আজ সোমবার। ২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ। ১০ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ। ৯ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি। এখন সময় রাত ১০:০৩

লালমনিরহাট সদর আসনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী সংকটে নিরুত্তাপ,নেতা কর্মীরা হতাশ।

লালমনিরহাট সদর আসনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী সংকটে নিরুত্তাপ,নেতা কর্মীরা হতাশ।
নিউজ টি শেয়ার করুন..

মিজান জেলা প্রতিনিধিঃ দশম জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী অক্টোবরে,নির্বাচন কমিশন আগামী দু মাস পরে অক্টোবর২০১৮ তে , একাদশ তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষনা করবেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে, এম, নুরুল হুদা সংবাদ সম্মেলনে সে ইঙ্গিত দিয়েছেন।লালমনিরহাট সদর আসন ঘিরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে চলছে প্রার্থী সংকট,আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে দলটির নেতা কর্মীদের মাঝে নেই কোন নির্বাচনী উত্তাপ।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তৃায় ও বিবৃতিতে ইতিমধ্যে নির্বাচনী প্রচারনা শুরু করেছেন।সংসদের তিনশত আসন ঘিরে আওয়ামীলীগ সম্ভাব্য প্রার্থী যাচাই বাছাই শুরু করেছে,ইতিমধ্যে ক্লিন ইমেজের ১৩৫জন প্রার্থীকে নিজ নির্বাচনী এলাকায় জনসংযোগ ও নির্বাচনী প্রস্তূতি নিতে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে।নির্বাচন কে ঘিরে বিভাগ, জেলা, উপজেলা,ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা কর্মীদের নিয়ে বিশেষ বর্ধিত সভা কয়েক দফায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গনভবনে ইতিমধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে।বিশেষ বর্ধিত সভায় নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্যে করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,যেন তেন নির্বাচনের দায়ভার সরকার এবং আওয়ামীলীগ নিবে না তাই নির্বাচন ঘিরে নেতা কর্মীদের জনগনের পাশে যাওয়ার পাশাপাশি সরকারের উন্নয়ন প্রচার করার কথা বলেছেন।দশম সংসদ নির্বাচনে বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়ে যে সকল সাংসদ জনগনের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছেন,তৃণমূল নেতা কর্মীদের অবমূল্যায়ন করেছেন ,ইমেজ সংকটে পড়েছেন এমন ৮০ জন সংসদ সদস্য এবার দলীয় মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন দলের সিনিয়র নেতারা।গনভবনের বর্ধিত সভায় দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা তার বক্তৃতায় নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন আমরা বন্ধু হারাতে চাই না, তাই মহাজোট থাকছে প্রয়োজনে বন্ধু বাড়ানো হতে পারে।

আগামী নির্বাচনে মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টি ৭০আসন এবং জোটের অন্য শরিকরা মিলে ৩০আসন দাবী করেছে।তাই বৃহত্তর জোট গঠনে একশত আসন জোট শরিকদের ছেড়ে দিতে হতে পারে ক্ষমতাসীন আওয়ামিলীগকে।সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের অনেক যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব হবে না,মনোনয়ন বঞ্চিত হবার সম্ভবনা থাকা সত্বেও এক একটি আসন ঘিরে রয়েছে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থী।অন্যদিকে লালমনিরহাট সদর আসনে রয়েছে বিএনপির শক্তিশালী হেভিওয়েট প্রার্থী আসাদুল হাবিব দুলু।আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহন করবেনা দলের নেতা কর্মীরা রাজনৈতিক বক্তৃতায় যাই বলুক না কেন, সদর আসনের বিএনপির প্রার্থী আগামী নির্বাচন কে কেন্দ্র করে বিএনপি সহ অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন শেষ করে ভোটের প্রশ্তুতি নিচ্ছেন। প্রতিটি ভোট কেন্দ্র লক্ষ্য করে কমিটি গঠন করে সংগঠন কে ভোটের জন্য পুরোপুরি প্রশ্তুতি করে রেখেছেন।

অপরদিকে পরপর দুবার ধারাবাহিক ভাবে সরকারে থাকা আওয়ামিলীগ আগামী নির্বাচন ঘিরে লালমনিরহাট সদর আসনে নেই দৃশ্যমান কর্মকান্ড, নেই প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ,দলীয় কর্মকান্ড।এই আসন থেকে দলীয় প্রতীক নিয়ে কে নির্বাচন করবেন সেই সম্ভাব্য প্রার্থী সম্পর্কে অবগত নন আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীরা।

