহাত্ম্য সম্পর্কে। ছাত্রাবস্থায় টিউশনি বা পড়ানো শুরু করার সময় আমাদের বেশ কিছু সমস্যা আর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। এই ব্যাপারগুলো নিয়ে জেনে রাখা জরুরি।

ছাত্র-ছাত্রী পাবো কোথায়? – টিউশনি শুরুর আগে সবার মাথায় ঘুরতে থাকা প্রশ্ন হলো এটা! আমার অভিজ্ঞতা যদি শেয়ার করি তাহলে বলতেই হয়, এলাকার দেয়ালে ‘পড়াতে চাই’- লেখা পোস্টার দিয়েই শুরু হয়েছিলো শিক্ষক হিসেবে আমার যাত্রা। চার বন্ধু মিলে নিজেদের নাম আর মোবাইল নাম্বার দিয়ে বানিয়েছিলাম একটা পোস্টার আর সেটাই সেঁটে দিয়েছিলাম বিল্ডিং এর নোটিশ বোর্ডে। এক সপ্তাহের মধ্যে চার বন্ধুরই মিলেছিলো টিউশনি। আর এখন এই ডিজিটাল যুগে ফেসবুককেও কাজে লাগাতে পারো ছাত্র-ছাত্রী খোঁজ করার কাজে।

তাই, তোমরাও বানিয়ে ফেলো পোস্টার আর সেঁটে দাও পাড়ার দেয়ালে। কিংবা পোস্ট করো ফেসবুকে; টিউশনি পাওয়া সময়ের ব্যাপার।

প্রচারেই প্রসার- ব্যাচে ছাত্র-ছাত্রী পড়ালে সেটা সেই ব্যাচের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে। তোমার পড়ানোর দক্ষতার প্রসার ঘটে না। একটা ছোট্ট ডিজিটাল হ্যাক কাজে লাগিয়ে বাড়াতে পারেন আপনার পরিচিত। তোমার পড়ানো ক্লাস, লেসন আর সেশনগুলো রেকর্ড করে আপলোড করে দাও ফেসবুক বা ইউটিউবে। এতে বাড়বে তোমার পরিচিতি আর দক্ষতার প্রসার!

ব্যাচে পড়াও- পড়ানো শুরু করে দেবার পর যখন তোমার পড়ানোর দক্ষতার সাথে সাথে শিক্ষার্থীর পরিমানটাও বাড়তে থাকবে তখন ব্যাচে পড়ানো শুরু করো। একই সময়ে অনেককে পড়াও। কারণ সবাইকে আলাদা করে সময় দেওয়াটা অসম্ভব এবং একইসাথে অবান্তর। তাই, শিক্ষার্থী সংখ্যা বেড়ে গেলে ব্যাচে পড়ানো শুরু করো।

জয়েন করো ফেসবুক গ্রুপগুলোয়- ব্যাপারটা কিন্তু এমন নয় যে তুমি একাই পড়ানোর জন্যে শিক্ষার্থী খুঁজে হয়রান হচ্ছো। এমন অনেক অভিভাবক আছেন যারা নিজেদের সন্তানকে পড়ানোর জন্যে একজন ভালো টিউটর খুঁজছেন। টিউটর নেই/ দেই- টাইপের বেশ কিছু গ্রুপ আছে ফেসবুকে। জয়েন করো সেসব গ্রুপে, যাতে খোঁজ পাওয়া মাত্রই নিজের টিউশনটা সুনিশ্চিত করে ফেলতে পারো।

বানিয়ে ফেলো নিজের নোট- নিজে টিউশনি শুরু করার পর আস্তে আস্তে নিজের নোট বানানোতে মনোযোগ দাও। যেসব ক্লাসের শিক্ষার্থীকেই যে বিষয়ই পড়াও না কেন সেটার জন্যে নিজের নোট তৈরী করে ফেলো। দেশসেরা শিক্ষকদের সবারই কিন্তু এমন নিজেদের আলাদা নোট আছে। নিজের এই নোটগুলো একদিকে যেমন তোমার ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরী করে অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের পড়ানো আর বোঝানোটাও অনেকটা সহজ হয় নিজের তৈরী করা নোট থাকলে।

