আজ মঙ্গলবার। ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ। ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ। ১৩ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি। এখন সময় রাত ১০:০১

মতিউর রহমান সব সময়ই গণতন্ত্র বিরোধী!

মতিউর রহমান সব সময়ই গণতন্ত্র বিরোধী!
নিউজ টি শেয়ার করুন..

প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান সব সময়ই ছিলেন গণতন্ত্র বিরোধী, গণবিরোাধী। তার এই গণতন্ত্রবিরোধী অবস্থানের চিত্র বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে প্রকাশিত হয়েছে। ১/১১ এর সময়ে তার অবস্থান এবং তার আসল চেহারা প্রস্ফুটিত হয়েছিল। সেই সময়ে তিনি দুই নেত্রীর বিরুদ্ধে একটি লেখা লিখেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন দুই নেত্রীকে সরে যেতেই হবে। অর্থাৎ ১/১১- এর সময়ে তিনি ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’র সপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া বিরাজনীতিকরণের অন্যতম একজন উদ্যাক্তা। আজকে তার পত্রিকায় যে সমস্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তার সবই যে আক্রোসমূলক, তা তার সে সময়ের ওই লেখা থেকেই প্রমাণিত হয়। ২০০৭ সালের ১১ জুন প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত তার লেখার শিরোনাম ছিল,‘দুই নেত্রীকে সরে দাঁড়াতেই হবে’। পাঠকদের অবগতির জন্য সেই লেখাটি পুনরায় হুবহু প্রকাশ করা হলো:–

দুই নেত্রীকে সরে দাঁড়াতে হবে

১১ জুন, ২০০৭ (প্রথম আলো)

বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রীর ভবিষ্যৎ নিয়ে আবার নতুন করে আলোচনা হচ্ছে। তারা কি দলের নেতৃত্ব ছেঁড়ে দেবেন, রাজনীতি থেকে অবসরে যাবেন, না স্বেচ্ছায় বিদেশে চলে যাবেন- এসব নিয়ে এখন অনেক আলোচনা ও লেখালেখি হয়েছে, এখনও হচ্ছে নানা মহলে। সর্বশেষ, গত সোমবার বিবিসির সংলাপে দুই দলের জেষ্ঠ্য নেতা বলেছেন, প্রয়োজনে দুই নেত্রীকে বাদ দিয়েই সংস্কার করতে হবে।বিএনপি ও আওয়ামী লীগের গ্রেপ্তার হওয়া নেতাদের কাছ থেকে তাদের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের অবৈধ অর্থ-চাদা-সম্পত্তি সংগ্রহ এবং বাসে আগুন দেওয়া ও খুনের মামলা চাপা দেওয়াসহ বহু ব্যাপারে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তা এককথায় অবিশ্বাস্য। ক্ষমতায় থেকে বা ক্ষমতার বাইরে গিয়ে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল দুটির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের চাঁদা আর দুর্নীতির যে রূপ বের হয়ে আসছে, তা রীতিমতো ভয়ংকর। এসবের অনেক কিছুই আমরা জানতাম, সমাজে আলোচিত ছিল, তারপরও সত্য এত ভয়ংকর যে পত্রিকায় প্রকাশিত খবরগুলো সবাইকে যুগপৎ গভীরভাবে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে। কিন্তু বেগম জিয়া বলেছেন, ‘আমার ও আমার পরিবার সম্পর্কে পত্রপত্রিকায় অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।’ শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জীবনে কাউকে এক টাকাও দিতে বলিনি। কারও কাছে চাঁদা চাইনি।’ তবে দুই নেত্রীর এসব কথা কেউ বিশ্বাস করে না। এখন আমরা শুধু এটুকুই বলতে পারি। কিছুদিন আগে আইন ও তথ্য উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেছিলেন, দুই দলের নেতাদের পরামর্শ অনুযায়ীই সরকার দুই নেত্রীর ব্যাপারে কিছু পদক্ষেপ (দুই নেত্রীকে দেশের বাইরে পাঠানো) নিয়েছিল। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারের কাছে পরামর্শদাতাদের নাম প্রকাশের অনুরোধ করা হয়।জবাবে মইনুল হোসেন পরামর্শদাতাদের নাম প্রকাশ না করে আবারও একই কথা বলেন। তবে তিনি বলেন, দুই নেত্রীকে দেশে রেখে বা দলের শীর্ষে রেখে সংস্কার করা যাবে কি যাবে না- এ ব্যাপারে দলের মধ্যে দুই রকম মত থাকতেই পারে। তিনি নাম প্রকাশ করেন আর না-ই করেন, তাঁর এ বক্তব্য দেশের রাজনৈতিক ও সুধীমহলে নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

