আজ সোমবার। ২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ। ১০ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ। ৯ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি। এখন সময় রাত ১০:১৪

সেদিন আমার পরনে ছিলনা হলুদ পাঞ্জাবী কিংবা কদমগুচ্ছ : শফিক আহমেদ ভূইয়া।

সেদিন আমার পরনে ছিলনা হলুদ পাঞ্জাবী কিংবা কদমগুচ্ছ : শফিক আহমেদ ভূইয়া।
নিউজ টি শেয়ার করুন..

জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে তার যে জানাজাটি হয়েছিলো সেখানে দাঁড়াবার সুযোগ হয়েছিলো আমার। ওই সময়ে অবস্থা খুব খারাপ যাচ্ছিলো।  আমার বাসা থেকে জাতীয় ইদগাহ ময়দানের দুরত্ব প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটারের মত হলেও আমি পুরোটা রাস্তা পায়ে হেটে গিয়েছিলাম।খুব রোদ ছিল সেদিন।তাপমাত্রা টিক মনে নেই ,তবে ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস এর উপরে হবে।

প্রথমে গিয়েছিলাম শহীদ মিনারে। অনেক সেলিব্রেটি মুখও দেখেছি সেদিন। দেশের অর্থমন্ত্রী পর্যন্ত এসে উপস্থিত ছিলেন সেখানে । গাড়ির  দরজা খুলে বেরিয়েই হন্তদন্ত হয়ে ভেতরে ছুটলেন। আমি তখন লাইনে দাঁড়ানো। প্রায় সবার হাতে কদম ফুল। আমার হাতে ছিল না কিছু তার কফিনে রেখে আসার মত।আমার শরীর তখন বিষে জ্ড় জড় হয়ে কাপছিল।প্রচন্ড মায়াকান্না হচ্ছিল ভিতরে ,কিন্তু কাঁদতে পারিনি।তাই কষ্টটা বহন করাও আমার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছিল। প্রিয় স্যারকে ৪র্থ বার দেখব নিতর দেহ অবস্থায় ।প্রথম যেদিন স্যার কে দেখেছিলাম তখন হলুদ পাঞ্জাবি পড়া ছিল।কি করব বুঝতে পারছিলাম না।আর মনে মনে স্যারের হিমুর রুপালী রাত্রির ১৮ নাম্বার পেইজটা চোখে সামনে চলে আসছে,

”যে বাড়িতে মানুষ মারা যায় সে বাড়িতে মৃত্যুর আট থেকে নয় ঘন্টা পর একটা শান্তি শন্তি ভাব চলে আসে।আত্মীয় স্বজনরা কান্নাকাটি করে চোখের পানির স্টক ফুরিয়ে ফেলে।চেষ্টা করেও তখন কান্না আসে না যার ,তখন বোঝা যায় কষ্ট কি জিনিস।যাই হোক”

ভেতরে যখন ঢুকার সুযোগ হল, তখন নুহাশকে দেখলাম হলুদ পাঞ্জাবী পড়ে তার বাবার কফিনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে। বোঝা যাচ্ছে খুব কান্না করা হয়েছে কিছুক্ষণ আগে। এখন কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কান্না করার পরের স্বাভাবিক চেহারাটি সবসময়ের স্বাভাবিক চেহারার মত নয়। এই চেহারায় এক রকম অদ্ভূত অসহায়ত্বের ছাপ থাকে।নুহাশকেও তেমনটি দেখাচ্ছে। তার দাদীও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি ,কিছুক্ষন পরপর গোঙানোর মত শব্দ করে তিনি ছেলের লাশের কফিন জড়িয়ে ধরছিলেন… সাথে ছিল অন্যান্যরাও..

এগুলো আজ থেকে প্রায় ৬ বছর আগের কথা।হঠাৎ করেই দেখলাম বাংলাদেশে যে কয়টি চ্যানেল আছে তার সবগুলোতে ব্রেকিং নিউজ চলছে। একদল অদ্ভূত পাগল ছেলেমেয়ে হঠাৎ করেই কাঁদতে কাঁদতে ছুটোছুটি শুরু করে দিলো। হুমায়ূন আহমেদ নেই… আর নেই হুমায়ূন আহমেদ..

রাতবিরাতে ঢাকার রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের হলুদ আলোয় হলুদ পাঞ্জাবী পড়ে ভবঘুরের মত ঘোরা হিমুরা ছুটে এলো।এসেছে রুপারাও, তবে সেদিন সবাই নীল শাড়ী পড়ে আসেনি। গলির চা দোকানের সিগারেট ফুঁকতে থাকা বাকের ভাইরা মটর সাইকেলে করে দলবল নিয়ে দৌড়ে এলো। ছুটে এলো মোনারাও। এক অদ্ভূত বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে সবাই তাকিয়ে দেখলো সে কাঠের বাক্সটিকে,যেখানটার ভেতর তাদের স্রষ্টা  শুইয়ে রাখা হয়েছে.. একসাথে কেঁদে উঠলো হিমু রুপা আর বাকের ভাইরা… তাদের স্রস্টা আর ফিরবেনা। আর কোনদিনই ফিরবেনা…

মিছির আলী, হিমু,রুপা, বাকের ভাই,মোনা, শুভ্র এরা সবাই হঠাত করেই বইয়ের পাতার ভেতর আটকে গেল। আর কখনোই এরা কখনো কথা বলবেনা। বাকের ভাইয়ের জন্য মোনা অপেক্ষা আর করবেনা। রুপা একা জানালায় দাঁড়িয়ে থাকবেনা আর.. কারন হিমু কোনদিন ফিরবেনা..

সবাই একটি জায়গায় এসে আটকে গিয়েছে.. কেউ কথা বলবেনা আর.. পাথরের মূর্তির মত দাঁড়িয়ে থাকবে.. কেউ আর কথা বলাবেনা তাদের দিয়ে…

এখনো একদল পাগল ছেলে হলুদ পাঞ্জাবী পড়ে রাতের ল্যাম্পপোস্টের হলদে আলোয় হাটে। একদল মেয়ে রাতে নীল শাড়ী পড়ে হয়তো এখনো ছাদে গিয়ে জোৎস্নাস্নানে মগ্ন হয়ে যায়।

এসব সম্ভব কখনোই হতনা যদি হুমায়ূন আহমেদ নামের এই লোকটি পৃথিবীতে না আসতেন.. আজকের দিনে তিনি পৃথিবীতে আসেননি। পৃথিবী ছেড়ে গিয়েছিলেন। মিছির আলী, হিমু,রুপা, বাকের ভাই,মোনা, শুভ্র সবাইকে একা করে দিয়ে ছেড়ে গিয়েছিলেন…

অনেক দোয়া তার জন্যে… মিসির আলী, হিমু,রুপা আর বাকের ভাইদের পক্ষ থেকে দোয়া… ভালো থাকুক প্রিয় স্যার । আমার আবেগের সবচেয়ে বড় জায়গাটা জুরে আপনি ছিলেন ,থাকবেন।

লেখক,বার্তা সম্পাদক ,দ্যা টাইমসঅফবিডি.কম


নিউজ টি শেয়ার করুন..

সর্বশেষ খবর

আরো খবর