খোঁজ করো ব্যাচের- নতুন নতুন পড়ানো শুরু করা শিক্ষকদের জন্যে স্টুডেন্ট পাওয়াটা বেশ কঠিন। তাদের জন্যে একটা সহজ উপায় বাতলে দেই। অনেক জায়গায় দেখা যায় রুম ভাড়া করে একসাথে বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে পড়ানো হয়। সেসব ব্যাচে পড়ানোর সুযোগ পাও কি না দেখো। আস্তে আস্তে দেখবে সেখানকার শিক্ষার্থীরাই হবে তোমার নতুন শিক্ষার্থী পাবার উৎস।

অভিনব শাস্তি পদ্ধতি- শিক্ষক হিসেবে পড়াতে গেলে, তোমাকে মানসিক ভাবে দু’ধরণের শিক্ষার্থীর মুখোমুখি হবার জন্যে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। মেধাবী শিক্ষার্থীর পাশাপাশি দু-চারটে দুষ্টু আর ফাঁকিবাজ শিক্ষার্থী দুর্ভাগ্যজনকভাবে যদি তোমার কপালে জুটেই যায় তাহলে শাস্তিও তো দিতে হবে একটুখানি। আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে দুটো মজার শাস্তির কথা বলি। আমি যাদের পড়াতাম তাদের কেউ পরীক্ষায় খারাপ করলে তার শাস্তি হিসেবে তাকে তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টটা মিনিট পাঁচেকের জন্যে আমাকে দিতে হতো। আমি সেখান থেকে যা ইচ্ছে তাই পোস্ট করতে পারবো। মানুষ তার ফেসবুক নিয়ে বড্ড সংবেদনশীল। নিজের মানসম্মান বাঁচাতে তাই পড়াশোনার অগ্রগতিও হয়ে যেতো চোখে পড়ার মতো। আরেকটা মজার শাস্তি ছিলো, রোজকার পরীক্ষায় সর্বনিম্ন নম্বর প্রাপ্ত শিক্ষার্থীকে সেদিন সবার খাবারখরচ বহন করতে হবে।

শিক্ষক হিসেবে তুমিও উদ্ভাবন করতে পারো মজার সব শাস্তি আর প্রয়োজনমতো করতে পারো সেগুলোর সদ্ব্যবহার।

বেতন বিড়ম্বনা- এমন অনেকের সাথে হয়েছে যে কয়েকমাস পড়ানোর পরও সময়মতো বেতন না নেওয়ার কারণে শেষে যখন শিক্ষার্থীর রেজাল্ট খারাপ হয়েছে তখন আর বেতনটা নেবার সুযোগটুকুও মেলেনি। তাই, নিজের পাওনা সময়মতো বুঝে নেবার অভ্যাস করো। নয়তো শেষে না পারবে চাইতে না পারবে ছেড়ে দিতে। আর এরচেয়ে বিব্রতকর ব্যাপার ঘটে যখন কোনো আত্মীয় কিংবা পরিচিত কাওকে পড়াতে হয়। সেরকম ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়ই টাকা চাওয়া বা নেওয়াটা বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। এই ব্যাপারগুলো যেন আগে থেকেই পরিষ্কার করা থাকে।

তাই তোমরা যারা শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নিতে আগ্রহী, শেখাতে ভালোবাসো তাদের বলছি আলোচ্য কৌশলগুলোকে কাজে লাগিয়ে শুরু করে দাও পড়ানো। ছড়িয়ে দাও নিজের জ্ঞানগুলোকে অনেকের মাঝে!

স্টুডেন্ট হ্যাকস (বেস্টসেলার | বইমেলা ২০১৯)

আয়মান সাদিক ও সাদমান সাদিক

নিউজ টি শেয়ার করুন..

সর্বশেষ খবর

আরো খবর