তবে এ কথাটি সত্য, বিএনপি ও আওয়ামী লীগে এমন অনেক নেতা, কর্মী রয়েছেন যারা দলের সংস্কার চান, পরিবারতন্ত্রের অবসান চান, দলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চান। তবে দুই নেত্রী দলের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকলে এসব কিছু হবে না বলে তারা মনে করেন। মাঠপর্যায়ের নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যেও এ রকম মনোভাব রয়েছে। বিশেষ করে গত পাঁচ বছরে দুই দলের ভেতরে ও বাইরে বিষয়টি নিয়ে অনেক আলোচনাও হয়েছে। দুই দলের বড়ো নেতারা এ রকম মতামত ব্যক্ত করেছেন অপ্রকাশ্যে। তাদের কাছ থেকেই আমরা এসব কিছু শুনেছি, জেনেছি। কিন্তু তারা এতদিন প্রকাশ্যে কিছু বলতে বা কোনো অবস্থান নেওয়ার সাহস দেখাতে পারেনি। তারা এখন কিছু কিছু কথা বলছেন।

সর্বশেষ, যৌথ জিজ্ঞাসাবাদ সেলের জেরার মুখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক দুই বড়ো দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা এবং বড়ো ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য ও বক্তব্য থেকে দুই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের চাদাবাজি ও দুর্নীতির যেসব তথ্য বের হয়ে এসেছে, তাতে আবার প্রধান দুই নেত্রীর ভবিষ্যৎ নিয়ে আলচনা শুরু হয়েছে। এ কথা বেশ জোরেশোরে আলোচনা হচ্ছে যে, যারা দেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছেন, যারা দলের জন্য ও নিজের জন্য বহু সম্পদ গড়ে তুলেছেন, যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হত্যা-খুনের সঙ্গে জড়িত, তাদের নেতৃত্বে রেখে দল বা দেশের জন্য কী লাভ হবে? ১৫ বছর ধরে সরকার ও বিরোধী দলে থেকে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব, বিশেষ করে বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা দেশকে প্রায় ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে গেছেন। বিএনপির বিগত সরকার যারপরনাই ক্ষতি করেছে দেশের। ২২ জানুয়ারির নির্বাচন হলে দেশে আরও সর্বনাশ হতো। কোনোভাবে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তাদের আরও ভয়ংকর রূপ আমরা দেখতাম। আর কোনোভাবে আওয়ামী লীগ জিতে গেলে তারাও আগের রেকর্ড ভঙ্গ করত। তাঁর সব লক্ষণই দেখা যাচ্ছিল।

আমাদের মনে আছে, ১৯৬৬ সালের মার্চ মাসে ব্যাংকক থেকে প্রকাশিত খ্যাতিসম্পন্ন আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিন এশিয়াউইক-এ দুই নেত্রীকে নিয়ে একটি সম্পাদকীয় লেখা হয়েছিল। ‘একটি নতুন শুরু’ (এ নিউ স্টার্ট) শিরোনামের নীচে দ্বিতীয় শিরোনাম ছিল ‘বাংলাদেশের বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার সরে দাঁড়ান উচিত’। ওই সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছিল, বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা উত্তভয়েরই মে মাসে (৯৬ সাল) অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা না করে রাজনীতি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেওয়া উচিত। এ সম্পাদকীয় মন্তব্য নিয়ে তখন এবং পরবর্তীকালে কিছু আলোচনা হয়েছিল। এ সম্পাদকীয় লেখার পটভূমি ছিল’ ৯১-৯৬ মেয়াদে বিএনপির ব্যর্থ শাসন, অকার্যকর সংসদ, আওয়ামী লীগের সংসদ বর্জনসহ হরতাল-অবরোধ ও একগুয়ে বিরোধিতা, দেশব্যাপী সংঘাত-সংঘর্ষ, প্রধান বিরোধী দলের বর্জন সত্ত্বেও মধ্য ফেবব্রুয়ারির বিএনপির নির্বাচনি প্রহসন ও জনগণের প্রত্যাখান ইত্যাদি।

আমাদের মনে আছে, শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়া ১৫ ফেব্রুয়ারির প্রহসনের নির্বাচন বাতিল, নির্দলীয় ত্তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা মেনে নিতে এবং পুনরায় সাধারণ নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। ১৯৬৬ সালের সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়েছিল। তারা ক্ষমতায় এসে আগের পাঁচ বছরে বিএনপি যা যা করেছিল তারই পুনরাবৃত্তি করে, তবে আরও বেশি মাত্রায়। শেখ হাসিনার শাসনামলে দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন, প্রশাসনের দলীয়করণ, বিরোধী দলকে অগ্রাহ্য করা ও দমনপীড়ন চালানো প্রায় সবই হয়েছিল। এসব কিছুতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দলীয় নেতা-মন্ত্রীরা সরাসরি যুক্ত ছিলেন। তৎকালীন বিরোধী দল বিএনপিও আওয়ামী লীগের মতৈ একইভাবে হরতাল-অবরোধ, সংসদ বর্জন, সংঘাত-সংঘর্ষের মাধ্যমে দেশের রাজনীতিকে অস্থিতিশীল করেছে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে স্থবির করেছে, দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিয়েছে।

সর্বশেষ, ২০০১ সালে পুনরায় বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসে। কিন্তু চরিত্রের কোনো বদল হয়নি। বরং বিএনপি- জামায়াত জোট সরকারের নেতৃত্বের অর্থ-সম্পদ-বিত্তের আকাঙ্ক্ষা আরও উদগ্র রূপ নেয়। শুরুতেই বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার আওয়ামী লিগের নেতা-সমর্থক ও সংখ্যালঘুদের উপর ব্যাপক হামলা চালায়। দুর্নীতি লাগামহীন হয়ে পড়ে। প্রশাসনে নির্লজ্জ দলীয়করণ করা হয়। নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্মকমিশন, বিচারবিভাগসহ কোনো কিছুই চরম দলীয়করণ থেকে রক্ষা পায়নি। সারা দেশে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজির বন্যা বয়ে যায়। খালেদা জিয়া ও নেতারা দেশব্যাপী নৈরাজ্য, চাঁদাবাজি, লুট, জমি দখল ও দেশি-বিদেশি সূত্রে শত সহস্র কোটি টাকা সংগ্রহ অভিযানে নেমে পড়েন।

সেই সঙ্গে যুক্ত হয় ধর্মীয় জঙ্গিবাদ, দেশব্যাপী বোমা-গ্রেনেড হামলা প্রভৃতি । এগুলোর পেছনে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা আমরা দেখতে পাই। বিরোধীদলীয় নেত্রীর জনসভায় গ্রেনেড হামলায় ২২ নেতাকর্মীর মৃত্যু ও তিন শতাধিক লোকের আহত হওয়া, সাবেক অর্থমন্ত্রীর শাহ এ এম এস কিবরিয়াসহ অনেক বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীকে হত্যার ঘটনায় আময়ারা তদন্ত আর বিচারের নামে প্রহসন দেখতে পেয়ছি। সন্ত্রাস-দুর্নীতির সঙ্গে মন্ত্রী-সাংসদসহ দলের সর্বোচ্চ পর্যায়কে সরাসরি জড়িত হতে দেখা যায়। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও ব্যবহৃত হয়। বেগম খালেদা জিয়ার দুই সন্তান তারেক ও আরাফাত, দুই ভাই সাইদ এস্কান্দার ও শামীম এস্কান্দার এবং অন্যান্য আত্মীয়রা ব্যাপকভাবে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হন। তাঁর ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তা দুই রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী ও মোসাদ্দেক আলী ফালুর নগ্ন দুর্নীতি এখন সর্বত্র আলোচিত। তাদের দুর্নীতি আর দখলের যেসব কাহিনি প্রকাশিত হয়েছে, তা একসময় অপবিশ্বাস্য মনে হলেও সেসব এখন সত্য বলে সবাই মানছেন। বাংলাদেশের মন্ত্রী-সাংসদের ব্যাপক দুর্নীতি আফ্রিকার বিভিন্ন স্বৈরশাসকদের দুর্নীতির কাহিনিকেও হার মানিয়েছে। এসব দুর্নীতির নানা খবর এখনও প্রকাশিত হয়ে চলেছে।

