আজ শনিবার। ২৩শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ। ৮ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ। ৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি। এখন সময় রাত ১০:৫৫

যানজট সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা সম্ভব।

যানজট সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা সম্ভব।
নিউজ টি শেয়ার করুন..

রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসনে সহায়ক ভূমিকা রাখছে ফ্লাইওভারগুলো। তবে সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে দীর্ঘ ফ্লাইওভার নির্মাণ ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সামগ্রিক উন্নয়ন হলে যানজট সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা সম্ভব। গতকাল শনিবার কালের কণ্ঠ’র উদ্যোগে ‘ঢাকা বাঁচাতে ফ্লাইওভারের গুরুত্ব’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এমন অভিমত দেন।

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের সম্মেলন কক্ষে এ গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। বৈঠকটি সঞ্চালন করেন কালের কণ্ঠ সম্পাদক, বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন। স্বাগত বক্তব্য দেন কালের কণ্ঠ’র নির্বাহী সম্পাদক, বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক মোস্তফা কামাল।Image result for যানজট সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা সম্ভব।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি এম এ মান্নান বলেন, ফ্লাইওভার নির্মাণের ফলে ঢাকার যানজট কিছুটা হলেও উপশম হয়েছে বলে অনুভূত হচ্ছে। তবে যানজটের বড় একটি কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি। ঢাকায় অন্যান্য জেলা থেকে লোকের আগমন কমাতে হবে। সরকারি দাপ্তরিক কাজ করতে তারা যেন ঢাকায় আসতে বাধ্য না হয় সে জন্য বিকেন্দ্রীকরণের ওপর জোর দিতে হবে।

অনুষ্ঠানে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. সারওয়ার জাহান বলেন, যানজটের বড় সমস্যা জনসংখ্যা বৃদ্ধি। রাস্তা বাড়ানো কোনো সমাধান নয়। প্রাইমারি রাস্তা খুবই কম। সেকেন্ডারি রাস্তা এবং এক্সেস রোড বেশি।

সড়ক পরিবহন বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সফিকুল ইসলাম বলেন, শহরটাকে বাড়ানো সম্ভব কি না সেটা চিন্তা করার সময় এসেছে। কারণ এত কম জায়গায় যে পরিমাণ মানুষ চলাচল করে সেখানে শুধু ফ্লাইওভারে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ কুদরতউল্লাহ্ বলেন, মানুষের চলাফেরাকে সহজ করতে হলে পরিবেশবান্ধব ফুটপাত তৈরি করতে হবে; যেখানে গাছের ছায়া, বসার ব্যবস্থা, টয়লেটের ব্যবস্থাসহ ডিজিটাল অনুষঙ্গ থাকতে হবে। তাহলেই মানুষ হাঁটতে উৎসাহিত হবে এবং গাড়ির ওপর চাপ কমবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. সিরাজুল ইসলাম সমন্বিত পরিকল্পনা এবং আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন।

মাইশা গ্রুপের কনসালট্যান্ট ও ডিটিসিবির সাবেক নির্বাহী পরিচালক ড. এস এম সালেহ উদ্দিন বলেন, বাস সার্ভিসকে উন্নত করতে হবে। কারণ এতে স্বল্প ব্যয়ে, কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছা সম্ভব। এ জন্য বাস সার্ভিস বৃদ্ধি করার কোনো বিকল্প নেই। এটাকে সবার আগে গুরুত্ব দিতে হবে। এখন বাস সার্ভিসে নানা ধরনের অরাজকতা চলছে। ভিন্ন কম্পানির পাশাপাশি একই কম্পানির বাসগুলোও নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতায় নামে, যেটা বড় ধরনের অরাজকতা।Image result for যানজট সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা সম্ভব।

ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ইন্টারসেকশনের বাস্তবতা উতরে যাওয়ার সুযোগ আছে ফ্লাইওভারের মাধ্যমে। এমনকি রেলের লেভেলক্রসিংয়ের জ্যামও ফ্লাইওভার দিয়ে পার করে নেওয়া সম্ভব। ঢাকায় দোতলা বাস বাড়ানো, উন্নত ট্রাফিক সিস্টেম প্রতিষ্ঠা করা এবং ই-টিকিট ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেন তিনি।

আবদুল মোনেম লিমিটেডের পরিচালক (নির্মাণ) আবিদ হাবিব বলেন, ‘সড়ক ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষগুলোর মধ্যে শৃঙ্খলা নেই। আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট থাকায় আমরা কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। নইলে ওই প্রকল্পগুলোও ভেস্তে যেত।’