২০০১ সালের নির্বাচনে সাবেক আওয়ামি লীগের সভাপতি প্রয়াত আলহাজ্ব আবুল হোসেন কে পাশ কাটিয়ে প্রথমবারের মত মনোনয়ন দেওয়া হয় জাতীয় চার নেতার জামাতা ইঞ্জিনিয়ার আবু সাইদ দুলাল কে।নির্বাচনে বিজয়ী হন চারদলীয় প্রার্থী আসাদুল হাবিব দুলু।২০০৫সালে জেলা সম্মলনের মাধ্যমে দলের নেতৃত্বে আমূল পরিবর্তন আসে, লাইম লাইটে আসেন তরুন জননেতা অ্যাডঃ মতিয়ার রহমান ।২০০৮ সালের নির্বাচনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন জেলা আওয়ামি লীগের সাধারন সম্পাদক অ্যাডঃ মতিয়ার রহমান ও থানা আওয়ামি লীগের আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার আবু সাইদ দুলাল।আওয়ামিলীগ নির্বাচনে মহাজোট গঠন করলে সদর আসনে মনোনয়ন পান জাতীয় পার্টির জিএম কাদের।সরকার গঠন করে মহাজোট, জিএম কাদের মন্ত্রীপরিষদের কেবিনেট সদস্য হিসেবে প্রথমে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রনালয়ে এবং পরে বানিজ্য মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেন।পূর্ন্য মন্ত্রী থেকেও এলাকার দৃশ্যমান উন্নয়ন সম্ভব হয়নি তার দ্বারা ।এছাড়া জোট শরিক হিসেবে যেসব নেতা কর্মী ভোট বাক্স রক্ষা করেছিলেন সেসব নেতা কর্মীকে মূল্যায়ন না করায় মুখ ফিরিয়ে নেয় তার প্রতি।

২০১৪ সালের নির্বাচনে সদর আসন থেকে দ্বিতীয় বার মনোনয়ন পান ইঞ্জিনিয়ার আবু সাইদ দুলাল।উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পরাজয়কে কেন্দ্র করে, সদর আসনে নেতা কর্মীদের মাঝে বিভেদ তৈরী হয়,তার প্রকাশ্য রূপ লাভ করে উপজেলা আওয়ামি লীগের সম্মেলনে দুই নেতার সমর্থিত প্রার্থী ঘিরে , এতে দলের নেতা কর্মীরা তৃণমূল পর্যায়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে এতে দলের ঐক্যে বড় ধরনের ফাটল ধরে।যা আজ অবধি নিরসন করে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি শুধু মাত্র উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন সম্পন্ন না হওয়ার কারনে।ফলে দলীয় নেতা কর্মীদের একটি অংশ সরকারে সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন।সদর আসনে দলীয় কর্মকান্ড রাজনৈতিক কর্মসূচী সার্বক্ষনিক উপস্থিত থাকার কারনে দলের সাধারন সম্পাদক অ্যাডঃ মতিয়ার রহমান নিয়ন্ত্রণ করেন। অন্যদিকে সরকারি সুযোগ সুবিধা সাংসদের মাধ্যমে বরাদ্দ হওয়ায় তা বিলি বন্টন ও উন্নয়ন কর্মকান্ডে নেতা কর্মীদের সম্পৃক্ত করা সদর আসনের সাংসদ নিয়ন্ত্রন করেন।সাংসদ আবু সাইদ দুলাল মারাত্মক কিডনি রোগে আক্রান্ত থাকায় তিনি বেশীর ভাগ সময় চিকিৎসার কারনে ঢাকায় অবস্থান করেন, এতে সংগঠন ও উন্নয়ন কর্মকান্ডে তার অনুপস্থিতি বিরাট শুন্যতা তৈরী করে।ফলে সাংসদ অনুসারীরা দলীয় পদপদবীতে তার অনুপস্থিতে বঞ্চিত হন, অপরদিকে সাধারন সম্পাদকের অনুসারীরা সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে সাংসদ কতৃক বঞ্চিত হন।অসুস্থ্য প্রতিযোগিতায় প্রত্যেক অঙ্গ সংগঠনে নেতা নির্বাচনে দুই নেতার কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করায়, অযোগ্য লোক দলের পদপদবী পান দুইনেতার কাছের লোক হিসেবে,এতে সংগঠনে ত্যাগী নেতা কর্মীরা মূল্যায়ন বঞ্চিত হন।

অদৃশ্য দুই মেরুর কারনে সদর আসনে নির্বাচনমুখী কোন রূপ কর্মকান্ড নেই দীর্ঘদিন ধরে। সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটি না থাকায় ওয়ার্ড,ইউনিয়ন কমিটি দীর্ঘদিন ধরে অভিভাবকহীন চলছে।সদর আসনের এমপি হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক করা হয় সাংসদ দুলাল কে। দীর্ঘ দিন ধরে জটিল রোগে অসুস্থ্য থাকায় তার নির্বাচনী এলাকায় ছিলনা সাংসদ কে ঘিরে কোন কর্মকান্ড।এতে করে তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনে নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

