আজ সোমবার। ২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ। ১০ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ। ৯ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি। এখন সময় রাত ৯:২৩

হামার সংসারডা শ্যাষ করে দিচে।’

হামার সংসারডা শ্যাষ করে দিচে।’
নিউজ টি শেয়ার করুন..

জঙ্গির খাতায় নাম লিখাচে এডা যদি ঘুণাক্ষরেও টের পেতাম, ওকে ওই ভয়ংকর পথে যেতে দিতাম না। পায়েল খালি দ্যাশের ক্ষতি করেনি, হামার সংসারডা শ্যাষ করে দিচে।’

ক্ষোভ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন বগুড়ার খায়রুল ইসলাম পায়েল ওরফে বাঁধনের মা পিয়ারা বেগম। খায়রুল ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাজধানী ঢাকার গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় জিম্মি উদ্ধার অভিযানে নিহত হন। জঙ্গি হামলার ওই ঘটনায় তাঁকে অন্যতম হামলাকারী বলে শনাক্ত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় জড়িত হিসেবে শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বলের নামও রয়েছে। কমান্ডো অভিযানে তিনি নিহত হন। শফিকুলের বাড়িও বগুড়ায়। ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামানের ছেলে শফিকুল।

বদিউজ্জামান বলেন, তাঁর ছেলে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়েছেন, এটা তিনি ঘুণাক্ষরেও টের পাননি।

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার চুপিনগর ইউনিয়নের বৃ-কুষ্টিয়া গ্রামের দিনমজুর আবুল হোসেনের স্ত্রী পিয়ারা বেগমের সঙ্গে কথা হয়। ছেলের অপরাধের বিষয়টি তাঁদের কষ্ট দেয় বলে জানান খায়রুলের মা পিয়ারা বেগম। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘পাড়া-প্রতিবেশী সগলি কয়, তুই জঙ্গির মা। তোরা জঙ্গি পরিবার। জঙ্গি অভিযানে পায়েল মারা যাওয়ার পর থ্যাকেই বেটির (খায়রুলের বড় বোন হোসনে আরা) সংসারত অশান্তি নামে আসিচে। স্বামী ওক নিয়ে সংসার করবে না বলে।’

খায়রুলের মা বলেন, ‘জঙ্গির খাতায় নাম লিখাচে, এডা যদি ঘুণাক্ষরেও টের পেতাম, ওকে ওই ভয়ংকর পথে যেতে দিতাম না। বাড়িতে চলাফেরায় একটু-আধটু সন্দেহ হইচিল। নামাজ পড়ে দোয়া করে না। চাচাতো ভাইয়ের বউদের সামনা-সামনি হয় না, চাচির সঙ্গে কথা বলে না। কিন্তু তকন বুঝবার পারিনি, জঙ্গির খাতাত নাম লেখাচে। বিনা অপরাধে বিদেশি মেহমানদের হামার বেটা হত্যা করিচে। দ্যাশের তো ক্ষতি করচেই, ওর কারণে বোনের সংসারডা ভাঙে যাচ্চে। দুকনা ভাতের জন্যি হামাক অন্যের বাড়িত কাম করে খাওয়া লাগিচ্চে।’

খায়রুলের বাবা আবুল হোসেন জানান, তিনি পেশায় দিনমজুর। ছেলে খায়রুল বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার বিহিগ্রাম আহছানিয়া দারুল উলুম সেন্ট্রাল ফাজিল মাদ্রাসায় পড়তেন। একই মাদ্রাসা থেকে আলিম পাসের পর সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষার কোচিং করার জন্য খায়রুল ঢাকায় যান। গুলশান হামলার মাস ছয়েক আগে খায়রুল নিখোঁজ হন। ছেলের নিখোঁজের বিষয়টি জানিয়ে খায়রুলের মা শাজাহানপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন।

‘ছেলের অপকর্মে মাথা নিচু হয়ে থাকে’
ছেলের অপকর্মের কারণে অন্যের সামনে মাথা নিচু করে থাকতে হয় বলে জানালেন শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বলের বাবা বদিউজ্জামান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ছেলে জঙ্গি হিসেবে নিহত হওয়ার পর থেকে এলাকায় মুখ দেখাতে পারি না। ছেলের অপকর্মের জন্য মানুষের কাছে মাথা নিচু করে থাকতে হয়।’

বদিউজ্জামান জানান, ছেলে জঙ্গি সংগঠনে জড়িয়েছেন, তা টের পাননি।

বদিউজ্জামান বলেন, ‘উজ্জ্বল জানিয়েছিল, আশুলিয়ায় একটি বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছে। বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজে পড়াশোনা করেছে। ওকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল আমার। পড়াশোনা শেষ করে সংসারের হাল ধরবে। কিন্তু সেই ছেলে জঙ্গির খাতায় নাম লেখাবে, এটা ভাবতেও পারিনি। এখনো বছর ঘুরে টেলিভিশনের পর্দায় ছেলের ছবি ভেসে ওঠে। কাগজের পাতায় ছবি ছাপা হয়। খুব লজ্জা লাগে।’

উজ্জ্বলের চাচা ও ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আফজাল হোসেন বলেন, ‘উজ্জ্বল জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত হওয়ার পর থেকেই মানুষকে মুখ দেখাতে পারি না। উজ্জ্বল জঙ্গির খাতায় নাম লিখিয়ে নিজেই শুধু শেষ হয়নি, গোটা পরিবারকে শেষ করে দিয়েছে। কোনো পরিবারেই যেন এমন ছেলের জন্ম না হয়।’

দ্যা টাইমসঅফবিডি.কম/০১/০৭/১৮

নিউজ টি শেয়ার করুন..

সর্বশেষ খবর

আরো খবর