অনুষ্ঠানে বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সহযোগী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ ঢাকার পরিবহনব্যবস্থার ওপর তথ্যচিত্র উপস্থাপন করে বলেন, যানজটের প্রধান কারণ মূলত ইন্টারসেকশন।

তমা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহা. আতাউর রহমান ভূইয়া বলেন, যানজটে কর্মঘণ্টা নষ্ট হওয়ায় অর্থনীতির ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এখনো দেশে মানুষ মামলায় ভয় পায়। ট্রাফিক পুলিশ সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে অপ্রয়োজনীয় অনেক যানজট দূর করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে তিনি ট্রাফিকব্যবস্থাকে উন্নত করতে সিসিটিভি ক্যামেরা বাড়ানোর প্রস্তাব দেন। একই সঙ্গে ট্যাক্সি ক্যাবের ব্যবহার বাড়াতে বিমানবন্দরে ট্যাক্সি প্রবেশের সুযোগ রাখার জন্য কর্তৃপক্ষের সুবিবেচনা আশা করেন।

ওরিয়ন গ্রুপের কম্পানি সচিব মো. ফেরদাউস জামান বলেন, ফ্লাইওভারকে আরো বেশি ফলপ্রসূ করতে জনগণের সচেতনতা বেশি জরুরি। এ ক্ষেত্রে ফ্লাইওভার নির্মাণ ও ব্যবহারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সড়ক ও যোগাযোগ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার, বিআরটিএ, রাজউক, ট্রাফিক পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণের পরামর্শ দেন তিনি।

ভিনাইল ওয়ার্ল্ড গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবেদ মনসুর বলেন, ‘আমরা নিজেদের সিএসআরের টাকা দিয়ে ঢাকা বনানী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার সড়কের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করছি। এটা করতে গিয়ে দেখেছি, কিছু ফ্লাইওভার সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না। এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণে শতভাগ গুরুত্ব দিতে হবে।’

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, হানিফ ফ্লাইওভার হওয়ার পর এই পথে যাতায়াতকারী যাত্রীদের নানা সুবিধা হচ্ছে।

ঢাকা সড়ক বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. সবুজ উদ্দিন খান বলেন, যানজট নিরসন করতে হলে প্রাইভেট কারে নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে। সেই সঙ্গে ভালো মানের বাস সার্ভিস দিতে হবে। ফুটপাতকে করতে হবে হাঁটার উপযোগী।

ওরিয়ন গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. শাহজাহান আলী পাটোয়ারী বলেন, ফ্লাইওভার নির্মাণের সময় অবশ্যই দেখতে হবে কতটা সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে; যেমন সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে হানিফ ফ্লাইওভারের মাধ্যমে। তবে ফ্লাইওভারে ওঠা এবং নামার জায়গায় যাতে কোনো গাড়ির জটলা না থাকে সে বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশ পদক্ষেপ নিলে তা আরো দ্রুত হবে।

কালের কণ্ঠ’র নির্বাহী সম্পাদক মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমরা প্রায়ই কিছু চলমান ও আলোচিত ইস্যু নিয়ে এমন গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে থাকি। এটা সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ব্যক্তিদের পক্ষে সিদ্ধান্ত নিতে ভূমিকা রাখে। একটা সময় আমাদের দেশের সড়ক ও পরিবহন ব্যবস্থাকে অনুসরণ করত কলকাতা। এখন আমরা এতটাই পিছিয়ে গেছি যে কলকাতাকে অনুসরণ করলেও আমরা পিছিয়ে থাকব। কারণ তাদের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা অনেক গুণ এগিয়েছে। সেখানে ফ্লাইওভার আছে, মেট্রো আছে, ট্রাম আছে। এর মধ্য দিয়েও তারা এত সুন্দর ব্যবস্থাপনায় কলকাতাকে নিয়ে গেছে যে এখন আমাদের তাদের অনুসরণ করতে হচ্ছে। ঢাকায় গাড়ি চলাচলে যে বিশৃঙ্খলা, সেটাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে ফ্লাইওভার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

বৈঠকের সঞ্চালক কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘ঢাকার রাস্তা থাকা উচিত ছিল কমপক্ষে ২৫ শতাংশ। আছে ৬ থেকে ৭ শতাংশ।

নিউজ টি শেয়ার করুন..

সর্বশেষ খবর

আরো খবর