দলের সাধারন সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে সার্বৎক্ষনিক দলীয় কর্মকান্ড ও রাজনৈতিক কর্মসূচীতে অ্যাডঃ মতিয়ার রহমান সরব রয়েছেন।,তৃণমূল পর্যায়ে নেতা কর্মীর একটি অংশ দলীয় সাংসদ কতৃক উপকার ভোগী এবং সাংসদ পন্থি।তাই দলের সাধারন সম্পাদক শুধু মাত্র সংগঠনের জাতীয় কর্মকান্ড ছাড়া নির্বাচনী তৎপরতায় একটি অংশকে পাশে টানতে পারেন নি। ফলে গত পাঁচ বছরে তৃণমূল পর্যায়ে যথেষ্ট উন্নয়ন হলেও সে উন্নয়নকে ঘিরে ছিল না পরিকল্পনা, উন্নয়ন ঘিরে রাজনৈতিক উদ্যশ্য এবং নেতা কর্মীদের অংশগ্রহন।দুই নেতার অনুসারীরা এক পাশে সুবিধা পেলেও অন্যপাশে হয়েছেন বঞ্চিত।এমন হবার কথা না থাকলেও লালমনিরহাট সদর আসনে এই বৈষম্য দলের ঐক্যে বিরাট ফাটল ধরিয়েছে।নেতা কর্মীদের এক মঞ্চে ঐক্যবদ্ধ করে আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নৌকা মার্কার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে নেই কোন উদ্যোগ।সদর আসনের নেতা কর্মীরা জানেন না আগামী নির্বাচনে কে পাচ্ছেন দলীয় মনোনয়ন,অথচ দু মাস বাদেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
বর্তমান সাংসদ অসুস্থতায় আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে শতভাগ আশাবাদী নন,অন্যদিকে দলের সাধারন সম্পাদক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়ায় প্রার্থী হতে জোড়ালো তৎপরতা নেই।দল মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করতে প্রস্তুত রয়েছেন উভয়েই। এর বাইরে দলের জোড়ালো প্রার্থী হিসেবে দলের ভিতরে ও বাইরে নির্বাচনমুখী তৎপরতা কোন প্রার্থীর লক্ষ্য করা যায়নি।

সদর আসন নির্বাচনে দুই প্রার্থীর জন্যই গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা আওয়ামি লীগের সম্মেলন আজও সম্পন্ন করা যায়নি দুই নেতার অনীহায়। পাশাপাশি জেলা যুবলীগের সম্মেলন বিগত ১৪বছর ,জাতীয় শ্রমিক লীগের সম্মেলন ১৭ বছর যাবত হচ্ছে না, ফলে নতুন নেতৃত্ব তৈরিতে চলছে বন্ধাত্ব্য।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন বর্তমান ও সাবেক সদস্য হতাশা নিয়ে বলেন, ক্ষমতায় দুই মেয়াদে থাকার পরেও আওয়ামীলীগে যোগ্য প্রার্থীর সংকট চলছে । বরাবরের মত সদর আসনে ক্লিন ইমেজের পরিচ্ছন্ন নেতার অভাব থাকায় সদর আসনটি জোট শরিক দের দিতে হয়। পাটগ্রাম -হাতীবান্ধা নিয়ে লালমনিরহাট -১আসনটি জোট শরিক জাতীয় পার্টি দাবী করলেও আওয়ামী লীগের নিজস্ব শক্তপ্রার্থী মোতাহার হোসেন ২০০১সাল থেকে আওয়ামী লীগ কে এই আসন উপহার দিয়ে আসছেন ।

ফলে লালমনিরহাট-১ আসন গত নির্বাচনে শরিকদের দেওয়া হয়নি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাবে না এমন ইঙ্গিত দলের নেতা কর্মীরা দিলেন। সদর আসনে দলীয় প্রার্থী শক্ত অবস্থানে থাকলে এই আসনটি আওয়ামিলীগ নিজের জন্য রাখতে সক্ষম হতো।দলের হাইকমান্ড লালমনিরহাট সদর আসনের চিত্র অবগত থাকায় আসনটি না হারিয়ে শরিক দের উপহার দিয়ে সরকার গঠনে সহায়ক করতে চান।
গত নির্বাচনে দলের নেতা কর্মীরা শরিকদলের অযোগ্য প্রার্থীর জন্য দলের নির্দেশনা মেনে ভোট প্রার্থনা করে বিজয়ী করে,কিন্তূ নির্বাচনের পরে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের সাথে জোট প্রার্থী জিএম কাদের সম্পর্ক না রাখায় এবং এলাকার উন্নয়নে উদাসীনতার জন্য নেতা কর্মীরা বিরক্ত।তাই নেতা কর্মীরা দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ জানাবেন দলীয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে, সম্ভব না হলে শরিক দলের জিএম কাদেরের পরিবর্তে নতুন মুখ অথবা এরশাদ কে এই আসন থেকে নির্বাচন করাতে।আগামী নির্বাচনে জিএম কাদের কে এই আসনে প্রার্থী করলে ভোটারদের মাঝে যে বিরূপ ধারনা রয়েছে তাতে মহাজোটের প্রার্থী বিজয়ে কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে তৃণমূলের নেতা কর্মীরা মনে করেন।একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট লালমনিরহাট সদর আসনে প্রার্থী সংকটে ভুগছে বলে সচেতন ভোটাররা মনে করেছেন।

দ্যা টাইমসঅফবিডি.কম/১৪/০৭/১৮


নিউজ টি শেয়ার করুন..

সর্বশেষ খবর

আরো খবর