একই সঙ্গে ক্ষমতায় না থেকেও আওয়ামী লীগের নেতাদের চাঁদাবাজি আর দুর্নীতি-মনোয়ন বাণিজ্য দেশবাসীকে হতবাক করেছে। আমরা দেখছি, তারা বিগত পাঁচ বছরে প্রতিবাদের অন্যসব পন্থাকে তেমন আমলে না নিয়ে কেবল লাগাতার হরতাল-অবরোধ, সংঘাত- সংঘর্ষের পথ বেছে নিয়েছিল। এ প্রসঙ্গে ২০০৪ সালের ৩০ এপ্রিল সরকার পতনের আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা ও পরে ওই বছরের ৪ জুন হরতাল সফল করতে বাসে অগ্নিসংযোগ করে ১১ জন হত্যা এবং পোশাক শিল্প কারখানায় অরাজকতা সৃষ্টির অভিযোগসহ যেসব খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা আমাদের বিস্মিত করেছে।

আমরা দেখতে পাই, পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষে যে কোনো উপায়ে আবার ক্ষমতায় আসার জন্য বিএনপি কেমন মরিয়া হয়ে উঠেছিল। নির্বাচন কমিশনে নিজেদের লোক বসিয়ে এবং ভুলে ভরা ভোটার তালিকা করে পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে আসতে চেয়েছিল। একদিকে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য চারদলীয় জোটের নানা রকম চক্রান্তমূলক পদক্ষেপ, অন্য দিকে তা প্রতিহত করার জন্য আওয়ামী লীগসহ বিরোধী দলগুলোর সর্বাত্মক প্রতিরোধ ক্রমেই সহিংস রূপ নিতে থাকে। ঢাকার রাজপথে রক্তাক্ত সংঘর্ষ হয়। (আওয়ামী লীগ দাবি করে ৬৭ জনের প্রাণের বিনিময়ে বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এসেছে)। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, মানুষের জীবনযাত্রা পর্যন্ত অচল হয়ে পড়ে। দুই নেত্রীর অনমনীয় মনোভাব ও প্রতিহিংসাপরায়ণতা দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচিত হতে থাকে। এ রকম অনিশ্চিত প্রেক্ষাপটে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয় এবং সেনাবাহিনীর সমর্থনে বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসে।

আমরা দেখি ২২ জানুয়ারির বাতিল হয়ে যাওয়া নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্ব, বিশেষ করে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান দুর্নীতিপরায়ণ, সন্ত্রাসী ও দুর্বৃত্তায়নের সঙ্গে যুক্ত সাবেক সব মন্ত্রী ও সাংসদকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। মনোনয়নপ্রাপ্তদের তালিকা থেকে এটা পরিস্কার হয়েছিল যে, বিএনপিতে তারেকের সমর্থকদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বিএনপির মনোনয়ন পেতে প্রার্থীদের বিপুল টাকা বায় করতে হয়েছিল। অন্যদিকে, বিএনপির নেতারা গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে দলের খরচের নামে কোটি কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নেয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন। বিদেশ থেকে টাকা পেয়েছেন। তাহলে এ প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক এই কোটি কোটি টাকা দলের কোন খাতে খরচ করা হতো? তবে কী শেষ পর্যন্ত টাকা দলের পরিবর্তে ব্যক্তির পকেটেই জমা পড়ছে?

