দ্যাটাইমসঅফবিডি.কম: ঢাকা -সোমবার -০৬ আগস্ট ২০১৮ : ২২ শ্রাবণ ১৪২৫
অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কথিত ‘সোর্স’রা। বিশেষ করে রাজধানীর প্রতিটি থানা এলাকায়ই ওইসব সোর্সদের দৌরাত্ম্য দিনকে দিন চরমে গিয়ে পৌঁছাচ্ছে। পুলিশের সঙ্গে সম্পর্ককে ‘কাজে লাগিয়ে’ তারা চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসাসহ নানাপ্রকার অপরাধ করে চলেছে অনেক সোর্স। এমনকি এসব সোর্সের অধিকাংশের নামে হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজি, মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র ও সরেজমিনে অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানা গেছে।
নাম মো. শহীদ। ওরফে ফর্মা শহীদ। মানুষকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে মোটা অঙ্কের চাঁদা নেয়াকেই পেশা হিসেবে নিয়েছেন শহীদ। এলাকায় মাদক ব্যবসা করতে হলে সাপ্তাহিক টাকা দিতে হয় তাদেরকেও। বস্তিবাসী ও এলাকার হিজড়ারাও তার চাঁদাবাজির আওতাভুক্ত। অনুসন্ধানে জানা যায়, শহীদ নিজেও ইয়াবা ও ফেনসিডিল ব্যবসার সাথে জড়িত। মাদক ব্যবসায় নিজের অবস্থান টিকিয়ে রাখতে বহু নিরিহ মানুষকে ধরিয়ে মিথ্যা মামলায় জড়ানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া মহাখালীতে চুরির মোটরসাইকেল কেনা-বেচার মূল হোতা তিনি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বনানী থানার কথিত সোর্স শহীদকে ২০০৫ সালে বিস্ফোরক ও অস্ত্রসহ বনানী-২ এর হিন্দুপাড়ার বস্তি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে জামিনে বের হওয়ার পর থেকেই শহীদ পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করতে থাকেন। আগে তিনি গুলশান থানার সোর্স ও এসআই সোহেল রানার ড্রাইভার হিসেবে কাজ করতেন। বর্তমানে বনানী থানার এএসআই ওমর ফারুক ও এসআই আবু তাহের ভুঁইয়ার সোর্স হিসেবে কাজ করেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মহাখালী ওয়ারলেস গেইট টিএন্ডটি পূর্ব কলোনীর আবদুর রহমান মাসুম ওরফে মোলা মাসুমের মাদক স্পট, টিএন্ডটি স্কুল রোডে মহান স্টুডিও সংলগ্ন সেচ্ছাসেবক দল নেতা সায়েমের মাদক স্পট, এক নম্বর গোডাউন বস্তির ময়নার মার মাদক স্পট, ওয়ারলেস গেইট জামাই মালেকের মাদক স্পট ও বুলুর ড্রাইভার কাশেমের মাদক স্পট, মহাখালী পশু গবেষনা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন নাটা ইউসুফের মাদক স্পট, হাজাড়িবাড়ি দাদা ভবনের পেছনে আব্দুল আলীর ছেলে শরীফ ওরফে পাগলা শরীফের মাদক স্পট, সাততলা পুকুরপাড় মানিকের মাদকস্পটসহ ঢাকা উওর সিটি কর্পোরেশনের ১৯-২০নং ওয়ার্ডের বেশ কিছু মাদক স্পট এবং মাদক ব্যবসায়ীর থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করেন শহীদ। যারা চাঁদা দেয়না তাদেরকে পুলিশে ধরিয়ে দেন তিনি। তরুন প্রজন্ম ও যুব সমাজকে মরন ফাঁদ থেকে রক্ষা করতে এসব মাদক স্পটগুলো বন্ধ করা জরুরী বলে মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
গোডাউন বস্তির মোস্তফা কামাল অভিযোগ করেন, বনানী এলাকার সোর্স শহীদ তার ভাগিনা হৃদয়, ইয়াসিন ও উজ্জ্বল ১৯-২০ নম্বর ওয়ার্ডসহ বনানী এলাকায় চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক, নারী ব্যবসাসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়িত। শহীদ সব সময় অবৈধ অস্ত্র নিয়ে চলাচল করেন। কেউ এসব ব্যাপারে প্রতিবাদ করলে তাকে হেনস্তা করে। অনেক আগে শহীদ অবৈধ অস্ত্র নিয়ে র্যাবের কাছে গ্রেফতার হন। পরে জামিনে বের হওয়ার পর সে তার দল নিয়ে আবারো অপরাধ কর্মকাণ্ড করতে থাকেন। কামাল আরো বলেন, শহীদ ও তার দলের বিরুদ্ধে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় একাধিক মামলা আছে। শহীদের বিরুদ্ধে বনানী থানায় অভিযোগ করা হলেও তার বিরুদ্ধে নেয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা।
এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে জানা যায়, শহীদ পুলিশের ড্রাইভার ও সোর্স হওয়ার পর থেকে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, জুয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড বেড়েই চলেছে। তার বাসায় প্রতিরাতে জুয়া খেলা হয়। কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বললে গ্রেফতারের ভয় দেখায়। সে নাকি পুলিশ ছাড়া বাইরে চলাচল করেনা।
শহীদের বাড়ি বনানীর টিঅ্যান্ডটি মাঠের পাশে এক নম্বর গোডাউন বস্তিতে। সরেজমিন এসব বিষয়ে কথা বলতে শহীদের বাড়িতে গেলে তার দেখা পাওয়া যায়নি। ঘরে প্রবেশ মুখে সিসি ক্যামেরা নজরে পড়ল। ঘরের ভেতরে গিয়ে চোখে পড়ল টিভিতে সিসি ক্যামেরার মাদ্ধমে বাইরের চিত্র দেখা যাচ্ছে। বোঝা গেল ক্যামেরায় প্রতিবেদককে আসতে দেখে শহীদ পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে গেছেন।
জানা গেছে, ঢাকার সোর্সদের নিয়ে পত্র-পএিকায় যত নিউজ প্রকাশ হয়েছে সেগুলোয় শহীদের নাম বারবার উঠে আসলেও তার অপরাধ মূলক কর্মকান্ডে এর কোন প্রভাব পরেনি। তিনি বুক ফুলিয়ে অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে। তার কর্মকান্ড দিনদিন ভয়ংকর হচ্ছে যাতে লাগামটানা প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তার অপরাধ তদন্ত করে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা।