জুবায়ের হাসান,যবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) সাম্প্রতিক অনাকাঙিক্ষত ও ন্যক্কারজনক পরিস্থিতির কারণে উদ্বেগজনক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ সংকটময় পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে আজ ২৮ এপ্রিল রবিবার শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো: ইকবাল কবীর জাহিদ, সাধারণ সম্পাদকড. মো: নাজমুল হাসান, কর্মচারী সমিতির সভাপতি এস এম সাজেদুর রহমান জুয়েল, ও সম্পাদক কে এম আরিফুজ্জামান সোহাগ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিপুলের রাহুগ্রাস থেকে যবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের বাঁচানোর আকুতি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২০ এপ্রিল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষায় অংশগ্রহণে বাধা দিচ্ছেন যশোর সদর উপজেলার সদ্য নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল। যবিপ্রবির সঙ্গে তাঁর ন্যূনতম কোনো সংশ্লিষ্টতা না থাকার পরও নিজের ব্যক্তিগত এজেন্ডা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ব্যাচের শ্রেণি প্রতিনিধি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ক্লাবের প্রতিনিধিদের ডেকে নিয়ে ক্লাস-পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করার হুমকি দিচ্ছেন। একজন জনপ্রতিনিধি হয়েও ঐতিহ্যবাহী একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কীভাবে অস্থিতিশীল করা যায়, তিনি অবিরত সেই চেষ্টা করে যাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের একজন সদস্য হয়ে এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
যবিপ্রবি রক্ষায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঐক্যবদ্ধ অবস্থানের কারণে যবিপ্রবির অভ্যন্তরে কিছু করতে না পেরে, আনোয়ার হোসেন বিপুলের নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসী বাহিনী যশোর শহরের বিভিন্ন মেসে গিয়ে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে, চড়-থাপ্পড় ও গালিগালাজ করছে। যশোর শহরের ‘মিনি ক্যান্টনমেন্ট’ হিসেবে পরিচিত পালবাড়ির অদূরে অবস্থিত কাঁঠালতলাস্থ একটি রাজনৈতিক কার্যালয়ে হাজিরা দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে বাধ্য করছে। প্রাণের ভয়ে অনেক শিক্ষার্থী সেখানে গিয়ে তাদের সঙ্গে সুর মেলাচ্ছে। কেউ কোনো কথা বললেই তাঁকে পেটানো হচ্ছে। যবিপ্রবিকে তারা মগের মুল্লুক করে যা-খুশি তাই করতে চাচ্ছেন। তাদের অমানবিক হয়রানির শিকার হয়ে এই দাবদাহের মধ্যে অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় যখন অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এগিয়ে যাচ্ছে, ক্লাস-পরীক্ষা নিয়মিত হচ্ছে তখন একদল উচ্ছৃঙ্খল বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীর পক্ষ নিয়ে নিজের ব্যক্তিগত এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চাইছেন এই আনোয়ার হোসেন বিপুল। আমরা জানতে পেরেছি, ক্লাস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করায় বিশ্ববিদ্যালয় ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বেশ কয়েকটি বিভাগের শ্রেণি প্রতিনিধি ও শিক্ষার্থীদের মারধর করা হয়েছে। গত ২০ এপ্রিল থেকে প্রতিদিন সকাল এবং সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীদেরকে মুঠোফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
তাঁদের কথা না শুনলে কেউ তাদের রক্ষা করতে পারবে না বলে শাসাচ্ছে। এসব কিছু জেনেও প্রশাসন যেন নীরব ভূমিকা পালন করছে। এ ঘটনার সাথে জনপ্রতিনিধির সম্পৃক্ততার কারণে প্রশাসন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারছে না বলে আমাদের মনে হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা এসব শিক্ষার্থীদের নির্বিচারে মারধর, হুমকি-ধমকির পরও কারোর যেন টনক নড়ছে না। এতো ঘটনার পরও মনে হয় কারোর কোনো দায় নেই। একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান গুটিকয়েক ব্যক্তির হীনস্বার্থে কখনোই যশোর শহরের স্বার্থান্বেষী কয়েকজন অপরাজনীতিকের নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্পর্শে যাদের কখনোই আসার সুযোগ হয়নি, তাদের স্বার্থ হাসিলের নির্দেশনা বিশ্ববিদ্যালয় মানতে পারে না।
বর্তমানের সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার অন্যতম সারথি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার হাতিয়ার সোনার মানুষ গড়ার মানসে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু রাজনীতিকের ছদ্মবেশে অপকাজে লিপ্ত একটি গোষ্ঠী অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের দখলবাজি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, নিয়োগ-বাণিজ্য, ইত্যাদি হাসিল করতে চায় যা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার পথে বড় একটি অন্তরায়। সোনার বাংলা বাস্তবায়নের পথে ওই স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর সাথে আপোষ না করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনের সাথে তাঁদের বিরোধিতা শুরু হয়।
শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত ও গবেষণার ক্ষেত্রে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় যখন এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখনই শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে এক মরণনেশায় মেতে উঠেছে আনোয়ার হোসেন বিপুলের নেতৃত্বে একদল ঘৃণিত সন্ত্রাসী। তাদের রাহুগ্রাস থেকে যদি বিশ্ববিদ্যালয়কে মুক্ত করা না যায়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। এ জন্য বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের চ্যান্সেলর ও মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ও উপমন্ত্রী, মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান, পুলিশের মহাপরিদর্শক, যশোর জেলার সকল জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজ, যশোর জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনকে এ দুর্বৃত্তদের হাত থেকে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে রক্ষায় এগিয়ে আসার আকুল আহ্বান ও জোর দাবি জানানো হয়।