অন্যদিকে আওয়ামী লীগও বিজয়ী হতে মরিয়া অবস্থান নিয়ে দলীয় ও জোটের মনোনয়নের ক্ষেত্রে অবিশ্বাস্য এক মনোনয়ন-বাণিজ্যে মেতে উঠেছিল। এতে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় শেখ সেলিম, শেখ হেলাল প্রমুখ এই বিরাট মনোনয়ন বাণিজ্যে যুক্ত হয়েছিলেন। এরশাদকে মহাজোটে পেতে আওয়ামী লীগ বিএনপির চেয়ে বেশি অর্থ দিতে সম্মত হয়েছিল। বিএনপির অগ্রিম দুই কোটির জায়গায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাঁকে সাড়ে তিন কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল। বিএনপির প্রস্তাবিত ৫০-৬০ কোটি টাকার জায়গায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে গেলে এরশাদকে ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকা দেয়ার ব্যাপারে সমঝোতা হয়েছিল। আরও বিস্ময়কর ছিল, আওয়ামী লীগের আদর্শ ও লক্ষ্য সম্পূর্ণ বিসর্জন দিয়ে তালেবান আদর্শের সমর্থক খেলাফত মজলিসকে মহাজোটে নেওয়া হয়েছিল। তবে সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার ছিল, ফতোয়াকে আইনসিদ্ধ করতে ওই দলের সঙ্গে হলো আওয়ামী লীগের সমঝোতা চুক্তি। সেজন্য আওয়ামী লীগ বিপুল অর্থ পেয়েছিল, এ কথা আওয়ামী লীগের নেতারাই বলেছেন। চমকের এখানেই শেষ নয়, খেলাফত মজলিসের প্রার্থীদের জোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিতে তাদের কাছ থেকেও ভালো অংকের টাকা নেওয়া হয়েছিল। এ সবকিছু হয়েছিল শেখ হাসিনার জ্ঞাতসারে। এ সব কিছুর পর বড়ো দুই দলের নেতাদের সম্পর্কে দেশের মানুষের সন্দেহ ও অবিশ্বাস আরও গভীর হয়েছে।

দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পটভূমিতে দুই নেত্রীর ভবিষ্যৎ কী হবে, কী হওয়া উচিত- তা নিয়ে এখন আবার ব্যপক আলোচনা চলছে। তারা কী রাজনীতিতে থাকবেন, নাকি অবসর নেবেন? আমরা জানি, শেখ হাসিনা ২৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর পদে আছেন। এই সময়কালে তিনি একবার (১৯৯৬-২০০১) প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনবার সংসদে বিরোধী দলের নেতার ভূমিকা পালন করেছেন। অন্যদিকে বিএনপির নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ২৩ বছর ধরে দলীয় শীর্ষ পর্যায়ে আছেন। তিনি দুবার ‘৯৬ এর ফেব্রুয়ারির নির্বাচন হিসেবে নেওয়া হয়নি’ দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। একবার পাঁচ বছরের জন্য সংসদে বিরোধিদলীয় নেতা ছিলেন।

প্রশ্ন হলো, তারা আর কতদিন দলীয় প্রধানের দায়িত্বে থাকবেন? দেশবাসীর কাছে বড়ো প্রশ্ন হলো, এত সব কিছুর পর দেশে কী আগের ধারাতেই প্রতিহিংসার রাজনীতি চলতে থাকবে, নাকি গণতান্ত্রিক ও সহনশীল ধারার রাজনীতি ফিরে আসবে? দেশের শাসন প্রক্রিয়ায় কি সন্ত্রাস-দুর্নীতি-পরিবারতন্ত্রের অসীম প্রভাব চলতে থাকবে, না অপেক্ষাকৃত সৎ, যোগ্য ও উন্নয়নকামী নেতৃত্ব শাসন ক্ষমতায় আসবে? এবং প্রশ্ন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেমনি, তেমনি নাগরিক সমাজ ও সাধারণ মানুষের মধ্যেও এখন আলোচিত হচ্ছে।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দুই দলের কোনো কোনো নেতা এখনও বলছেন, সংস্কার বা পরিবর্তন যা-ই করা হোক না কেন, তা দুই নেত্রীকে রেখেই করতে হবে। যদিও তারা ভালো করেই জানেন, তা কিছুতেই সম্ভব নয়। সংকটকালের মধ্যেই ভাই মেজর (অব) সাঈদ এস্কান্দারকে বিএনপিসহ সভাপতি পদ দিয়ে বেগম জিয়া প্রমাণ করেছেন, সংস্কার বলতে তিনি পরিবারতন্ত্রই বোঝেন। শেখ হাসিনাও যা বলেছেন, তাতেও তাঁর কাছে তাঁর পরিবারই প্রধান। অনেকে এমনও বলছেন, প্রায় সিকি শতাব্দী ধরে দুই নেত্রী দলের ওপর তাদের যে নিরঙ্কুশ প্রভাব তৈরি করেছেন, যেভাবে অর্থ-প্রতিপত্তি ও সুযোগ সুবিধা পেয়ে আসছেন, তা থেকে তারা বেরিয়ে আসতে পারবেন না ।

