আইন করে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি নিষিদ্ধ করা হলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা থেমে নেই। তবে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বর্তমান সরকার বেশ তৎপর হয়ে উঠেছে। জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে ও নিতে যাচ্ছে সরকার।
দীর্ঘ বঞ্চনা আর অত্যাচারের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে দেশমাতৃকার সন্তানেরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরে। দীর্ঘ নয় মাস আপ্রাণ যুদ্ধের পর ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত ও ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি একটি দেশ। আর এই দেশ সৃষ্টিতে যিনি প্রধান ভূমিকায় ছিলেন তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি একটি দেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে নতুন দেশ সৃষ্টিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দেশ স্বাধীনের পেছনে মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কথা চিন্তা করে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্বার্থবাজ কিংবা দেশবিরোধিরা যাতে কটূক্তি না করতে পারে এজন্য সরকার আইন করেছে।
ডিজিটাল মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি এবং বিকৃত তথ্য দিলে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। চলতি বছর পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ তে এই অপরাধে ১৪ বছরের কারাদণ্ড এবং এক কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
এই আইন করার পরও মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু নিয়ে কটূক্তি থেমে নেই। কেন এমনটা হচ্ছে এ বিষয়ে সাইবার ক্রাইম বিষয়ক বিশ্লেষক তানভীর জোহা বলেন, সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম একটি খোলা জায়গা। এখানে পোস্টের বিষয়ে ফোনো ফিল্টারিংয়ের ব্যবস্থা নেই। তারপরেও আমরা নিয়মিত নজর রাখছি সামাজিক মাধ্যম ফেসুকের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে। এর মধ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে বেশ কিছু মামলা করা হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। পুলিশ ছাড়াও বিভিন্ন ব্যক্তিরাও এ মামলা করেছেন।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত সাইবার ক্রাইম ইউনিটে ডিজিটাল আইনে ৫ হাজারের মতো জিডি হয়েছে, মামলা হয়েছে ১ হাজারের মতো।পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট কম জনবল নিয়েই এই মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কটূক্তিকারীদের বিরুদ্ধে করা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা করছে।
কটূক্তি বন্ধ না হওয়াসহ ফেসবুক ও ইউটিউবে গুজব ছড়ানোর কারণে সরকার এর বিরুদ্ধে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে গুজব, অপপ্রচার, বিকৃত ছবি ও ভিডিও প্রচার রোধে কনটেন্ট বা ইনফরমেশন ফিল্টারিংয়ের (পোস্ট, স্ট্যাটাস সরিয়ে বা মুছে ফেলা) উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
এ বিষয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, এটা আসলে ২০১৩ সালের একটি প্রকল্প। দীর্ঘদিন পরে এই প্রকল্পের কাজে গতি এসেছে। ৩-৪ মাসের মধ্যে এটা চালু করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ফেসবুকসহ অন্য কোনো মাধ্যমে গুজব বা অপপ্রচার যেন না ছড়ায়। সেজন্য কনটেন্ট ফিল্টারিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য হলো গুজব ও অপপ্রচার যেন দেশের মধ্যে কোথাও দেখা না যায়।
সামাজিক মাধ্যমে বিকৃত তথ্য ও ছবি এবং ভূয়া ভিডিও বিষয়ে মঙ্গলবার (১৪ আগস্ট) সচিবালয়ে তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম সাংবাদিকদের বলেছেন, ভবিষ্যতে আমাদের একটি পরিকল্পনা আছে। তথ্য মন্ত্রণালয়ে আমরা ছোট্ট একটি ইউনিট করতে চাচ্ছি। সেখানে সোশ্যাল মিডিয়ার কন্টেন্ট বিশ্লেষণ করবো। যেন কোনো রকম গুজব, নেতিবাচক প্রচারণা, নারীদের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য, নারীর সম্মানহানিকর বক্তব্য, হেইট স্পিচ- এই কন্টেন্টগুলো যাতে যাচাই করে বিটিআরসিকে (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) জানিয়ে দিতে পারি যে, এই কন্টেন্টগুলো সত্য নয়, ভিত্তিহীন কিংবা মানহানিকর, নারীর জন্য অবমামনাকর।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মাহবুবুল হক হানিফ বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু নিয়ে যারা সামাজিক মাধ্যমে কটূক্তি করছে তাদের বিষয়ে আমরা খেয়াল রাখছি। কটূক্তিকারীদের ছাড় দেয়া হবে না। আইন অনুসারে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে নিরাপদ সাইবার চাই নামের একটি সংগঠনের আহবায়ক এসএম কামরুজ্জামান সাগর বলেন, ফেসবুকে কেউ কেউ মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু নিয়ে কটূক্তি করছে। এই দুই বিষয় ও ব্যক্তি নিয়ে যারা কটূক্তি করে তারা বাংলাদেশকে স্বীকার করে না। এরা দেশদ্রোহী। যুদ্ধাপরাধীদের যেমন সর্বোচ্চ শাস্তি হচ্ছে তেমনি তাদেরও এমন নজিববিহীন শাস্তি হওয়া দরকার।