আজ বৃহস্পতিবার। ১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ। ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ। ৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি। এখন সময় রাত ৮:২০

সানজিদা, আপনার সঙ্গে দেখা করব কখনও

সানজিদা, আপনার সঙ্গে দেখা করব কখনও
নিউজ টি শেয়ার করুন..

সব্যসাচীর অভিধানগত অর্থ বহুলচর্চিত। যাঁর দু’হাত সমানভাবে চলে। কিন্তু উর্দু অভিধানে সানজিদা শব্দের মানে কী? খোঁজ করিনি। সানজিদার যদি বাংলা করতে দেওয়া হয় তাহলে কয়েক কোটি বাঙালি হয়তো বলবেন, যাঁর হাত আর পা সমান ভাবে চলে।

মেয়েদের সাফ কাপে নেপালের মাঠে নেপালকে হারিয়ে প্রথমবার ট্রফি জিতল বাংলাদেশ। ১১টা বাংলা ভাষায় কথা বলা মেয়ে ফুটবলে বিপ্লবটা করে ফেলল। ঢাকা থেকে খুলনা, বরিশাল থেকে চট্টগ্রামে “আমাগো মাইয়াগুলা”দের নিয়ে গর্ব উছলে পড়ছে! সানজিদা আক্তার, কৃষ্ণারানি সরকার, মণিকা চাকমারা যেন ফুটবল যুদ্ধে ট্রফি খরার মুক্তির স্বাদ দিলেন। এই সবার মধ্যেই সানজিদা এখন অনন্যা।

আমরা ভারতের কজন লোক জানতাম যে, মেয়েদের সাফ কাপ হচ্ছে? কজন এই খবরটা রেখেছিলাম গ্রুপ লিগে বাংলাদেশের কাছে তিন গোলে হেরেছি?

বাংলাদেশের লোকজনও জানতেন না। অনেকেই না। কিন্তু বাংলাদেশের জনতাকে কার্যত চুম্বকের মতো টেনে নিয়েছিল রবিবার সানজিদার একটি ফেসবুক পোস্ট। দেশের মানুষকে তাঁদের হয়ে গলা ফাটাতে একটা লম্বা লিখেছিলেন পাহাড় কোলে বড় হওয়া মেয়েটি।

সানজিদা লিখেছিলেন, “পাহাড়ের কাছাকাছি স্থানে বাড়ি আমার। পাহাড়ি ভাইবোনদের লড়াকু মানসিকতা, গ্রাম বাংলার দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষদের হার না মানা জীবনের প্রতি পরত খুব কাছাকাছি থেকে দেখা আমার। ফাইনালে আমরা একজন ফুটবলারের চরিত্রে মাঠে লড়ব এমন নয়, এগারোজনের যোদ্ধাদল মাঠে থাকবে, যে দলের অনেকে এই পর্যন্ত এসেছে বাবাকে হারিয়ে, মায়ের শেষ সম্বল নিয়ে, বোনের অলংকার বিক্রি করে, অনেকে পরিবারের একমাত্র আয়ের অবলম্বন হয়ে।”

সানজিদা নিজের কথা লিখেছিলেন। বাকিদের কথাও। সানজিদা লিখছেন কৃষ্ণারানির কথা, মণিকা চাকমার কথা। বুঝিয়েছিলেন, অনেক লড়াই লড়ে এই পর্বে পৌঁছেছেন তাঁরা। কাউকে লড়তে হয়েছে অনটনের সঙ্গে। কাউকে মেয়েদের হাফ প্যান্ট পরে ফুটবল খেলার বিরুদ্ধে আঙুল তোলা মৌলবাদের বিরুদ্ধে।রাজাকারের ফাঁসি চেয়ে শাহ বাগ প্রজন্ম চত্বর তৈরি করে দিয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়া। সানজিদার পোস্টও চুম্বকের কাজ করেছিল। জমাট বেঁধেছিল বাংলাদেশ।

ফুটবলের সঙ্গে জীবনের লড়াইকে যাঁরা একাত্ম করে দেখেন, ভাবেন, লেখার চেষ্টা করেন– সানজিদা আক্তার তাঁদের ক্যাপ্টেন। আমাদের ক্যাপ্টেন। কখনও সুযোগ হলে দেখা করব।

লেখক : শোভন চক্রবর্তী (ওপার বাংলা)

নিউজ টি শেয়ার করুন..

সর্বশেষ খবর

আরো খবর