১৯৯৬ সালের মার্চ মাসে এশিয়াউইক-এর ওই সম্পাদকীয়তে আরও লেখা হয়েছিল, ‘বেগম জিয়া ও শেখ হাসিনা উভয়েই এখন জনপ্রিয় এবং এটি স্পষ্ট নয় যে, কে তাদের স্থলাভিষিক্ত হবেন, তারা ক্ষমতা ছাড়বেন কি-না। কিন্তু একটি বিষয় নিশ্চিত, তা হলো- তারা যদি তাদের নিয়ন্ত্রণ না ছাড়েন, তাহলে জাতিকে একটি শুভ সূচনা উপহার দিতে অন্য কোনো নেতা তৈরি হবে না। নতুন নেতৃত্বের প্রশ্নটি হুমকির মুখে পড়বে। আর তা না হলে যখন তখন হরতাল সংঘর্ষের কারণে ভেঙ্গে পড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন হবে না। পাশাপাশি রাজনীতির প্রতি জনগণের আস্থা ফিরে আসবে না। এশিয়া উইকের ওই সম্পাদকীয় প্রকাশিত হওয়ার পর বিগত ১০ বছরে তো আমরা সেটাই দেখলাম। দেশে চলছে দুর্নীতি আর সন্ত্রাসের রাজত্ব। রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই, যা ধ্বংস করা হয়নি। একই সঙ্গে চলছে চরম প্রতিহিংসার রাজনীতি। এশিয়া উইকের ওই সম্পাদকীয়তে আরও লেখা হয়েছিল, ‘দায়িত্বশীল ও কার্যকর রাষ্ট্রযন্ত্রের জন্য প্রয়োজন সমঝোতা ও সহযোগিতা—যা বেগম খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনা সন্দেহাতীতভাবে দেখিয়ে দিয়েছেন যে, তা তাদের আয়ত্তে নেই। তারা এখন জাতির জন্য সবচেয়ে গুরত্ব যে কাজটি করতে পারেন তা হলো, রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানো এবং তারা যা করতে পারেননি, অন্যরা যাতে সেই লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করতে পারেন, তাঁর জন্য সুযোগ করে দেওয়া। আমরাও একইভাবে বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে বলতে পারি, গত ১৬ বছরে আপনাদের দুজনের ক্ষমতা ও প্রতিহিংসার রাজনীতির অনেক অত্যাচার দেশবাসী নীরবে সহ্য করতে বাধ্য হয়েছে। দয়া করে আপনারা রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান। নতুন নেতৃত্বকে সামনে আসার এবং দেশকে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ দিন। দুর্নীতি আর অপশাসন ছাড়া আপনাদের দেশকে দেয়ার মতো আর কিছু নেই।

ভবিষ্যতে নতুন নেতৃত্ব যদি আসে তবে তাদের সামনে থাকবে পাহাড় প্রমাণ চ্যালেঞ্জ । কারণ দুই নেত্রী প্রায় দেড় যুগ ধরে দেশজুড়ে যে দুর্নীতি আর দুর্বৃত্তায়নের আখড়া গড়ে তুলেছিলেন, তা দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। এখন সেখানে আর সুস্থ ধারা সূচনা করতে দুই নেত্রীকে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। যত তাড়াতাড়ি তারা এ রকম সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন, তা দেশের জন্য ততোই মঙ্গলজনক হবে।

তথ্য সূত্র : বাংলা ইনসাইডার


নিউজ টি শেয়ার করুন..

সর্বশেষ খবর

আরো খবর