আজ শনিবার। ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ। ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ। ৯ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি। এখন সময় দুপুর ১:৩১

কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে ২৭ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক যুগ ধরে ৯৯ শিক্ষকের পদ শুন্য

কুড়িগ্রামের  চরাঞ্চলে ২৭ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক যুগ ধরে ৯৯ শিক্ষকের পদ শুন্য
নিউজ টি শেয়ার করুন..

আসাদুজ্জামান সরকার, কুড়িগ্রাম: 

উলিপুরে শিক্ষা কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলার শিকারে পরিনত হয়েছে চরের ২৭ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গত এক যুগ ধরে এ সমস্ত বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক সহ শতাধিক শিক্ষকের পদ শুন্য রয়েছে। ১ জন অথবা ২ জন শিক্ষক দিয়ে চলছে বিদ্যালয়গুলো। শিক্ষক না আসলেই স্কুল বন্ধ থাকে। ভাড়াটে শিক্ষক অথবা শিক্ষকরা পালা করে কোন রকমে জোড়া তালি দিয়ে চালাচ্ছেন পাঠদান কার্যক্রম। ফলে চরের প্রায় ১৫ হাজার শিশু শিক্ষার্থী শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে যুগের পর যুগ। চরাঞ্চলে বিদ্যালয়ের শুন্যপদ পুরনের ইচ্ছা যেন কর্তৃপক্ষের নাই।

তবু চলে চরাঞ্চলের বিদ্যালয়ের শুন্য পদ নিয়ে ডেপুটেশন অথবা বদলীর নামে কর্তৃপক্ষের অর্থ বাণিজ্যের কারনে বিদ্যালয় গুলো মাঝে মধ্যে শিক্ষক শুন্য হওয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে একাধিক। কর্তৃপক্ষের এমন বিমাতা সুলভ আচরনের কারনে চরাঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থা একেবারে ভেঙ্গে পড়েছে। সম্প্রতি শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুখেরবাতীর চর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আকর্ষিক পরির্দশনে গিয়ে প্রধান শিক্ষককে ৪ দিন ধরে অনুপস্থিত দেখতে পান এবং তাকে সাময়িক বরখাস্ত সহ ৪ দিনের বেতন কর্তন করা হয়।

এ ঘটনায় সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসলেও শিক্ষক উপস্থিতি ও শুন্য পদ পুরণ করতে হিমশিম খাচ্ছেন।সরোজমিনে জানা গেছে, মশালের চর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি শিক্ষক শুন্য হওয়ায় দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। গত কয়েক দিন আগে অন্য ২স্কুল থেকে মোহাম্মদ আলী ও আল মামনুর রশিদকে আপাতত দিয়ে বন্ধ স্কুলটি চালু করেছেন। চর বাগুয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে ৫ ক্লাসের শিক্ষার্থীদের এক রুমে বসিয়ে ক্লাস করছেন সহকারী শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান,বিদ্যালয়টি প্রধান শিক্ষক সহ ৪ শিক্ষকের পদ গত এক যুগ ধরে শুন্য রয়েছে। সহকারী শিক্ষক শামছুন্নাহার শিখাকে ডেপুটিশনে এবং ২০১৭ সালে সহকারী শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম বিপিএড প্রশিক্ষনে চলে গেলে অপর সহকারী শিক্ষক শাহাজাদী বেগমকে বদলী করলে শিক্ষক শুন্য হয়ে স্কুলটি দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ থাকে।

প্রশিক্ষন শেষে ফিরে এসে স্কুল চালু করেন এবং গত ৫ বছর ধরে একাই স্কুলটি চালাচ্ছেন। যেদিন বিদ্যালয়ে আসতে পারেন না সেদিন বিদ্যালয়টি বন্ধ থাকে বলে জানালেন শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম। শিক্ষার্থী সাকিব হাসান, ফরহাদ রেজা, রহিমা বেগম ও শামছুন্নাহার জানান, স্যার না আসলে স্কুল বন্ধ থাকে। ফলে তাদের লেখাপড়া হয় না।

 এ ছাড়া বিদ্যালয়টিতে আসবাব পত্র, বসার বেঞ্চ, খাবার পানি নলকুপ ও পায়খানার ব্যবস্থা নাই বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন। নামাজের চর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, তিন হাজারী চর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর গুজিমারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিন গুজিমারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, দই খাওয়ার চর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বালাডোবা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চেরাগীর আলগা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় একজন করে শিক্ষক দিয়ে পাঠদান কার্যক্রম চলছে। চরের প্রতিটি স্কুলের চিত্র এরকম। এলাকার লোকজন অভিযোগ করেন, প্রায় দিন শিক্ষক আসে না সেদিন করে বিদ্যালয় বন্ধ থাকে। বিদ্যালয় গুলোতে আসবাবপত্র বেঞ্চ, খাবার পানি ও পায়খানার ব্যবস্থা নাই। উপজেলা শিক্ষা অফিস জানায়, উপজেলার ২৬৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের পদ রয়েছে ১৫৩৮টি এর মধ্যে প্রধান শিক্ষকের পদ ২৬৯টি, সহকারী শিক্ষক ১১৫৬টি।

 ২২ জন প্রধান শিক্ষকসহ ১৩৭ জন সহকারী শিক্ষকের পদ শুন্য রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ শুন্যপদ নদী বেষ্টিত ২৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। চরাঞ্চলে ২৭ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ সহকারী শিক্ষকের পদ রয়েছে ১৩৭টি। কর্মরত শিক্ষক রয়েছে ৩৬ জন। ১১ জন প্রধান শিক্ষকসহ ৮৮ জন শিক্ষকের পদ প্রায় কয়েক বছর ধরে শুন্য রয়েছে। কর্মরত ৩৬ জনের মধ্যে কয়েক জন শিক্ষক ডিপুটিশনে রয়েছেন। এছাড়া নুতন শিক্ষক নিয়োগ হলে কেউ চরের স্কুলে যেতে চান না। ২/১ জনকে চরাঞ্চলে পোষ্টিং দিলে অদৃশ্য তদবিরের কারণে তাও সম্ভব হয় না। ফলে বছরের পর বছর চরের স্কুল গুলোতে শিক্ষক শুন্যতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। সুখেরবাতী চর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গর্ভনিং বডির সভাপতি আব্দুস সবুর জানান, চরের শিক্ষকদের জন্য চর ইনসেন্টিভ সহ বিদ্যালয় ভবনের সাথে শিক্ষক কোয়াটার নির্মান করলে চরে শিক্ষক সংকট থাকবে না।

 চর বাগুয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গর্ভনিং বডির সভাপতি লিয়াকত আলী অভিযোগ করে বলেন, চরাঞ্চলের বিদ্যালয়ে প্রতি কর্তৃপক্ষের এমন নিষ্ঠুর ও বিমাতা সুলভ আচরনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হাতিয়া ইউপি চেয়ারম্যান বিএম আবুল হোসেন জানান, চরাঞ্চলে বিদ্যালয়গুলো প্রতি কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলায় ও শিক্ষক সংকটের কারনে চরের শিশুরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বছরের পর বছর। উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ মোজাম্মেল হক শাহ চরাঞ্চলে বিদ্যালয়গুলো শিক্ষক সংকটে পড়েছে স্বীকার করে বলেন, শিক্ষকের অভাবে মশালের চর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ছিল। তিনি শিক্ষক দিয়ে স্কুলটি চালু করেছেন। দ্রুত শিক্ষক সংকট সমাধানে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।


নিউজ টি শেয়ার করুন..

সর্বশেষ খবর

আরো খবর