আজ শুক্রবার। ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ। ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ। ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি। এখন সময় রাত ১২:৫৪

গ্রেপ্তার হচ্ছেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান?

মতিউর রহমান সব সময়ই গণতন্ত্র বিরোধী!
নিউজ টি শেয়ার করুন..

বুধবার (২৯ মার্চ) ভোর রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের এলাকা আমবাগান থেকে প্রথম আলোর সাভারে কর্মরতনিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে আটক করে সিআইডি। পরে তাকে আদালতে নেয়া হলে আদালত তার জামিনআবেদন নাকচ করে দিয়ে আদালতে পাঠান। গতকাল বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) বেলা সাড়ে তিনটার দিকে প্রিজন ভ্যানে করেতাকে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়। পরে শুক্রবার (৩১ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শামসুজ্জামানশামসকে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেসূত্র।

সূত্রটি বলছে, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে বুধবার (২৯ মার্চ) মধ্যরাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাহয়। রাজধানীর রমনা থানায় করা এই মামলায় প্রথম আলোর ওই প্রতিবেদক (সাভারে কর্মরত) শামসুজ্জামানকেও আসামিকরা হয়েছে। রমনা থানায় দায়ের করা ওই মামলায় প্রথম আলোর প্রতিনিধি শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ওইমামলার বাদী আইনজীবী আবদুল মালেক (মশিউর মালেক) যদিও এর আগে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় শামসুজ্জামানেরবিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা হয়েছিল, তথাপিও এই মামলায় শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তার দেখায়নি পুলিশ।

এদিকে রমনা থানায় দায়ের করা ডিজিটাল আইনের যে মামলায় সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে পুলিশ গ্রেপ্তার দেখিয়েছে, সেইমামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে সম্পাদক মতিউর রহমানকে।

মামলায় শামসুজ্জামান শামস অজ্ঞাতনামা আলোকচিত্রীসহ অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে। এর আগে গভীররাতে বাড়িতে অভিযান চালিয়ে প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে আটক পর, এবার কি তবে প্রথম আলোর সম্পাদককেগ্রেপ্তার করতে চলেছে পুলিশ? ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরহওয়ার পর পরই–  এই প্রশ্ন ছড়িয়েছে দেশে এবং আন্তর্জাাতিক মিডিয়া অঙ্গণে। কেউ কেউ বলছেন, যে কোনো সময় গ্রেপ্তার হতেপারেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। তবে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানএর গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়েআতঙ্কএখনও বিরাজমান।    

জানা গেছে, দৈনিক প্রথম আলোর ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের ভাইরাল হওয়া খবরের ছবি ছিলো, ফুল হাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধেরফটকে একটি শিশু। প্রথম আলোর ভাষ্যমতে, শিশুটির নাম জাকির হোসেন। শিশুটির উদ্ধৃতি ছিলো এমন– ‘পেটে ভাত নাজুটলে স্বাধীনতা দিয়া কি করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগবো কিন্তু পরে জানাগেছে, প্রথম আলোর এই প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ ভুয়া। শিশুটির নাম সবুজ এবং সে প্রথম শ্রেণির একজন ছাত্র। সে মোটেওদিনমজুর নয়। বরং সে পরিবারকে সাহায্য করার জন্য স্কুল শেষ করে বিকেল বেলায় মায়ের সাথে ফুল বিক্রি করে থাকে।    

তার পরেই সাভারের সাংবাদিক শামসকে গভীর রাতে বাড়ি থেকে আটক করে তুলে আনে সিআইডি। সময় তাঁর মোবাইলফোন, কম্পিউটারও জব্দ করা হয়। প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ বলেন, ‘ ঘটনায় অবশ্যই মিথ্যা বলে রাষ্ট্রের ভিত্তিমূলেআঘাত হানা হয়েছে, স্বাধীনতাকে কটাক্ষ করা হয়েছে। সাংবাদিক ভুল করলে শাস্তি পাবেন না?’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারবিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া ঢাকায় মহিলা যুব লীগের একটি বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বলেন, ‘কোনও কোনও মহল আগামীনির্বাচন, নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ভণ্ডুল করে দেশে একটি অনির্বাচিত, অসাংবিধানিকসরকার নিয়ে আসতে চায়। চক্রান্ত তারই অঙ্গ।আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘যে মামলা করা হয়েছে বা হচ্ছে, আমিআপনাদের বলতে চাই যে, যেটা হচ্ছে সেটা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নয়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে। আপনারা নির্ভীক সাংবাদিক আমিএটা স্বীকার করি। আপনারা যদি জনগণকে সত্য তথ্য প্রকাশ করেন তাহলে কোনো মতেই এই সরকার সাংবাদিকদের বাধা দেবেনা।

এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শামসুজ্জামানকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট(সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয়। তাঁকে কারাগারে আটক রাখার জন্য আদালতে আবেদন করে রমনা থানা পুলিশ।অন্যদিকে শামসুজ্জামানের পক্ষে তাঁর আইনজীবীরা জামিন চেয়ে আবেদন করেন। সে আবেদনের শুনানি শুরু হয় বেলা দুইটারদিকে। তখন হাজতখানা থেকে শামসুজ্জামানকে আদালতে আসামির কাঠগড়ায় তোলা হয়। শুনানি শেষে জামিন আবেদননাকচ করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ঢাকার সিএমএম আদালতের অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটতোফাজ্জল হোসেন। 

আবাররিপোর্টার উইদাউট বর্ডার্সসংগঠন বলেছে, সাংবাদিকদের ভয় দেখাতেই মতিউর রহমান শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধেডিজিটাল আইনে মামলা করা হয়েছে। বাংলাদেশের সম্পাদক পরিষদও অবিলম্বে মতিউর রহমান শামসের উপর থেকে মামলাতুলে নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।

এসব বিষয়ে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞ মহল বলছে, ‘রিপোর্টার উইদাউট বর্ডার্সছাড়াও দেশি এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বিভিন্ন ব্যক্তি সংস্থা ইতিমেধ্যেই প্রথম আলো সম্পাদকের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছে, যা প্রথম আলো পত্রিকাজুড়ে দিনভর অনলাইনে প্রকাশিতহয়েছে। কিন্তু প্রথম আলো সম্পাদকের বিরুদ্ধে এই মামলা ছাড়াও আরও একাধিক মামলা রয়েছে, সেসব মামলায় তাকে কখনওগ্রেপ্তার করা হয়নি। তবে এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় কি না, সেটিই এখন দেখার বিষয়। 

তথ্যসূত্র : বাংলা ইনসাইডার


নিউজ টি শেয়ার করুন..

সর্বশেষ খবর

আরো খবর